প্লাস্টিকের বোতলের ক্ষতিকর প্রভাবের কথা এখন সবারই জানা। এই বোতল কাজে লাগিয়েই দারুণ এক উদ্যোগ নিয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্যের শিক্ষার্থীরা। প্রথম বর্ষের ‘ডিজাইন ফাউন্ডেশন’ কোর্সের একটি প্রকল্পে অংশ নিয়ে বোতলের ছাউনি নির্মাণ করেছেন তাঁরা। শিক্ষার্থীদের এ দলটির নাম রূপসা। সদস্যরা হলেন তমাল মণ্ডল, আসিফুর রহমান, তাসনিম-ই-জান্নাত, হুমাইরা কাওসার চৌধুরী, সিনথিয়া রহমান, আরিয়ান আসাফ, ত্রিনা মণ্ডল, মুহসিনা তাসনিম, অর্ণব পাল ও রাফিদ ফয়সাল। দিকনির্দেশনায় ছিলেন স্থাপত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুমাইয়া রহমান, অন্তু দাস ও খণ্ডকালীন প্রভাষক আয়েশা আখতার।
গত ৯ মার্চ প্রকল্পটি বুঝে পান শিক্ষার্থীরা। এরপর এক দিন বিরতি দিয়ে শুরু হয় কাজ, যা ১৮ তারিখে শেষ হয়। পুরো কাজ শেষ করতে খরচ হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা। যা ছাত্রছাত্রীরা নিজেরাই বহন করেছেন। সার্বিক কাজ নিয়ে কথা হয় দলের অন্যতম সদস্য তমাল মণ্ডলের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘আসলেই ছাউনি তৈরি করা সম্ভব কি না, এ ব্যাপারে আমরা কেউ নিশ্চিত ছিলাম না। তাই বড় আকারে কাজটি করার আগে ছোট ছোট কয়েকটি মডেল তৈরি করেছিলাম। সেখানে ডিজাইন ও ভিত্তিস্তরবিহীন কাঠামো তৈরি করা নিয়ে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। একটা পর্যায়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিই, শেষ একটা চেষ্টা করে দেখব। যদি সঠিকভাবে সম্পন্ন না হয়, প্রকল্প থেকে নিজেদের সরিয়ে নেব। অবশেষে সবকিছু ঠিকভাবে শেষ হয়েছে।’
রূপসা দলের সদস্যরা জানালেন, তখন রোজার মাস চলছিল। শিক্ষকদের নির্দেশনা ছিল, মাত্র ১০ দিনে কাজ শেষ করতে হবে। দিন-রাত কাজ করে তাঁরা ছাউনিটা দাঁড় করিয়েছেন। কাজের ফাঁকেই খেয়েছেন সাহ্রি-ইফতার। খোলা জায়গায় মশার কামড় উপেক্ষা করেই কেউ কেউ খানিকটা ঘুমিয়ে নিয়েছেন। টানা তিন-চার রাত জেগে কাজ করতে হয়েছে তাঁদের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্লাস্টিক বোতলের ছাউনিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. সত্যেন্দ্রনাথ বসু একাডেমিক ভবন প্রাঙ্গণে অবস্থিত। দৈর্ঘ্য ১০ ফুট, প্রস্থ ৮ ফুট ও উচ্চতা ৭ ফুট। একসঙ্গে পাঁচ-ছয়জন এতে বসতে পারেন। পুরো ছাউনিটি বোতলে সুসজ্জিত। দেড়, দুই, পাঁচ ও আট লিটারের প্রায় ৬৫০টি বোতল ব্যবহার করা হয়েছে। যেহেতু রূপসা দলের শিক্ষার্থীদের হাত ধরে ছাউনিটি তৈরি হয়েছে, নির্মাণ শেষে স্থানটির নামকরণ হয়েছে রূপসা চত্বর।
তমাল মণ্ডল বলেন, ‘ছাউনিটি টেকসই করতে বেশ কিছু পন্থা আমরা অবলম্বন করেছি। যেমন আট ও পাঁচ লিটারের বোতলগুলো প্রথমে মাটির সঙ্গে সংযুক্ত করেছি। এরপর দুই লিটার এবং মাঝের অংশে দেড় লিটারের বোতল ব্যবহার করা হয়েছে; যেন চাপ দুপাশে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ে, কাঠামোটি স্থায়ী হয়। এ ছাড়া প্রতিটি বোতলকে কেব্লটাইয়ের মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয়েছে। বোতলের এই মজবুত বন্ধন কাঠামোকে টেকসই করে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে ছাউনিকে রক্ষা করে।’
বায়োমরফিক রিজেনারেশন ইনস্টলেশন শীর্ষক প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দ নম্বর ছিল ১০০। টিম রূপসা পেয়েছে ৯০। কিন্তু এত কিছু থাকতে প্লাস্টিক দিয়ে কেন ছাউনি নির্মাণ করা হলো? দলের আরেক সদস্য আসিফুর রহমান উত্তরটা দিলেন, ‘আমরা প্রকৃতিতে প্রতিনিয়ত প্লাস্টিক বাড়াচ্ছি। এতে প্রকৃতি তার ভারসাম্য হারাচ্ছে। আমাদের প্রকল্পে প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করে রিসাইকেল প্রক্রিয়াকে উৎসাহিত করা হয়েছে। কেউ যখন এখানে আসবে, বসবে, তখন রিসাইকেল প্রক্রিয়ার প্রতি উৎসাহী হবে। অন্যদিকে বোতলগুলোর মুখ বন্ধ থাকায় পানি জমে শেওলা হবে না। বোতলে পানি না জমায় মশার বংশবিস্তারেরও আশঙ্কা নেই।’