টানা ১০০ দিন ন্যূনতম ৫ কিলোমিটার করে দৌড়ানোর চ্যালেঞ্জকে বলা হচ্ছে ‘হানড্রেড ডেজ অব রানিং’। দৌড়ের দৈর্ঘ্য কম হলেও ধারাবাহিকতা ধরে রাখাটা চ্যালেঞ্জিংই বটে। এই চ্যালেঞ্জে সফল হয়েছেন বাপ্পী জাহিদ। পাশাপাশি দিনের পর দিন টানা দৌড়ানোর আরও দুটি চ্যালেঞ্জ পরপর সম্পন্ন করেছেন তিনি। তাঁকে নিয়ে লিখেছেন লতিফুল হক
বাপ্পী জাহিদের ফেসবুকে ঢুঁ মারলেই দেখা যায়, গ্রামের মেঠো পথে হাঁটাহাঁটি আর দৌড়ানোর ছবি। বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন গ্যাস ফিল্ডে পরামর্শক হিসেবে কাজ করা পেগাসাস ইন্টারন্যাশনাল (ইউকে) লিমিটেড নামে একটি ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন বাপ্পী, থাকেন গাজীপুরে। পেশাগত কাজের বাইরে কীভাবে দৌড়ের দুনিয়ায় ভিড়লেন সেই গল্পই শুনছিলাম, ‘শখের বসে কুমিল্লায় এক মিনি ম্যারাথনে অংশ নিয়েছিলাম। সময়ের মধ্যে দৌড় শেষ করে মনে হচ্ছিল হাঁটলে, দৌড়ালে শরীরের মধ্যে একটা অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করে। বাসায় ফিরে শুরু করলাম এমন আরও আয়োজনের খোঁজখবর।’
এই খোঁজখবর নিতে গিয়েই ফেসবুক গ্রুপ ‘বিডি রানার’-এর সঙ্গে জড়িয়ে গেলেন বাপ্পী জাহিদ। ইউটিউব, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে রানারদের প্রচুর ভিডিও দেখতেন। এভাবে ধীরে দেশি-বিদেশি রানাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ল। দেশে আয়োজন থাকলে অংশ নিচ্ছিলেন, সঙ্গে চলছিল অনুশীলন। ভারত থেকে আমন্ত্রণ এল একবার। দার্জিলিং হিল ম্যারাথন। পাহাড়ে প্রথমবার দৌড়াতে গিয়ে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেন জাহিদ।
জাহিদ বলছিলেন, ‘২০২২ ও ২০২৩ দুই বছরই দার্জিলিং হিল ম্যারাথনে অংশ নিই। প্রথমবার গিয়েই বুঝেছিলাম, পাহাড়ে দৌড়ানোর জন্য নিজেকে আরও তৈরি করতে হবে। কারণ, এসব জায়গা সমতলের চেয়ে একদমই আলাদা। ঠিক করলাম আরও তৈরি হয়ে ফিরব।’
২০২৩ ও ২০২৪ সালে দেশ-বিদেশের অনেক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন বাপ্পী জাহিদ। এর মধ্যে আছে ভারতের সান্দাকফুর বুদ্ধ ট্রেইল। গত বছরের মার্চে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে গিয়েই তাঁর অনেক ভারতীয় রানারের সঙ্গে পরিচয়। এটাই তাঁকে আরও এক ধাপ এগিয়ে দেয়। ‘যোগাযোগ বাড়ার ফলে প্রচুর ইভেন্টের খবর পেতাম, নিজের সময়ের সঙ্গে মিলে গেলে যোগ দিতাম। যেহেতু চাকরি করি, চাইলেই সব ইভেন্টে যেতে পারি না। সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে মিলিয়ে কয়েক দিন ছুটি নিয়ে ছুট দিই। এখনো এভাবেই অংশ নিচ্ছি,’ বলেন জাহিদ।
এভাবেই দেশে শমসেরনগর আলট্রা রান, ভারতে লাদাখ ম্যারাথন, টাটা কলকাতা ম্যারাথনসহ অনেক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন।
২০২৪ সালে ভারতের তিনটি চ্যালেঞ্জে অংশ নিয়ে সফলভাবে শেষ করতে পেয়েছেন জাহিদ। এগুলো হলো ‘হেল ৪৮০ চ্যালেঞ্জ’, ‘এইচডিওআর বা হানড্রেড ডেজ অব রানিং’, ‘জেবিজি-ইন্দুরা ১০১ চ্যালেঞ্জ’। প্রথমটি এক মাসভিত্তিক চ্যালেঞ্জ। এর মধ্যে শেষ করতে হয় ৪৮০ কিলোমিটার দৌড়। গত ১ জুলাই শুরু করে মাত্র ২৬ দিনেই এটা শেষ করেছেন জাহিদ।
‘হানড্রেড ডেজ অব রানিং’ ছিল টানা ১০০ দিন দৌড়ানোর একটি চ্যালেঞ্জ। নিরবচ্ছিন্নভাবে ১০০ দিনে ন্যূনতম ৫ কিলোমিটার করে দৌড়ানোর নিয়ম। ১০০ দিনে ৭৩৫ কিলোমিটার দৌড়ে এটা শেষ করেছিলেন জাহিদ। ‘জেবিজি-ইন্দুরা ১০১ চ্যালেঞ্জে’ হলো ১০১ দিন নিরবচ্ছিন্নভাবে ন্যূনতম তিন কিলোমিটার করে দৌড়াতে হবে। এই সময়ের মধ্যে ৯৩১ কিলোমিটার সম্পন্ন করেছিলেন তিনি। জাহিদের র্যাঙ্কিং ছিল ৩৬।
জাহিদ বলছিলেন, ‘শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রচণ্ড পরিশ্রম হয়েছে। ঝড়, বৃষ্টি যা–ই হোক, প্রতিদিনই বের হতে হয়েছে। ডায়েটও খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। শর্করাজাতীয় খাবার কমিয়ে প্রচুর প্রোটিন খেতে হয়েছে, তা ছাড়া দিনের পর দিন প্রেরণা ধরে রাখাও ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। তবে সব ঠিকঠাকভাবে শেষ করেছি। নিজের চ্যালেঞ্জে নিজেই জিতে গেছি, এটা সবচেয়ে ভালো লাগছে।’
আগামী মাসেই আবার দার্জিলিং হিল ম্যারাথনে অংশ নেবেন বাপ্পী জাহিদ। ২০২৫ সালে লাদাখ ম্যারাথনে অংশ নিয়ে অনেক দিনের স্বপ্ন পূরণ করতে চান। এর আগে লাদাখে রান করলেও ম্যারাথনে (৪২ কিলোমিটার) অংশ নেননি। ১৭ হাজার ফুট উচ্চতায় ম্যারাথনে অংশ নিয়ে আরও একটি চ্যালেঞ্জ পার করতে চান। তবে এখন প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া কমিয়ে বরং অনুশীলনে মনে দিতে চান জাহিদ। কারণটাও জানালেন, ‘দেশের বেশির ভাগ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি। এখন বড় বড় ইভেন্টে নাম লেখাতে চাই । তবে সেখানে ভালো করতে হলে অনুশীলনের বিকল্প নেই। আগামী বছর সেটা আরও নিবিড়ভাবে করতে চাই।’