আটলান্টিকে মাছ শিকার করেছি

উত্তাল সাগরে জেলেরা কীভাবে মাছ ধরেন?

নদী, খাল, বিলে জেলেদের নৌকায় মাছ ধরতে গিয়ে কথাটা খুব মনে হতো। মনে হতো, তাঁদের সঙ্গে থেকে যদি মাছ ধরা দেখতে পারতাম। কিন্তু সুযোগটা হয়ে ওঠেনি। সেই সুযোগ পেলাম সুদূর যুক্তরাষ্ট্রে বেড়াতে এসে।

বন্ধুপ্রতিম মিথুনের বাসা পেনসিলভানিয়ার লেভিটাউনে। ঢাকা থেকে গিয়ে তার বাসায় উঠেছি। মিথুনই সব ব্যবস্থা করে দিল। ওর বাসা থেকেই ভোরে রওনা হলাম মেরিল্যান্ড রাজ্যের ডিল আইল্যান্ডের উদ্দেশে। সঙ্গে মাছ ধরার সব সরঞ্জাম। ভোরের নরম আলোয় আই-৯৫ হাইওয়ে ধরে আমরা ৯ জন এগোতে থাকলাম।

এই বোট নিয়েই মাছ ধরতে গিয়েছিলাম

বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ ডিল আইল্যান্ডে পা ফেলি। দোকান থেকে বেশ কয়েকটা বরফের প্যাকেট কিনে কুলারে ভরি। তারপর মাছ ধরার অন্যান্য সরঞ্জামসহ ফিশিং বোটে উঠলাম। বিলাসবহুল ইয়টের মতো ব্যবস্থা না থাকলেও বোটটা বেশ ভালো। আটলান্টিকের নীল জলরাশির ওপর যেন একটা ঝকঝকে সাদা পেলিকান। ৬০০ ডলারের বিনিময়ে আটলান্টিক সাগরে ৬ ঘণ্টা মাছ ধরার সুযোগ পাব আমরা।

নির্ধারিত সময়েই জেটি থেকে বোট ছাড়ল। ছোটখাটো একটা জেটি, ঠিক যেন সিনেমায় দেখা কোনো প্রাইভেট আইল্যান্ডের জেটি। মাত্র ১০-১২টি বোট নোঙর করা। পরে জেনেছি, এখানে আরও নৌকা থাকে। শৌখিন মৎস্যশিকারিদের নিয়ে বাকি নৌকাগুলো সাগরে গেছে।

বরশি ফেলছেন শৌখিন মৎস্যশিকারিরা

কিছুক্ষণ পর মূল সাগরে গিয়ে পড়লাম। কোথায় ভালো মাছ পাওয়া যাবে, সেই ব্যাপারে বোটচালক বেশ দক্ষ, তার ওপর বোটে রয়েছে অত্যাধুনিক ফিশিং জিপিএস। ঘণ্টাখানেকের বেশি চলার পর সাগরের গভীরে নোঙর করল।
চালকের জিপিএস বলছে, এখানে মাছের ঝাঁক রয়েছে। চালকের কথামতো বড়শি ফেলতেই টপাটপ মাছ উঠতে লাগল। মাছ ধরা দেখে আমার তো মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়। বড়শি শুধু ফেলতে দেরি, মাছ ধরতে দেরি নেই! অনেক সময় একসঙ্গে দু–তিনটা করেও উঠছে। আমাদের একজনের বড়শিতে ছয়টা হুক ছিল, একবার তাতে তো পাঁচটা মাছ উঠল। সাগরে মাছ ধরতে চার করার বালাই নেই, হুইল বড়শিতে টোপ হিসেবে রেড ওয়ার্ম কিংবা ক্রাব ব্যবহার করছি আমরা। রেড ওয়ার্ম দেখতে আমাদের কেঁচোর মতো হলেও দেহের দুই পাশে শুঁয়াপোকার পায়ের মতো বর্ধিতাংশ রয়েছে। আমাদের দেশে মাটি খুঁড়লেই কেঁচো পাওয়া কিন্তু ওই দেশে রেড ওয়ার্ম সুপারশপে কিনতে পাওয়া যায়। ২৫ ডলারে ১২টা।

বড়শি ফেলতেই টপাটপ মাছ উঠতে লাগল

ঘণ্টাখানেক পর মাছের পরিমাণ কমে গেল। আমরা জায়গা বদল করলাম। দক্ষ চালক এদিক-সেদিক চালিয়ে মাছের ঝাঁকের অবস্থান নিশ্চিত হয়েই বোট দাঁড় করাল আবার। আমাদের বড়শিতে স্পট, ব্যাস, ক্রোকার, কিং ও পার্চ টাইপ মাছ ধরা পড়ছে। আমরা অবশ্য এসব মাছ ধরতেই গিয়েছি, বোটচালক তাই জায়গা বুঝে বোট থামাচ্ছে। এদিকটায় অনেক বড় মাছও পাওয়া যায়, তবে সেগুলো ধরার আলাদা প্রস্তুতি ও সরঞ্জাম লাগে। সাগরের সব সাইজের মাছ নেওয়ার নিয়ম নেই বিধায় ছোট আকারের মাছগুলো আমাদের ছেড়ে দিতে হচ্ছে। সাগরে প্যাট্রোল বোট আছে, নিয়ম না মেনে ধরা পড়লে বড় রকম জরিমানা হওয়ার আশঙ্কা প্রবল।

সাগরে মাছ ধরার আনন্দই আলাদা!

কড়া রোদে নানান ধরনের রসিকতার মধ্য দিয়ে আমাদের মাছ ধরা জমিয়ে চলছে। সময়ের দিকে কারোরই নজর নেই। নৌকাচালকের চিৎকারে মাছ ধরায় ছন্দপতন হলো। রেডিওতে নাকি ঝড়ের সতর্কসংকেত আসছে। ঘড়িতে ততক্ষণে বিকেল সাড়ে পাঁচটা। আকাশের এক কোণে কালো মেঘ জমেছে। ছয়টা বাজতেই বাতাসের জোর বেড়ে গেল। আমাদের বড়সড় কুলারটাও মাছে ভরে উঠেছে। নির্ধারিত সময়ও শেষের দিকে। ঝুঁকি না বাড়িয়ে বোট ঘুরিয়ে ফেরার পথ ধরলাম।