জেনে নিন দেশের জনপ্রিয় ১০ ক্যাম্পিং সাইটের খোঁজ

শীত তাঁবুবাসের আদর্শ সময়। তাঁবু বেঁধেছেদে প্রায়ই এ সময় নতুন কোনো গন্তব্যের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েন রোমাঞ্চপ্রিয় ভ্রমণপিপাসুরা। আপনিও বেরিয়ে পড়তে পারেন—একা কিংবা সদল। নিজের তাঁবুবাসের সরঞ্জাম না থাকলে খুঁজে নিতে পারেন ক্যাম্পিং সাইট। তবে ক্যাম্পিংয়ের আগে নিরাপত্তা, অবস্থান, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বিষয়টি বিবেচনায় নিন। হালের জনপ্রিয় ১০ ক্যাম্পিং সাইটের খোঁজ জানাচ্ছেন মনিরুল ইসলাম

মারায়ন তং, বান্দরবান
ছবি: শুভ্রনীল সাগরের সৌজন্যে

মারায়ন তং, বান্দরবান

মিরিঞ্জা রেঞ্জের পাহাড়টির নাম মারায়ন তং। প্রকৃতিপূজারিদের কাছে তাঁবুবাসের জন্য বান্দরবানের আলী কদমের এই পাহাড়চূড়া দারুণ জনপ্রিয়। চূড়ায় দাঁড়িয়ে যত দূর চোখ যায়, শুধু সবুজে মোড়া পাহাড়। সকালে মুগ্ধ করে সাদা ফিনফিনে মেঘে ঢেকে থাকা দূরের পাহাড়। এখান থেকে সূর্যোদয় দেখার অভিজ্ঞতা অনন্য। সূর্য উঠতেই সোনালি আলোয় ভেসে যায় পুরো উপত্যকা। বেলা বাড়ে, ক্ষণে ক্ষণে বদলায় পাহাড়ি প্রকৃতির রূপ।

চর কুকরি-মুকরির ঘন জঙ্গল আর শ্বাসমূলীয় বৃক্ষরাজি দেখে মনে হবে সুন্দরবনের গভীরে ঢুকে পড়েছেন

চর কুকরি-মুকরি, ভোলা

নামের সঙ্গে চর লেপটে গেলেও কুকরি-মুকরি আসলে একটি দ্বীপ। ভোলার চরফ্যাশনের এই দ্বীপ বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর মোহনায় জেগে আছে। চর কুকরি-মুকরির ঘন জঙ্গল আর শ্বাসমূলীয় বৃক্ষরাজি দেখে মনে হবে সুন্দরবনের গভীরে ঢুকে পড়েছেন। জঙ্গল আর জলরাশি সহজেই ভুলিয়ে দেয় শহুরে জীবনের জটিলতা। আর রাতের নিস্তব্ধতায় তারাভরা আকাশপানে চেয়ে কাটিয়ে দেওয়া যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

তাঁবুবাস

সোনাদিয়া দ্বীপ, কক্সবাজার

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ভ্রামণিকদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে। তবে যাঁরা জনারণ্য পছন্দ করেন না, তাঁদের জন্য আছে সোনাদিয়া সমুদ্রসৈকত। মহেশখালীর সোনাদিয়ায় সমুদ্রের গর্জন ছাড়া কিছু নেই। এখানকার সৈকতে তাঁবুতে থাকা রাতটি হতে পারে আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠ মুহূর্তের একটি। আর যদি রাতটি হয় চাঁদনি, তাহলে তো কথাই নেই! সকালে সূর্যোদয়ের সোনালি আলো গায়ে মেখে সৈকতে খালি পায়ে বেরিয়ে পড়তে পারেন। লাল কাঁকড়ার সঙ্গে লুকোচুরি খেলাটা বেশ জমে ওঠে এ সময়। আর ঝাউবনে হ্যামক টানিয়ে দোল খেতে খেতে কাটিয়ে দিতে পারবেন অখণ্ড অবসর।

তাঁবু নিয়ে হাজির হতে পারেন রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্যে

রেমা-কালেঙ্গা, হবিগঞ্জ

কোথায় যেন পড়েছিলাম, বন দেখতে হয় রাতে। রাতের গভীরতার সঙ্গে নাকি তার পরিবেশ ও সৌন্দর্য পরিবর্তিত হতে থাকে। আমি বলি, অরণ্যকে যদি হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে চান, তাঁবু নিয়ে হাজির হতে পারেন রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্যে। রাতে এখানে নিবিড় নৈঃশব্দ্য এসে ভর করে। জঙ্গলের ঝিঁঝিপোকার দল মহোৎসাহে ক্লান্তিহীন ডাকতে থাকে। তবে সেই শব্দ বনের পরিবেশের সঙ্গে অবলীলায় মিশে যায়। রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় অবস্থিত।

মনপুরার তিন দিকে মেঘনা আর এক দিকে বঙ্গোপসাগর

মনপুরা, ভোলা

সাইক্লিং ও ক্যাম্পিংয়ের আদর্শ জায়গা মনপুরা। ভোলার দ্বীপ উপজেলাটির তিন দিকে মেঘনা আর এক দিকে বঙ্গোপসাগর। মনপুরা যেতে খুব একটা বেগও পেতে হয় না। সদরঘাট থেকে বেতুয়া বা হাতিয়াগামী যেকোনো লঞ্চে উঠলেই সূর্য ওঠার আগে মনপুরায় পৌঁছে দেবে। এই দ্বীপের আকর্ষণীয় বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মাইলের পর মাইল সবুজ ম্যানগ্রোভ বন। বনের চারপাশ ঘিরে আছে নদী। নদীপাড়ে তাঁবু ফেলে কাটিয়ে দেওয়া যায় একটি আনন্দময় রাত। এ ছাড়া সাকুচিয়া সমুদ্রসৈকত, উপজেলা পরিষদের ৫ দিঘি, চৌধুরী ফিশারিজ প্রজেক্ট, মনপুরা ল্যান্ডিং স্টেশনও এখানকার বেশ জনপ্রিয় স্থান।

তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড়

কনকনে শীত উপভোগ করতে মহানন্দার পাড়ে তাঁবু নিয়ে হাজির হন পর্যটকেরা। অনুমতি নিয়ে কেউ কেউ আবার চা–বাগানে তাঁবু ফেলেন। কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ দর্শনের সুযোগ মেলে বলে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া ক্যাম্পারদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।

হাজারিখিল বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য

হাজারিখিল বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য, চট্টগ্রাম

হাজারিখিল বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যের অবস্থান চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, তবে সীতাকুণ্ড শহরে নেমেও সহজে যাওয়া যায়। অভয়ারণ্য হলেও জায়গাটায় জনসমাগম অনেক কম। শান্ত, নিরিবিলি, পরিচ্ছন্ন বনে যাঁরা ক্যাম্পিং করতে চান, তাঁদের জন্য সেরা জায়গা হতে পারে হাজারিখিল। ক্যাম্পিংয়ের জন্য যা যা প্রয়োজন, সবকিছু সেখানেই পাবেন।

ক্যাম্পিংয়ে খানাদানা

নিঝুম দ্বীপ, নোয়াখালী

বঙ্গোপসাগরের বুকে মেঘনা নদীর মোহনায় জেগে আছে নিঝুম দ্বীপ। হাতিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে আলাদা এই দ্বীপ সরকারঘোষিত জাতীয় উদ্যান। এই উদ্যানে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল চিত্রা হরিণ, যারা এখন পালে পালে চরে বেড়ায়। শীতের সময় আসে পরিযায়ী পাখির ঝাঁক। সৈকত বা জঙ্গলের কাছে তাঁবু ফেলতে পারেন। তাঁবুর ব্যবস্থা করে বন বিভাগও। আগে থেকে যোগাযোগ করে গেলে ভাড়ায় নেওয়া তাঁবুতে কাটিয়ে আসতে পারেন দুই রাত।

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর সোনার চর থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত—দুটোই দেখা যায়। হালে দ্বীপটি ক্যাম্পারদের কাছে জনপ্রিয় উঠছে

সোনার চর, পটুয়াখালী

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর সোনার চর। বুড়াগৌরাঙ্গ নদের মোহনায় বঙ্গোপসাগরের দ্বীপটি। এখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত—দুটোই দেখা যায়। হালে দ্বীপটি ক্যাম্পারদের কাছে জনপ্রিয় উঠছে। যাতায়াত কিছুটা দুর্গম হওয়ায় মানুষের আনাগোনা অনেকটাই কম। জেলেদের মাছ ধরা, সমুদ্রসৈকত ও ম্যানগ্রোভ বন আপনাকে মোহিত করে রাখবে। তবে মনে রাখবেন, এখানে শিয়ালের দৌরাত্ম্য বেশ, দল বেঁধে এরা মহিষকেও তাড়া করে। ২০১১ সালে সোনার চরকে বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য ঘোষণা হয়।

কাপ্তাইয়ের যেখানেই তাঁবু ফেলা হয়, সেটাই যেন হয়ে ওঠে মনের মতো ক্যাম্পিং সাইট

কাপ্তাই, রাঙামাটি

কর্ণফুলী নদীর তীর, লেকের পাড়, সুউচ্চ পাহাড়ের পাদদেশ—কাপ্তাইয়ের যেখানেই তাঁবু ফেলা হয়, সেটাই যেন হয়ে ওঠে মনের মতো ক্যাম্পিং সাইট। শীতের সকালে তাঁবুর ফাঁক গলে কুয়াশার চাদরে মোড়ানো লেকের সৌন্দর্য নিয়ে যায় স্বপ্নলোকে। অরণ্যের নির্জনতা এখানে নেই, নেই শব্দের অযাচিত বৈরিতা। তাই তো অনেক বাণিজ্যিক ক্যাম্পিং সাইটও গড়ে উঠেছে কাপ্তাইয়ে। তাঁবুযাপনের পাশাপাশি ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেন লেকের পানিতে, কায়াক নিয়ে বেড়াতে পারেন লেকের স্বচ্ছ জলে।