কাশ্মীরের বাগানে ফুটে আছে টিউলিপ
কাশ্মীরের বাগানে ফুটে আছে টিউলিপ

এশিয়ার সবচেয়ে বড় টিউলিপ বাগানে

ভূস্বর্গখ্যাত কাশ্মীর যাওয়ার ইচ্ছা অনেক দিনের। কিন্তু ঢাকা থেকে যেসব গ্রুপ ট্যুর প্যাকেজ পাওয়া যায়, সেগুলো ঠিক মনঃপুত হচ্ছিল না। কিছুদিন আগেই কাশ্মীর ঘুরে আসা আরেক সহকর্মী বুদ্ধি দিলেন, দুজনে চলে যাওয়ার জন্য। সেভাবেই পরিকল্পনা করলাম।

এশিয়ার সবচেয়ে বড় টিউলিপ ফুলের বাগান ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল টিউলিপ গার্ডেন। ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাঁটি করে দেখলাম, টিউলিপ দেখার সবচেয়ে ভালো সময় এপ্রিল। রমজান মাস হলেও এপ্রিলেই কাশ্মীর যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।

ঢাকা থেকে দিল্লি হয়ে শ্রীনগরের ফ্লাইট। এয়ারপোর্ট থেকে বের হওয়ার পথে চোখে পড়ল একটি নোটিশ। বিদেশি নাগরিকদের জন্য নির্ধারিত ফরম পূরণ করতে হবে। এই ফরম পূরণের বিষয়টি ট্যুর অপারেটররাও বলতে ভুলে যান। বেশ কিছু তথ্য দিয়ে ফরম পূরণ করে বের হয়েই আমাদের ট্যুর অপারেটর জোবায়ের ভাইয়ের দেখা পেয়ে গেলাম। উনি এই ট্যুরে একাধারে আমাদের গাইড ও ড্রাইভার। বাক্সপেটরা উঠিয়ে আমরা ছুটলাম ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল টিউলিপ গার্ডেন। শ্রীনগর বিমানবন্দর থেকে বাগানের দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার।

শ্রীনগরের ডাললেক লাগোয়া এই বাগান। গার্ডেনে ঢুকতেই রংধনুর মতো নানা রঙের টিউলিপ চোখে পড়ল। নানা ধরনের ঝরনা আর খানিক পরপর বসার আয়োজন। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ ছাড়াও নানা দেশ থেকেই পর্যটকেরা আসেন। বিশাল এই বাগানে সারা দিন থাকলেও মন ভরবে না। টিউলিপের এই বাগান মনে করাবে বলিউডের বিখ্যাত ছবি সিলসিলা–এর সেই গানের দৃশ্য। টিউলিপের বাগানে ‘দেখা এক খোয়াব’ গানে অমিতাভ বচ্চন ও রেখার রোমান্সে এখনো বুঁদ সিনেমাপ্রেমীরা। যদিও আমস্টারডামে এই গানের শুটিং হয়েছিল।

লাল, হলুদ, গোলাপি, কমলা টিউলিপ ফুটে আছে বাগানে

পাহাড়ঘেরা এই বাগানের হাঁটাপথের দুই পাশে টিউলিপের বাগান। লাল, কমলা, হলুদ, গোলাপি, বেগুনি, সাদা, কালোসহ নানা রং ও জাতের টিউলিপ ফুটে আছে। দর্শনার্থীরা যেন ফুল ছিঁড়তে না পারেন, সে জন্য পুরো বাগান স্বচ্ছ নেট দিয়ে ঘেরা। টিউলিপ ছাড়া অন্য জাতের ফুলের গাছও আছে।

একেকটি লম্বা বাগানের পাশ দিয়ে আছে হাঁটার পথ

২০০৮ সালের দিকে কাশ্মীরে গড়ে তোলা হয় ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল টিউলিপ গার্ডেন। ওই সময় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন গুলাম নবী আজাদ। মূলত শীত ও গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময়ে পর্যটকের মনোযোগ কাড়তে তাঁর উদ্যোগে বিশাল এই টিউলিপ বাগানের যাত্রা শুরু। টিউলিপ বাগানের আগের নাম ছিল ‘সিরাজবাগ’। পরে নাম রাখা হয় ‘ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল টিউলিপ গার্ডেন’।

প্রায় ৭৫ একর জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে এই বাগান

প্রতিবছর মার্চের শেষে শুরু হয় টিউলিপের মৌসুম। মাত্র তিন থেকে পাঁচ সপ্তাহ টিউলিপ ফুটে থাকে। এই সময়ে টিউলিপ উৎসবের আয়োজন করে জম্মু-কাশ্মীর সরকার। প্রায় ৭৫ একর জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে এই বাগান। মৌসুমের এই সময়টায় দেশি-বিদেশি লাখো পর্যটক ও দর্শনার্থী টিউলিপ দেখতে আসেন। ২০২৩ সালের মার্চ ও এপ্রিলের মধ্যে প্রায় চার লাখ পর্যটক সেখানে গিয়েছিলেন।

এবারের মৌসুমেও নানা আকার ও রঙের টিউলিপ ফুটেছে। টিউলিপের চোখজুড়ানো সৌন্দর্য পর্যটক ও দর্শনার্থীর সঙ্গে ভাগ করে নিতে মার্চের শেষ সপ্তাহে বাগান খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে বাগান। তাই বাংলাদেশ থেকে যাঁরা মার্চ-এপ্রিলে কাশ্মীর ভ্রমণে যাবেন, তাঁদের জন্য টিউলিপ দেখার ভালো সুযোগ রয়েছে।