জলপ্রপাত দেখতে গিয়ে দুর্ঘটনা এড়াতে যে ১০টি কথা মনে রাখতেই হবে

বর্ষায় প্রতিটি জলপ্রপাত প্রাণ ফিরে পায়, বিপুল জলপতনের আনন্দে হয়ে ওঠে উচ্ছল। দেশের মধ্যে বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, চট্টগ্রাম, সিলেট, মৌলভীবাজারে আছে ছোট-বড় অনেক জলপ্রপাত। গহিন পাহাড়ের এই জলপ্রপাতগুলো দেখতে দীর্ঘপথ পাড়ি দেন রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষেরা। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের পাহাড়ি জলপ্রপাতগুলোও এখন পর্যটকদের কাছে দারুণ জনপ্রিয়। খইয়াছড়া, রূপসী, নাপিত্তাছড়া, সোনাইছড়িসহ বেশ কিছু জলপ্রপাত আছে এই উপজেলায়। এসব জলপ্রপাতে পর্যটক বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে দুর্ঘটনা, ঘটছে প্রাণহানিও। দুর্ঘটনা এড়াতে পর্যটকদের জন্য কিছু পথনির্দেশনা দিয়েছে মিরসরাইয়ের ফায়ার সার্ভিস, জলপ্রপাত ইজারাদারদের প্রতিনিধি ও পুলিশ।

জলপ্রপাতের খাড়া ঢাল বেয়ে এভাবে ওপরে উঠবেন না
ফাইল ছবি

১. গাইড নিন: জলপ্রপাতে যাওয়ার সময় সঙ্গে স্থানীয় অভিজ্ঞ গাইড নিন। মিরসরাইয়ের জলপ্রপাতের প্রবেশপথে টিকিট কাউন্টারে ইজারাদার ও বন বিভাগ অনুমোদিত গাইড পেয়ে যাবেন। খরচ হবে ৪০০-৫০০ টাকা। তাঁরাই পাহাড়ি পথে দুর্ঘটনা এড়িয়ে পথ চলতে সহায়তা করবেন, জলপ্রপাতে নিরাপদে থাকতে পরামর্শ দেবেন।

২. গভীর কূপের অজানা রূপ: মিরসরাইয়ের জলপ্রপাতগুলোতে এক বা একাধিক কূপ রয়েছে। এসব কূপ কলসি আকৃতির। ওপরে ছোট মুখ আর ভেতরটা বড় ও গভীর। এসব কূপে কোনোভাবেই নামবেন না।

৩. সাঁতার না জানলে: জলপ্রপাতের নিচের অগভীর কূপগুলো অনেকটাই নিরাপদ। জলপ্রপাতের জলে ভিজে আনন্দ করেন পর্যটকেরা। তবে বিপদ এড়াতে সাঁতার না জানলে এসব অগভীর কূপেও নামবেন না।

৪. ঢাল বেয়ে ওপরে উঠবেন না: পাহাড়ি জলপ্রপাতের ঢালগুলো পিচ্ছিল হয়ে থাকে। রোমাঞ্চপ্রিয় পর্যটকেরা এসব ঢাল বেয়ে ওপরে ওঠার চেষ্টা করেন। সামন্য ভুলে পা পিছলে পড়ে গিয়ে অনেকে দুর্ঘটনার শিকার হন। তাই জলপ্রপাতের খাড়া ঢাল বেয়ে ওপরে উঠবেন না।

৫. ছবি তুলতে সতর্ক থাকুন: জলপ্রপাতের খাড়া ঢালে বা চূড়ায় দাঁড়িয়ে অনেকের মধ্যে ছবি তোলার প্রবণতা আছে। এভাবে ঝুঁকি নিয়ে ছবি তুলতে গিয়ে পা পিছলে পড়েন অনেকে। এতে দুর্ঘটনায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যায়। তাই ঢালে বা চূড়ায় দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে যাবেন না।

৬. অতি বৃষ্টির সময়: মিরসরাইয়ের বিভিন্ন জলপ্রপাতে যাওয়ার পথ উঁচু-নিচু। অতিবৃষ্টির সময় এসব পথ খুব পিচ্ছিল হয়ে যায়। আর ভারী বর্ষণের সময় পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলে তীব্র স্রোত তৈরি হয়। এ সময় জলপ্রপাত ভ্রমণ খুব বিপজ্জনক। তাই অতিবৃষ্টির সময়টায় ভ্রমণ থেকে বিরত থাকাই ভালো।

নিরাপদ দূরত্বে থেকেও জলপ্রপাতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন, ছবি তুলতে পারেন

৭. নিরাপদ জায়গায় অবস্থান নিন: স্বাভাবিক আবহাওয়ায় জলপ্রপাত এলাকায় যাওয়ার পর অনেক সময় ভারী বর্ষণ শুরু হয়। আর এতে মুহূর্তেই ছড়া ও ঝিরিতে হড়কা বানের সৃষ্টি হয়। এমন অবস্থায় পর্যটকেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। অনেকে তীব্র স্রোতের মধ্যে এক পাশ থেকে অন্য পাশে পার হওয়ার চেষ্টা করেন। এতে স্রোতে ভেসে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। এমন অবস্থায় আতঙ্কিত না হয়ে নিরাপদ উঁচু স্থানে অবস্থান নিন। পরিস্থিতি অনুকূলে না এলে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল করে সাহায্য চাইতে পারেন।

৮. জুতসই জুতা পরুন: পাহাড়ে ভ্রমণে গেলে পানি ও পাথুরে পথে হাঁটার উপযোগী জুতা পরুন। এতে ছোটখাটো দুর্ঘটনা এড়িয়ে পথ চলতে পারবেন।

৯. দূরত্ব মেনে সৌন্দর্য উপভোগ করুন: জলপ্রপাত দেখতে গিয়ে কূপে নেমে পড়া, ঢালে বা ছড়ায় হাঁটাহাঁটি ও সেলফি তোলা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। তাই নিরাপদ দূরত্বে থেকেও জলপ্রপাতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।

১০. নির্দেশনা মানুন: জলপ্রপাত এলাকায় পর্যটকদের করণীয়-সংক্রান্ত বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া আছে। বন বিভাগ ও ইজারাদারদের দেওয়া এসব নির্দেশনা মেনে চলুন।