সময়টা শর্ষে ফুলের, হলুদ ফুলের নিঝুম রাজ্য এখন মাঠে মাঠে।
সময়টা শর্ষে ফুলের, হলুদ ফুলের নিঝুম রাজ্য এখন মাঠে মাঠে।

চোখে শর্ষে ফুল দেখা যখন ভালো

সময়টা শর্ষে ফুলের। হলুদ ফুলের নিঝুম রাজ্য এখন মাঠে মাঠে। আপনি যদি ইট-কাঠ-পাথরের যান্ত্রিক শহরের বাসিন্দাও হয়ে থাকেন, তবু এমন রাজ্যের সঙ্গে আপনার দূরত্ব খুব একটা বেশি হওয়ার কথা নয়। ঘুরতে গেলে দিনে দিনেই ফিরে আসতে পারবেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কিংবা প্রশান্তির এত উৎস থাকতে শর্ষে ফুলের রাজ্যে কেন? বলছি সে কথাই।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, অফিসে অফিসে এখন ছুটির আমেজ। বছর শেষের ঘোরাঘুরির আয়োজন চলছে অনেকের। দেশের ভেতরের সুন্দর জায়গাগুলোতে ঘুরতে যাবেন কেউ। আবার কেউ ছুটি কাটাবেন বিদেশবিভুঁইয়েও। এমন ঘোরাঘুরিতে ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট বেশ খানিকটা খালি হয়ে এলেও ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্টগুলো হয়তো রংবেরঙের ছবি দিয়ে পূর্ণ হয়ে উঠবে। টাকাপয়সা আর লাইক-কমেন্টের জটিল হিসাবনিকাশের বাইরেও মনের খোরাক নিশ্চয়ই মিলবে।

মাঠভরা প্রাণের সজীবতা

তবে বাস্তবতা হলো, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছবিতে ছবিতে সয়লাব হয়ে গেলেও প্রত্যেক মানুষ মনের মতো করে ভ্রমণ করার সুযোগ পান না। কারও লম্বা ছুটি মেলে না সংসার কিংবা অফিস থেকে, কারও সাধ্য হয় না বড়সড় ব্যয়ের। মধ্যবিত্তের টানাপোড়েনের সংসারে বাস্তবতা আজও নির্মম। তবে মন তো হাঁপিয়ে ওঠেই। তেমনই যদি হয় বাস্তবতা, তাহলে একটু আয়েশি সময়যাপনের বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবা ছাড়া তো আর উপায় নেই। সেই ব্যবস্থাতেই আপনি এমন একটা জায়গা বেছে নিতে পারেন, যেখানে গেলে দুই চোখ ভরে উজ্জ্বল হলুদ শর্ষে ফুলের নান্দনিকতা উপভোগ করতে পারবেন।

ক্লান্তি নয়, প্রশান্তি

এই তো সেদিন অকস্মাৎ হাজির হলাম এক শর্ষে ফুলের রাজ্যে। মাঠভরা প্রাণের সজীবতা। ঝিরিঝিরি হাওয়ায় দুলে ওঠা শর্ষে ফুলের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অন্তরটা পূর্ণ হয়ে উঠল এক প্রশান্তিদায়ক অনুভূতিতে। খুব বেশি সময় যে মাঠের ধারে বসে ছিলাম, তা নয়। তবে হেমন্তের শেষার্ধের মিষ্টি রোদ্দুরে সেদিনের আয়েশি সময়যাপনে বহুদিনের ক্লান্তি কেটে গেল বলে অনুভব করলাম। সেই মায়াঞ্জন চোখে নিয়েই ঘরে ফেরার পালা।

ছবির মতোই সুন্দর

মনের দরজায় কিংবা রসনাবিলাসে

তবে সেই মায়ার পুরোটুকু অনুভব করতে আপনার কিন্তু সেখানে গিয়ে মনের দরজাটি খোলা রাখতে হবে। নইলে কেবল শর্ষে ফুল দেখে, আর সেখানে দুটো ছবি তুলেই ভ্রমণ সাঙ্গ হবে আপনার। আমাকে যেমন ভ্রমণসঙ্গীদের একজন আলাদাভাবে দেখিয়ে দিয়েছিলেন হাওয়ার তালে দুলতে থাকা ফুলগুলোর ছন্দ। সেই সঙ্গী অবশ্য শর্ষে ফুলে রসনাবিলাসের অভিজ্ঞতার কথাও ভাগ করে নিচ্ছিলেন। সেখান থেকেই মনে প্রশ্ন এল শর্ষে ফুলের পুষ্টিগুণ নিয়ে। সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ঢাকার গবর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লায়েড হিউম্যান সায়েন্সের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শম্পা শারমিন খান

শর্ষে ফুলের চেয়ে বেশি আঁশ পাবেন এর পাতায়

তিনি জানান, শর্ষে ফুলে প্রচুর অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট থাকলেও তা চুলার তাপে নষ্ট হয়ে যায়। তবে খানিকটা আঁশ পাওয়া যায় এই ফুলের তৈরি পদ থেকে। তবে তার চেয়ে বেশি আঁশ পাবেন এর পাতায়। সুস্থ থাকার জন্য রোজ পর্যাপ্ত আঁশসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। শাক হিসেবে ভাতের সঙ্গে খাওয়া যায় এই পাতা। বড়া বা পাকোড়াও হতে পারে পাতা দিয়ে। শর্ষের ঘ্রাণটা থাকায় এই পাতা দিয়ে তৈরি পদগুলোতে রসনাবিলাসে আসে ভিন্ন মাত্রা। শর্ষে ফুলের তৈরি পদেও রসনায় আসে বৈচিত্র্য।

শেষ কথা

আপনিও ঘুরে আসতে পারেন এমন কোনো শর্ষে ফুলের রাজ্য থেকে

শর্ষে ফুলের মৌসুম পেরিয়ে যাবে। তবে সেদিনের সেই মায়ার অনুভবটুকু বোধ হয় রয়ে যাবে বহুদিন। একঘেয়ে জীবনে এমন ভিন্নতা আনতে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন এমন কোনো শর্ষে ফুলের রাজ্য থেকে। তবে আপনার আনন্দের জন্য কৃষকের কষ্টের ফসলের যেন কোনো ক্ষতি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। শর্ষে ফুলের কাছে নানা ধরনের কীটপতঙ্গও থাকতে পারে। তাই সতর্ক থাকুন।