ভ্রমণে পরিবেশের পরিবর্তন হয়। শরীরের ওপর কিছু ঝক্কিও পড়ে বৈকি। কেবল মহামারির প্রেক্ষাপটেই নয়, বরং সব সময় ভ্রমণের সময় স্বাস্থ্যসংক্রান্ত কিছু বিষয় খেয়াল রাখা উচিত। নইলে ভ্রমণে মনকে পরিতৃপ্ত করে তোলার বদলে নিজের অজান্তেই আপনি শরীর ও মনের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে ফেলতে পারেন।
বেড়াতে গেলে বাসা থেকে খাবার কিংবা পানি বয়ে নেওয়া তো আর সম্ভব নয়। কিন্তু স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ হিসেবে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে অবশ্যই—
পানি খাওয়ার আগে নিরাপদ কি না, নিশ্চিত হয়ে নিন।
অতি উৎসাহী হয়ে ঝরনা, লেক, সমুদ্র বা অন্য যেকোনো উৎস থেকে চট করে পানি মুখে দেওয়া উচিত নয়।
অতিরিক্ত ঝাল কিংবা মসলা দেওয়া খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন। যে খাবারে অভ্যস্ত নন, সেই খাবার খুব বেশি না খাওয়াই ভালো। অর্থাৎ ভিন্ন ধরনের রান্না কেবল একটু চেখে দেখা বা অল্প খাওয়া যেতে পারে।
অস্বাস্থ্যকর খাবার যতই মুখরোচক হোক, এড়িয়ে চলা ভালো।
অনেকের খাবারদাবারের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলতে হয়। অল্প সময়ের জন্য বেড়াতে গিয়ে সেগুলো না মেনে চললে তেমন ক্ষতি হবে না, এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা।
যাত্রার আগে ভরপেট না খাওয়াই ভালো।
দীর্ঘ সময় খালি পেটে থাকাও উচিত নয়। দুর্গম এলাকায় গেলে সঙ্গে কিছু শুকনা খাবার ও পানি রাখুন। কম পরিমাণ খাবার বহন করলেও সেটির ক্যালরি এবং পুষ্টিমান যাতে পর্যাপ্ত থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। খেজুর রাখতে পারেন, মিষ্টি বিস্কুটও রাখা যায়। ডায়াবেটিসের রোগীর ক্ষেত্রে তার প্রয়োজন অনুযায়ী কিছু বাড়তি খাবার রাখুন।
অনেকেরই নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হয়। কোনো ওষুধ রোজকার, কোনোটি সাপ্তাহিক। কোনোটি আবার প্রয়োজন হয় মাঝেমধ্যে। ট্যাবলেট, ক্যাপসুল তো বটেই, ইনহেলার বা ইনসুলিনের প্রয়োজন হয় অনেকের। এই ওষুধগুলো সঙ্গেই রাখুন। কিছু ওষুধ (যেমন ইনসুলিন) নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রাখতে হয়। সেটির ব্যবস্থাও করতে হবে অবশ্যই। দেশের বাইরে গেলেও ওষুধ সঙ্গে রাখা ভালো, চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রও সঙ্গে নিয়ে নিন দেশের বাইরে যাওয়ার সময়।
প্রাথমিক চিকিৎসার টুকিটাকি রাখুন নিজের সঙ্গেই।
সঙ্গে বাড়তি মাস্ক রাখা ভালো। জীবাণু ও ধুলাবালু থেকে সুরক্ষার জন্য মাস্ক যে কতটা প্রয়োজন, তা বোধ হয় নতুন করে আর বলার দরকার নেই। যেখানে–সেখানে মাস্ক ফেলবেন না।
নিয়মমাফিক হাত ধোয়া, হাঁচি-কাশির আদবকেতা মেনে চলা, যেখানে–সেখানে কফ-থুতু না ফেলাসহ সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। করোনাভাইরাসের টিকার নির্দেশিত ডোজ সম্পন্ন করে ফেলুন।
এমন জায়গায় না যাওয়াই ভালো, যেখানে খুব বেশি ভিড়।
খাওয়ার সময় তো মাস্ক খুলতেই হয়। অন্তত সেই সময় যাতে নিজের পরিবারের বাইরের অন্য মানুষের কাছ থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে বসা যায়, সেটি নিশ্চিত করুন। সম্ভব হলে হোটেলের খাবার ঘরে বসে না খেয়ে নিজেদের জন্য বরাদ্দ কক্ষে কিংবা একটু দূরে কোথাও নিয়ে গিয়ে খান।
আবাসিক হোটেলের কক্ষের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করুন অবশ্যই। আলো-বাতাস প্রবেশ করে, এমন কক্ষ বেছে নেওয়া ভালো।
যেখানে মশাবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব, যেমন বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকায় ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণুবাহী মশা রয়েছে, সেখানে মশার কামড় থেকে বাঁচতে কিছু আলাদা ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। ফুলহাতা পোশাক মশার কামড় থেকে কিছুটা সুরক্ষা তো দেবেই। এ ছাড়া মশা প্রতিরোধী সামগ্রী ব্যবহার করুন। তবে শিশুদের এমন সামগ্রী দেওয়ার আগে জেনে নিন, সেটি শিশুর উপযোগী কি না। কিছু কিছু পণ্য তিন বছর বয়স হওয়ার আগে প্রয়োগ করাটা ঝুঁকিপূর্ণ।
শরীরের ওপর খুব চাপ সৃষ্টি করে অল্প সময়ে অনেক জায়গা ঘুরে আসার প্রবণতা ভালো নয়। ‘অমুক জায়গায় সবাই ছবি তোলে বলে আমাকেও সেখানে যেতেই হবে’—এমন ভাবনা মনে ঠাঁই দেবেন না।
অত্যন্ত দুর্গম এলাকার দুর্লভ সৌন্দর্য দেখার আশায় নিজের জীবন ও সুস্থতাকে ঝুঁকিতে ফেলবেন না। ঝোপ-জঙ্গলে ঢোকার ক্ষেত্রেও সাবধান। বেড়াতে গিয়ে অবশ্যই সেখানকার স্থানীয় দিকনির্দেশনা মেনে চলুন।
বেড়াতে গিয়ে মনের যত্ন নিতে ভুলবেন না। হাসি-আনন্দে সময় কাটান। বিষণ্নতাকে জায়গা দেবেন না। ব্যস্ততাকে ছুটি দিন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সময় কম দিন, সম্ভব হলে ‘ছুটি’ নিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকেও। কাছের মানুষদের সঙ্গে সময় কাটান। মন ভালো থাকবে।
বেড়াতে গিয়ে আপনি কোনো জায়গা অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন রেখে আসছেন না কিংবা পরিবেশের ক্ষতি করছেন না—এগুলোও খেয়াল করুন। এটি আপনাকে মানসিক প্রশান্তি দেবে।
যাত্রাপথে বমিসংক্রান্ত সমস্যায় ভোগেন কেউ কেউ। এ সমস্যা প্রতিরোধের জন্য ওষুধ সেবন করতে পারেন। যাঁদের এমন সমস্যা রয়েছে, তাঁরা যাত্রার সময় বই পড়া এবং মুঠোফোনের পর্দায় তাকিয়ে থাকার মতো কাজ থেকে বিরত থাকুন। তার চেয়ে বরং দূরের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে পারেন। বিকল্প যাতায়াতব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। যেমন বাসের বদলে ট্রেনে ভ্রমণ করতে পারেন।
ভ্রমণে গিয়ে স্বাস্থ্যসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যায় পড়লে কাছের চিকিৎসাকেন্দ্রে যাবেন অবশ্যই। ‘নতুন জায়গা, কোথায় যাব? কেমন ডাক্তার পাব?’ এ ধরনের ভাবনা মনে ঠাঁই দেবেন না। প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে রোগীর কষ্ট কমাতে চেষ্টা করুন এবং আকস্মিক বিপদের মোকাবিলা করুন।