হাওরে জালের মতো ছড়িয়ে থাকা নদী, নালা ও খাল বর্ষায় মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। বিস্তীর্ণ জলরাশির মধ্যে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা হিজল-করচগাছ, পাখির ওড়াউড়ি আর অনতিদূরে ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়। পানি, মেঘ আর পাহাড়ের এমন রূপে মুগ্ধ হয়ে প্রতিবছর টাঙ্গুয়ায় ঘুরতে যান হাজারো পর্যটক। এই পর্যটকদের জন্য কয়েক বছর হলো হাওরে ভাসছে বিশেষায়িত সব নৌযান। ‘হাউসবোট’ নামে পরিচিত বিলাসবহুল এসব নৌকাঘর ভ্রমণপিপাসুদের কাছে বেশ জনপ্রিয়।
বর্ষার আগেই জেনে নিন হাউসবোটে ভ্রমণের কিছু তথ্য।
টাঙ্গুয়ার হাওরের পর্যটকবাহী বেশির ভাগ হাউসবোটই সুনামগঞ্জ শহরের সাহেববাড়ির ঘাট থেকে ছেড়ে যায়। কিছু হাউসবোট তাহিরপুর উপজেলা সদরের থানা ঘাট থেকেও ছাড়ে। সুনামগঞ্জ সদর থেকে সড়কপথে তাহিরপুর যেতে লাগে প্রায় দেড় ঘণ্টা। টাঙ্গুয়ার হাওরের বড় অংশ এই তাহিরপুরেই পড়েছে। হাওরে প্রবেশের দূরত্ব কমে আসে বলেই তাহিরপুর থেকে নৌকাভাড়া অপেক্ষাকৃত কম। তবে বর্ষার সময় পানি বেড়ে গেলে প্রায়ই এই রুটে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তাই ভ্রমণের আগে হালনাগাদ তথ্য জেনে নেবেন।
কোনোটার নাম ‘বর্ষা’, কোনোটা ‘জলনিবাস’ বা ‘মেঘদূত’। বাহারি নামের এসব হাউসবোট হুটহাট ঘাটে গিয়ে ভাড়া করতে পারবেন না। আগে থেকে বুকিং করে যেতে হবে। প্রায় সব হাউসবোটের নামেই ফেসবুক পেজ আছে। পেজে দেওয়া নম্বরে যোগাযোগ করে বুকিং করতে পারেন।
হাউসবোট বুকিং করার আগে তাদের প্যাকেজ সম্পর্কে জেনে নিন। নৌকার আকার, ধারণক্ষমতা, সুযোগ-সুবিধা, মৌসুম, ভ্রমণকারীর সংখ্যা ইত্যাদির ওপর হাউসবোটের প্যাকেজ-মূল্য নির্ভর করে। ফেসবুক পেজে ছবি ও ভিডিও দেখে হাউসবোটটি সম্পর্কে ধারণা নিন।
হাউসবোট ভেদে ১০-২৪ জন পর্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করা যায়। এসব নৌযানে খাবারদাবারসহ দুই দিন ও এক রাতের প্যাকেজ জনপ্রতি ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। অন্যান্য দিনের তুলনায় ছুটির দিন ও পূর্ণিমার সময় হাউসবোটের ভাড়া কিছুটা বেশি থাকে।
হাউসবোটগুলো সকালেই হাওরের উদ্দেশে ঘাট ছাড়ে। এরপর টাঙ্গুয়ার হাওরের ওয়াচ টাওয়ারে গিয়ে বিরতি দেয়। সেখান থেকে বিকেল নাগাদ চলে যায় টেকেরঘাট, রাতে ওখানেই নোঙর করা থাকে। এখানকার শহীদ সিরাজ লেকে (নীলাদ্রি) সন্ধ্যা
কাটান পর্যটকেরা। তারা দ্বিতীয় দিন টেকেরঘাট থেকে শিমুলবাগান, বারিকটিলা, জাদুকাটা নদী হয়ে সন্ধ্যার আগেই আবার সুনামগঞ্জের সাহেববাড়ি বা তাহিরপুর ঘাটে ফিরে আসেন।