করোনা মহামারি পেরিয়ে আবারও স্বাভাবিক হয়ে এসেছে পৃথিবী। মানুষ শুরু করেছে স্বাভাবিক যাতায়াত। আবার ছুটছে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। হয়তো তেমনটা শুরু হয়ে গেছে আপনারও বা আপনার পরিচিত কারও। আর যখনই যেতে হচ্ছে দূরের দেশে, ভুগতে হচ্ছে জেট ল্যাগে। জেনে নিন কেন হয় জেট ল্যাগ, কী করলে এড়ানো যাবে এ সমস্যা।
কেবল স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতই নয়, আপনার শরীরও ঘড়ি ধরে চলে। নির্দিষ্ট সময় পরপর খিদে পায়, ঘুম পায়। আপনি যেখানে থাকেন, শরীর সেখানকার সময়ের সঙ্গে মানিয়ে চলে। যখনই হঠাৎ করে আপনি অন্য একটা টাইমজোনে চলে যান, আপনার শরীরের মেনে চলা সময় আর সেখানকার স্থানীয় সময়ে গোলমাল বেধে যায়। তখনই হয় জেট ল্যাগ। গভীর রাতে খিদে পায়। সকালবেলা ঘুম পায়। রাত জেগে বসে থাকতে হয়। ঘুরতে গিয়ে এমন হলে ভ্রমণটাই মাটি হয়ে যায়।
মানুষের শরীরের দৈনিক চক্র বা ডেইলি সাইকেল গড়ে ২৪ দশমিক ২ ঘণ্টা। অর্থাৎ আপনাকে যদি একটা গুহায় আটকে রেখে দেওয়া হয়, যেখানে সূর্যের আলো একদমই প্রবেশ করতে পারে না, সেখানেও প্রতি ২৪ দশমিক ২ ঘণ্টা পরপর আপনার শরীর নতুন দিন শুরু হয়েছে বলে গণ্য করবে। সেভাবেই আপনার ঘুম পাবে, খিদে পাবে। তবে মানুষভেদে এটা সামান্য কমবেশি হয়। যাদের এই চক্র একটু লম্বা, তারা যখন পুব থেকে পশ্চিমে যাত্রা করে, জেট ল্যাগের প্রভাব কম পড়ে। মানে ধরুন, সে যদি ঢাকা থেকে টরন্টো যায়, স্বাভাবিক মানুষের তুলনায় সে কম ভুগবে। তবে যাদের এই চক্র ছোট, তাদের ক্ষেত্রে উল্টোটা ঘটে কি না, নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সাধারণত আপনি যত পশ্চিমে যাত্রা করবেন, শরীরের মানিয়ে নিতে তত সুবিধা হয়। ধরুন, আপনারা দুজন ঢাকা থেকে বেলা দুইটায় যাত্রা শুরু করলেন। আপনি গেলেন পশ্চিমে। ধরুন, দুবাই। আর আপনার বন্ধু পুবে, বালিতে। ধরে নিন দুজনেরই সমান ছয় ঘণ্টা করে লাগল। তাহলে আপনি দুবাই পৌঁছাবেন স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ছয়টায়। আর আপনার বন্ধু বালিতে রাত ১০টায়। কিন্তু আপনাদের শরীরের ঘড়িতে তখন বাজে রাত আটটা। আপনারা হয়তো নিয়মিত ঘুমান রাত ১১টায়, আর ওঠেন সকাল ৭টায়। সে হিসাবে আপনার দুবাইয়ের রাত ৯টায় ঘুম আসবে। ভাঙবে ভোর সাতটায়। আর আপনার বন্ধুর ঘুম আসবে রাত একটায়। ভাঙবে বেলা ১১টায়। অর্থাৎ, সময়ের এই তারতম্যে আপনার কাজে খুব একটা সমস্যা হবে না। কিন্তু আপনার বন্ধুকে ভুগতে হবে। মোদ্দাকথা, পূর্ব থেকে পশ্চিমে গেলে জেট ল্যাগে ঝামেলা কম হয়।
কারণ যা–ই হোক, জেট ল্যাগ কিন্তু একটা উটকো ঝামেলাই বটে। হয়তো আপনি ছোট্ট সফরে গেছেন। তাহলে তো জেট ল্যাগ কাটতে কাটতেই আপনার ফেরার সময় হয়ে যাবে। আবার ঘুরে এসেও ভুগতে হবে ফিরতি জেট ল্যাগে। কয়েক দিন থাকবে ঝিমানো ভাব। সে থেকে বাঁচতে করতে পারেন কিছু সহজ কাজ।
আগে ঠিক করে নিন শরীরের ঘড়ির সময় বদলাবেন কি না। যদি সফর তিন দিন বা তার কম হয়, তাহলে জেট ল্যাগেই থাকুন। তার চেয়ে বেশি দিনের হলে বিমানে চড়েই শরীরকে নতুন সময়ে অভ্যস্ত করুন। হাতের ঘড়িতে সময় বদলে নিন। এবার সে অনুযায়ী খাওয়া-ঘুম শুরু করুন।
বেশি সমস্যা হয় ঘুমের সময় ঠিক করতে। সে জন্য রাতে ঘুমানোর চেষ্টা করুন। দিনে ঘুম পেলেও পরিহার করুন। বেশি সমস্যা হলে ছোট ছোট পাওয়ার ন্যাপ নিন। কিংবা খানিকটা বিশ্রাম। সন্ধ্যার পর তা–ও নেবেন না। নইলে রাতে আবার জেগেই থাকতে হবে।
কফি–জাতীয় পানীয় এড়িয়ে চলুন। কারণ, এগুলো আপনার ঘুমে প্রভাব ফেলে। অনেকে আবার জেট ল্যাগে পেটের সমস্যায় ভোগেন। তাঁরা খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারেন। কেবল তখনই খাবেন যখন খিদে পাবে।
আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সূর্যের আলো শরীরে লাগানো। কারণ, এর মাধ্যমেই শরীর স্থানীয় সময়ের সঙ্গে পরিচিত হয়। সে অনুযায়ী নিজেকে প্রস্তুত করে। তাই দিনের আলো গায়ে মেখে শরীরকে নতুন সময়সূচি জানান দিন।