তৈচাকমা জলপ্রপাতের কথা অনেক শুনেছি। বাড়ির কাছেই, তারপরও যাব যাব করে আগে যাওয়া হয়নি। ৭ জুলাই বন্ধুরা মিলে তিনটি মোটরসাইকেলে রওনা হলাম।
খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে সাত কিলোমিটার দূরে জলপ্রপাতটির অবস্থান। দীঘিনালা থেকে বুদ্ধপাড়া, চিত্ত মেম্বার পাড়া হয়ে পিচঢালা আর ইট বিছানো আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথে মোটরসাইকেলে ছুটে চলেছি। কয়েক মিনিটের মধ্যেই আমরা আলমগীরটিলায় পৌঁছে গেলাম। দেখি দলে দলে ভ্রমণপিপাসু মানুষ জলপ্রপাত থেকে ফিরছে। তাদের কাছেই জিজ্ঞেস করে জলপ্রপাতের সঠিক অবস্থান জেনে নিলাম। আলমগীরটিলা থেকে আরও কিছু দূর মোটরসাইকেল নিয়ে গিয়ে একটি বাড়ির উঠানে দাঁড়াই। বাড়ির মানুষকে বলেকয়ে মোটরসাইকেল রাখার ব্যবস্থাও হয়ে যায়। তারপর সেখান থেকে হাঁটা শুরু করি।
পাহাড় থেকে নেমে জমির আল ধরে হেঁটে হেঁটে একটা ছড়ার দেখা পাই। ছড়ার চারপাশে গাছগাছালি আর লতাগুল্ম। পাহাড়ি ছড়ার পানিও বেশ শীতল। তার মধ্যে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে পাথর। ছড়ার শীতলতায় মনটা প্রশান্ত হয়ে গেল। এভাবে কিছুক্ষণ হাঁটার পর দুটি পাথুরে পাহাড়ের দেখা পেলাম। এই দুই পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে ছড়াটা চলে গেছে। ভরদুপুরে সূর্যের আলোয় পাহাড়ের মাঝখানটা ঝলমল করছিল।
এভাবে আরও কিছুটা এগোতে কানে এল জলপতনের শব্দ। এইটাই তৈচাকমা। ত্রিপুরা ভাষার তৈচাকমা মানে লাল পানি, আর চাকমা ভাষায় রাঙাপানি। তবে এখন পানির রং স্বচ্ছ। তার রূপও অভিভূত হওয়ার মতো। পতিত পানি নেমে এসে ছড়ায় পড়ছে। সেখানে বড় খাদের সৃষ্টি হলেও গভীরতা বেশি না। আমাদের দলের সবাই জলপ্রপাতের খাদে ঝাঁপিয়ে পড়ল। ইচ্ছেমতো খাদে ডুবে তার দুই পাশে এসে পানিতে ভিজলাম সবাই।
আমরা কয়েক ঘণ্টা জলপ্রপাত যাপন করে বৃষ্টি মাথায় ফিরতি পথ ধরলাম। পেছনে রেখে এলাম অপরূপ সৌন্দর্যের তৈচাকমা।
তৈচাকমা জলপ্রপাতে যেতে হলে দীঘিনালা থেকে মোটরসাইকেল বা চাঁদের গাড়িতে করে আলমগীরটিলা এলাকায় পৌঁছাতে হবে। সেখানে গাড়ি রেখে কিছুটা পাথুরে ছড়াপথ হাঁটলেই জলপ্রপাতের দেখা মিলবে। এই পথে হাঁটার সময় অবশ্যই ট্রেকিং শু পরে নিন। জলপ্রপাতে যাওয়ার পথে স্থানীয় বাসিন্দাদের বিরক্ত করবেন না। জলপ্রপাতে প্লাস্টিক, পানির বোতল, সঙ্গে নিয়ে যাওয়া খাবারের প্যাকেট ফেলে নোংরা করবেন না।
[প্রথম আলোর দীঘিনালা প্রতিনিধি ছিলেন পলাশ বড়ুয়া। গত ২ আগস্ট ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা গেছেন তিনি। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে লেখাটি প্রকাশিত হলো।]