শুষ্ক মৌসুমের টাঙ্গুয়ার হাওরও পর্যটকদের কাছে কম আকর্ষণীয় নয়
শুষ্ক মৌসুমের টাঙ্গুয়ার হাওরও পর্যটকদের কাছে কম আকর্ষণীয় নয়

গ্রীষ্মের হাওরে সম্প্রীতির উৎসব

সন্ধ্যা হতেই একে একে খালে এসে নোঙর করে পর্যটকবাহী নৌকা। টাঙ্গুয়ার হাওরের ওয়াচ টাওয়ার এলাকার সরু এই খাল সামনে বাউলাই নদে গিয়ে মিশেছে। বর্ষায় এলাকাটা জলমগ্ন হয়ে পড়লে শুধু মাথা তুলে থাকে সারি সারি করচগাছ। শুকনা মৌসুমে অবশ্য ভিন্ন দৃশ্যপট। পেটে শিকড় গজানো করচগাছগুলো খালপাড়ে দাঁড়িয়ে ছায়া দিচ্ছে। পাশে সবুজ ঘাসের বিরান মাঠ বর্ষার দিন গুনছে।

‘হাওর সম্প্রীতি ও পূর্ণিমা উৎসব’-এ শরিক হতে এসেছি আমরা। উৎসবের আয়োজন করেছে তাহিরপুর নৌ পর্যটনশিল্প সমবায় সমিতি, আর ব্যবস্থাপনায় আছে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ডাহুক। এতে সহযোগিতা করে ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম চরকি। আয়োজকদের ২০টি নৌকায় পতপত করে উড়ছিল ‘চরকি’ লেখা পতাকা। তারও আগে চরকির পক্ষ থেকে মাঝি-মাল্লাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় উপহারের ডালি।

বাউলাই নদে মাছ ধরছেন জেলেরা

রাতে করচতলায় বসবে স্থানীয় শিল্পীদের গানের আসর। তারই জোগাড়যন্ত্র চলছে। সেই আসরের অপেক্ষায় কোনো কোনো নৌকা থেকে পর্যটকেরা নেমে বিক্ষিপ্ত আড্ডা দিচ্ছেন। কেউ কেউ নৌকার ছাদেই বসেছেন। পাশের গোলাবাড়ি আর জয়পুর গ্রাম থেকেও অনেকে এসেছেন। উৎসুক তাঁদের দৃষ্টি। কেউ কেউ পর্যটকদের সঙ্গে গল্পও করছেন। তিন কিশোর গাথক দলকে দেখা গেল নৌকায় নৌকায় গিয়ে ভাটির সুর ছড়াচ্ছে।

চরকির পক্ষ থেকে মাঝি-মাল্লাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় উপহারের ডালি

এই সুরের সন্ধানেই শুকনা হাওরে এসেছেন প্রকৃতিপ্রেমী মানুষেরা। দিনভর নদীপথে ঘুরে ঘুরে দেখেছেন হাওরপারের প্রকৃতি আর মানুষের জীবন। তাহিরপুর নৌ পর্যটনশিল্প সমবায় সমিতিও এমনটাই চেয়েছিল। দেশের অন্য এলাকার মানুষের সঙ্গে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর এলাকার মানুষের যোগাযোগ তৈরি হোক, মজবুত হোক সম্পর্ক।

২ জুন এই সম্প্রীতিযাত্রার শুরুটা তাহিরপুর ঘাটে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সকালে তাহিরপুরে এসে মিলিত হয়েছেন তাঁরা। তারপর দল বেঁধে উঠেছেন নৌকায়। নামাবাজার ঘাট থেকে ছেড়ে নৌকাগুলো বাউলাই নদ হয়ে এগিয়ে গেছে টেকেরঘাটের দিকে। পুরো টাঙ্গুয়ার হাওরকে সাপের মতো পেঁচিয়ে জাদুকাটার সঙ্গে মিশেছে বাউলাই। যাত্রীদের ইচ্ছেমতো কোনো নৌকা সীমান্তবর্তী টেকেরঘাটের পথে গেছে। কোনো কোনো নৌকার যাত্রীরা আবার থেমেছেন হিজল-করচের বনে। নদীর শীতল জলে সাঁতার কেটেছে কোনো কোনো দল। সন্ধ্যা হতেই সবার গন্তব্য হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার এলাকা। নৌকাতেই রাঁধাবাড়া, নৌকাতেই খাওয়া। আদতে নৌকাটাই যে এক দিনের ঠিকানা।

রাতের পরিবেশনায় স্থানীয় একজন শিল্পী

তাহিরপুরের স্থানীয় শিল্পীদের গানে শুরু থেকেই করচবনের মজমা জমে ওঠে। পর্যটক আর স্থানীয় মানুষের উপস্থিতিতে উৎসবে রূপ নেয় আয়োজন। অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা নিয়ে অনেকের মৃদু ক্ষোভ থাকলেও দিন শেষে সেটুকু ভুলিয়ে দিল প্রকৃতি আর হাওরপারের সহজ-সরল মানুষের নিবিড় সান্নিধ্য।