বড়দিন উদ্‌যাপন করতে দুনিয়ার যে ৮ শহরে মানুষ বেশি ভিড় করে

আজ বড়দিন। দুনিয়ার নানা প্রান্তে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী মানুষেরা মহাসমারোহে উদ্‌যাপন করছেন যিশুখ্রিষ্টের জন্মদিন। বড়দিন কেন্দ্র করে ইউরোপ-আমেরিকার বড় বড় শহর হয়ে ওঠে ‘হলিডে ডেসটিনেশন’। বড়দিন উদ্‌যাপন করতে দুনিয়ার যে ৮ শহরে মানুষ বেশি ভিড় করেন, তার খোঁজখবর জানাচ্ছেন মৃণাল সাহা

রকফেলার সেন্টার (নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র)

নিউইয়র্ককে বলা হয় বড়দিনের ‘ড্রিম ডেসটিনেশন’। প্রতিবছর ঘটা করে নিউইয়র্কের ঐতিহ্যবাহী রকফেলার সেন্টারে স্থাপন করা হয় বড়দিনের সবচেয়ে বড় ‘ক্রিসমাস ট্রি’। ১৯৩১ সাল থেকে প্রতিবছর একই জায়গায় স্থাপন করা হয়ে আসছে গাছটি। একদম শুরুতে নিজেদের বেতনের টাকা জমিয়ে প্রায় ২০ ফুট লম্বা ক্রিসমাস ট্রি স্থাপন করেছিলেন রকফেলার সেন্টারের কর্মচারীরা। ক্রিসমাস ট্রি সাজিয়েছিলেন নিজেদের পুরোনো অলংকার দিয়ে। পরে ১৯৩৩ সাল থেকে রকফেলার সেন্টারের উদ্যোগে প্রতিবছর স্থাপন করা হয় ক্রিসমাস ট্রি। ঐতিহ্য বজায় রেখে এ বছর প্রায় ৮০ ফুট লম্বা ক্রিসমাস ট্রি স্থাপন করেছে রকফেলার সেন্টার। এবারের গাছটি সাজানো হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার অলংকার দিয়ে। প্রতিবছর এখানে হয় কনসার্ট, থাকে আইস স্কেটিংয়ের ব্যবস্থা।
ছবি: উইকিমিডিয়া কমনস

রোভানিয়েমি (ল্যাপল্যান্ড, ফিনল্যান্ড)

সান্তা ক্লজের সঙ্গে যাঁরা বড়দিন উদ্‌যাপন করতে চান, তাঁদের জন্য সেরা গন্তব্য ফিনল্যান্ড। দেশটির ল্যাপল্যান্ড অঞ্চলের রাজধানী রোভানিয়েমি শহরকে ধরা হয় সান্তা ক্লজের বাসভূমি হিসেবে। ঘন জঙ্গলের মধ্যে সরু এক রাস্তা ধরে পৌঁছাতে হয় সেই সান্তার বাড়িতে। ভেতরে ঘুরে দেখার ব্যবস্থা থাকে। চাইলে বল্গাহরিণের টানা রথে চড়ে ঘুরে ঘুরে উদ্‌যাপন করা যায় বড়দিন।

নুরেমবার্গ (জার্মানি)

বড়দিনের বিশেষ বিশেষ খাবার চেখে দেখতে যাঁরা আগ্রহী, তাঁদের জন্য সেরা গন্তব্য জার্মানির নুরেমবার্গ শহর। বড়দিনে ইউরোপের এই অন্যতম প্রাচীন শহরে থাকে মুখরোচক সব খাবারের আয়োজন। প্রতিটি দোকানেই থাকে দর্শনার্থীদের জন্য জিঞ্জার ব্রেড, ক্যান্ডি ক্যান ও বিয়ারের ব্যবস্থা।

রেকইয়াভিক (আইসল্যান্ড)

আইসল্যান্ডে বড়দিনের আয়োজন হয় একটু ভিন্নভাবে। এখানে সান্তা ক্লজের পরিবর্তে ‘ইয়ুল ল্যাডস’ নামে পরিচিত ১৩টি ট্রল উপহার পৌঁছে দেয় শিশুদের কাছে। ট্রল মূলত আইসল্যান্ডের লোককাহিনিতে বর্ণিত বামনাকৃতির নেতিবাচক কাল্পনিক চরিত্র। তবে বড়দিনে এই ট্রলদের আগমন ভিলেন হিসেবে নয়, বরং শিশুদের কাছে ওরা আবির্ভূত হয় হিরো হিসেবে। বড়দিনের ১৩ দিন আগে থেকেই শহরজুড়ে দেখা মেলে ‘ইয়ুল ল্যাড’দের।

সিডনি (অস্ট্রেলিয়া)

যাঁরা বড়দিন উদ্‌যাপন করতে আগ্রহী, তবে হাড়কাঁপানো শীতে আছেন আতঙ্ক, তাঁদের জন্য সেরা গন্তব্য অস্ট্রেলিয়ার সিডনি। বড়দিনের মৌসুমে সিডনিতে তাপমাত্রা থাকে ২৫ ডিগ্রির আশপাশে। এ সময় সিডনির সমুদ্রসৈকতগুলো হয়ে ওঠে আরও আকর্ষণীয় ও চোখজুড়ানো।

ব্রুশ (বেলজিয়াম)

বড়দিনের উৎসব হবে আর সেখানে চকলেট থাকবে না? এমন হতেই পারে না! বড়দিনের সময় বেলজিয়ামের ব্রুশ শহর রীতিমতো চকলেটের শহরে পরিণত হয়! ভিনদেশি কেউ ব্রুশের রাস্তা ধরে হাঁটলে অবাক না হয়ে পারেন না। আর যদি হন চকলেটপ্রেমী, তাহলে তো কথাই নেই। কারণ, শহরের সাজসজ্জাতেও থাকে চকলেটের চমকপ্রদ ব্যবহার। আলোকসজ্জায় চকলেটের ব্যবহারও দেখার মতো জিনিস বটে।

এডিনবরা (স্কটল্যান্ড)

একে তো বড়দিন উদ্‌যাপন, সঙ্গে আবার রাজপ্রাসাদে ভোজন! উৎসবের ষোলোকলা পূরণ যাকে বলে! স্কটল্যান্ডের এডিনবরায় বড়দিনে থাকে এমনই আয়োজন। পানীয় আর স্কির সঙ্গে থাকে হগমেনে ফেস্টিভ্যাল। তিন দিনব্যাপী এই উৎসবে থাকে কনসার্ট, আতশবাজিসহ নানা আয়োজন। তবে এডিনবরার মূল আকর্ষণ এডিনবরা ক্যাসল। বড়দিনের আগের দুই সপ্তাহে দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয় এই রাজপ্রাসাদ। যেখানে চাইলে দুপুরের খাবার সেরে নিতে পারেন যে কেউ। সে জন্য অবশ্য আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখতে হয়।

স্ট্রাসবুর্গ (ফ্রান্স)

১৫৭০ সাল থেকে প্রতিবছর ফ্রান্সের প্রাচীন শহর স্ট্রাসবুর্গের প্রান্তে বসে বড়দিনের বাজার। প্রায় ৪৫০ বছর আগে শুরু হওয়া এই বাজার আজও সরগরম। শুরুতে বড়দিনের বাজার করতে ফ্রান্সের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন যেতেন স্ট্রাসবুর্গে। সময় যত গড়িয়েছে, দর্শনার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ততই। এখন তো বড়দিনের বাজার করতে পুরো দুনিয়া থেকে লোকজন যান ‘ক্যাপিটাল অব ক্রিসমাস’খ্যাত স্ট্রাসবুর্গে।