বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যা দিন দিন ঊর্ধ্বমুখী। বিশ্ব পর্যটন সংস্থার জরিপ অনুযায়ী, ২০২০ সালেই বাংলাদেশে পর্যটন খাতে আয় ছিল প্রায় ২৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ২ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা। করোনা মহামারির প্রকোপ কমার পর থেকে অভ্যন্তরীণ ভ্রমণের তুলনায় আন্তর্জাতিক ভ্রমণের প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। বিশ্বে দর্শনীয় স্থানের অভাব নেই। তবে আমাদের এশিয়া মহাদেশেই আছে অনেক ‘আশ্চর্য’, যেখানে বাংলাদেশ থেকে ঘুরতে যাওয়া বেশি সুবিধাজনক। নতুন বছরের শুরুতে আমাদের আয়োজন সেসব আন্তর্জাতিক গন্তব্যগুলো নিয়ে।
ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সন্ধানে...
ভ্রমণ ব্যাপারটা বাক্সবন্দী করা যায় না। প্রত্যেকের পছন্দ আলাদা। অনেকেই ভ্রমণ করতে চান জ্ঞানের পরিসর বৃদ্ধি করে পৃথিবীটাকে চিনতে। তাদের জন্য এই গন্তব্যগুলো উপযুক্ত—
তুরস্ক
ভৌগোলিকভাবে তুরস্কের ৩ শতাংশ ইউরোপ এবং ৯৭ শতাংশ এশিয়া মহাদেশে অবস্থিত। এ সুবাদেই এশিয়া মহাদেশে বসেই অনেকটা ইউরোপের আমেজ পাওয়া যায় তুরস্কে। ইস্তাম্বুলের হাগিয়া সোফিয়া, টপকাপি প্যালেস, সুলতান আহমেদ মসজিদ ইত্যাদিকে ঘিরে আছে শত শত বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। ইউরোপীয় সংস্কৃতির নিদর্শন হিসেবে এখনো টিকে আছে এফেসাস শহরের ধ্বংসাবশেষ।
যথার্থই তুরস্ককে বলা হয় সেই দেশ, যেখানে পূর্ব ও পশ্চিম মিলিত হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে তুরস্কগামী পর্যটকের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত তুরস্ক ভ্রমণের সেরা সময়।
নেপাল
নেপালে সবচেয়ে দর্শনীয় জিনিস হলো হিমালয় পর্বতমালা। কিন্তু মহৎ পর্বতমালাকে পটভূমি বানিয়ে বেড়ে উঠেছে নেপালের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি। কাঠমান্ডু শহরজুড়ে দেখা যায় সারি সারি কাঠের কারুকাজ করা মন্দির এবং ধূপকাঠির ঘ্রাণ।
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পর্বতমালা বাংলাদেশের এতটা কাছে অবস্থিত—এটা আসলেই সৌভাগ্যের ব্যাপার। নেপাল ঘুরে আসার সেরা সময় হলো অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত।
ভারত
বরাবরই বাংলাদেশিদের কাছে ভারত খুব জনপ্রিয় একটি ভ্রমণের গন্তব্য। রাজস্থান, দিল্লি, জয়পুর ইত্যাদি শহরগুলোয় আছে পৃথিবীর প্রাচীনতম কিছু মন্দির। আগ্রায় আছে পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের একটি—তাজমহল। প্রতিবেশী দেশ হওয়ায় সড়কপথেই অল্প খরচে ভারতে পৌঁছে যাওয়া সম্ভব। আর ভারতে ভ্রমণের সেরা সময় অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত।
সমুদ্রসৈকত উপভোগ করতে চাইলে...
যদি পরিষ্কার নীল সমুদ্রসৈকত দেখে আরামে কয়েকটি দিন কাটাতে যদি ইচ্ছে করে, তাহলে নির্দ্বিধায় বাছাই করতে পারেন এই গন্তব্যগুলো—
মালদ্বীপ
দক্ষিণ এশিয়ার এই বলয়ে মালদ্বীপের মতো ফিরোজা নীল পানি এবং ঝকঝকে সাদা বালু আর কোথাও নেই। ওশেনিয়ার বোরা বোরা কিংবা ফিজি দ্বীপের থেকে কোনো অংশেই কম নয় দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার মালদ্বীপ। খরচ বিবেচনায় বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার জন্য সাধ্যের মধ্যে একটি গন্তব্য মালদ্বীপ।
তবে মালদ্বীপে মূল খরচটা হয় সেখানের পাঁচ তারকা বিলাসবহুল রিসোর্টে। বিশ্বজুড়ে নববিবাহিতদের জন্য মধুচন্দ্রিমার একটি মোক্ষম গন্তব্য এই দেশ। অল্প খরচেও মালদ্বীপের বেশ কিছু স্থানীয় দ্বীপ ঘুরে আসা সম্ভব। মালদ্বীপ ভ্রমণের সেরা সময় নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত।
থাইল্যান্ড
‘ল্যান্ড অব স্মাইলস’ নামে পরিচিত থাইল্যান্ড পর্যটকদের কাছে বরাবরই জনপ্রিয়। উত্তেজনাপূর্ণ শহুরে জীবন আর মুখরোচক খাবারের বাইরেও থাইল্যান্ড প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ। কোঁ সামুই, কোঁ ফাঙ্গান, ফি ফি দ্বীপ ইত্যাদি জায়গার সৌন্দর্য মালদ্বীপের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।
বাংলাদেশ থেকে বেশ কম খরচেই পাওয়া যায় থাইল্যান্ডের ফ্লাইট। বিশেষ করে ভ্রমণের সময়টা সচেতনভাবে বাছাই করলে অনেক খরচ কমানো সম্ভব। থাইল্যান্ড ঘুরে আসার সেরা সময় নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত।
মালয়েশিয়া
পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার, বাতু গুহা, জালান আলোর–এর সুস্বাদু খাবার—এসব শহুরে চাকচিক্যের বাইরেও মালয়েশিয়ায় এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে সুন্দর কিছু সমুদ্রসৈকত আছে। লংকাওয়ে, পেনাং ইত্যাদি এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়। এ ছাড়া দেশটিতে ৮৭৮টি দ্বীপ আছে, যেগুলো গ্রীষ্মকালীন ছুটি কাটানোর জন্য উপযুক্ত। এই দ্বীপপুঞ্জের খ্যাতি ছড়িয়ে রয়েছে বিশ্বজুড়ে।
বাংলাদেশ থেকে কাছাকাছি হওয়ায় পাশ্চাত্যদেশবাসীদের তুলনায় অনেক কম খরচে মালয়েশিয়া ঘুরে আসতে পারেন। এখানে হোটেল এবং অভ্যন্তরীণ জীবনধারণের খরচটাও খুব বেশি নয়। ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাস মালয়েশিয়া ঘুরে আসার সেরা সময়।
শহুরে আমেজ উপভোগের জন্য...
দুবাই
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরটি ধীরে ধীরে পৃথিবীর সেরা ভ্রমণের স্থানগুলোর একটি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে নিয়েছে। উন্নতমানের প্রযুক্তি, আধুনিক স্থাপত্য, পৃথিবীর সবচেয়ে সুউচ্চ ভবন—সবই আছে জাদুর শহরটিতে। দুবাইয়ের দিগন্তজুড়ে দেখা যায় আকর্ষণীয় সব ইমারত।
বাংলাদেশ থেকে অনেকেই দুবাই ঘুরতে যায় প্রতিবছর। এই ভ্রমণ শুধু ব্যবসা বা কাজের জন্যই নয়, বিনোদনের লক্ষ্যেও। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দুবাই ঘুরে আসার সেরা সময়।
সিঙ্গাপুর
দুবাইয়ে মতো সিঙ্গাপুরও একটি ‘বৈশ্বিক শহর’। শুধু আধুনিক আমেজ এবং স্থাপত্য ছাড়াও সিঙ্গাপুরের খাবার পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাতগুলোর একটি। ম্যারিনা বে, গার্ডেনস বাই দ্য বে, চায়না টাউন—ইত্যাদি জায়গা একবার ঘুরে না দেখলেই নয়। সিঙ্গাপুর ভ্রমণের সেরা সময় ডিসেম্বর থেকে জুন মাস।
অতএব আজই পরিকল্পনা ফেলতে পারেন এ বছরে আপনার বিদেশভ্রমণটির। আন্তর্জাতিক ভ্রমণ পরিকল্পনার জন্য এখন প্রয়োজন হয় অনেক সময়ের। সহজে বুকিং করতে চাইলে দেখে নিন গোযায়ান। সম্পূর্ণ অনলাইনেই আপনার ফ্লাইট, হোটেল এবং ট্যুরের যাবতীয় সমাধান পেয়ে যেতে পারবেন এখানে। ভিন্ন ভিন্ন জায়গা থেকে বুকিং করতে সময় এবং কষ্ট—দুটোই প্রয়োজন। তাই ঝটপট অনলাইনে বুক করাটাই আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনার সেরা সমাধান হতে পারে। এ ছাড়া আছে গোযায়ান–এর অ্যাপ, যা বুকিং প্রক্রিয়াটিকে করেছে একেবারেই ঝামেলামুক্ত।
তাই লন্ডন, প্যারিস বা নিউইয়র্কের স্বপ্ন দেখার আগে ঘুরে আসুন পৃথিবীর বৃহত্তম মহাদেশ এশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্যগুলোয়। এখানে সাধ্য ও ইচ্ছা—উভয়েরই মেলবন্ধন হবে।