অস্ট্রেলিয়া কেন তিনটি পতাকা প্রদর্শন করে

ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ডের মূল ভবনের ওপরে উড়ছে পাঁচটি পতাকা
ছবি: লেখক

ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ডের চত্বরটির নাম দ্য গ্রেট কোর্ট। কয়েক দিন আগে এক দুপুরে এই চত্বরে বসেই খেয়াল হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ভবনের ওপরে পতপত করে উড়ছে পাঁচটি পতাকা। এগুলোর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার মূল পতাকা সহজেই চেনা যায়। আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিশান, সেটিও চিনলাম। অন্যগুলোর সঙ্গে আমার পরিচয় নেই। আগেও এমন হয়েছে। ব্রিসবেন শহরে অবস্থিত যত সরকারি স্থাপনায় গেছি, সব জায়গাতেই দেখেছি তিনটি পতাকা। সেদিন কৌতূহল জাগল, এত পতাকা কেন?

পরে তত্ত্বতালাশ করে যা জানলাম, তা বেশ আগ্রহোদ্দীপক। প্রথমে বলা যাক, মূল জাতীয় পতাকার কথা। যেটি আমরা অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট খেলার সময় দেখি। একটু মনে করিয়ে দিই—অস্ট্রেলিয়া ছিল ব্রিটিশ উপনিবেশ। এখনো দেশটির সাংবিধানিক প্রধান ব্রিটেনের রাজা। দেশটির বেশ কিছু মুদ্রায় এখনো প্রয়াত ব্রিটিশ রানি এলিজাবেথের ছবি আছে (পরের নোটগুলোতে হয়তো বর্তমান রাজার ছবি যুক্ত হবে)।

অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় পতাকা

যাহোক অস্ট্রেলিয়ার মূল পতাকায় কিন্তু ব্রিটিশ চিহ্ন আছে। মানে পতাকার ওপরের দিকে বাঁ পাশে আছে ইউনিয়ন জ্যাকের (যুক্তরাজ্যের পতাকা) ছবি। তার নিচে সাত কোণবিশিষ্ট কমনওয়েলথ স্টার। এ ছাড়া আছে সাউদার্ন ক্রসের পাঁচটি উজ্জ্বল নক্ষত্র।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা দপ্তরের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, সভ্যতার শুরুতে ইউরোপীয় অভিযাত্রীরা এ পাঁচটি নক্ষত্র দেখেই দুর্গম সমুদ্রেপথে অস্ট্রেলিয়ায় আসা-যাওয়ার পথ নির্ধারণ করতেন। সে জন্যই এই নক্ষত্রগুলো পতাকায় যুক্ত করা হয়েছে।

দ্বিতীয় যে পতাকাটি আমার নজরে আসে, সেটি দেশটির আদিবাসীদের প্রতিনিধিত্ব করে। ১৯৭১ সালের ১২ জুলাই অ্যাডিলেডের ভিক্টোরিয়া স্কয়ারে প্রথম তোলা হয়েছিল এই পতাকা। ১৯৯৫ সালে এই পতাকাকে দাপ্তরিক স্বীকৃতি দেয় অস্ট্রেলিয়ার সরকার। এই পতাকার মাঝ থেকে ওপরের অংশ কালো। যা আদিবাসীদের অস্তিত্ব নির্দেশ করে। নিচের অংশ লাল, যা প্রকাশ করে কাদামাটির রং। আর মাঝখানের হলুদ বৃত্ত তুলে ধরে সূর্য। অর্থাৎ কালো বর্ণের আদিবাসী জনগোষ্ঠী, পৃথিবীর মাটির রং আর সূর্য—এই মিলে আদি পৃথিবীর সভ্যতা। যা তুলে ধরছে আদিবাসী অস্ট্রেলিয়ানদের পরিচয়।

অস্ট্রেলিয়ার সরকারি স্থাপনায় এই তিনটি পতাকা দেখা যায়

আপনারা সবাই জানেন, অস্ট্রেলিয়া নিজেই একটি মহাদেশ। এর আশপাশে অনেক দ্বীপ। তাসমানিয়া একটি বড় দ্বীপ, অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম অঙ্গরাজ্য। যার রাজধানী হোবার্ট। যেখানে অনেক ক্রিকেট খেলা হয়। গত টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এখানে বাংলাদেশেরও একটা ম্যাচ হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ান গ্রেট রিকি পন্টিং তাসমানিয়ার বাসিন্দা।

যাহোক, এ রকম শত শত দ্বীপবাসীও অস্ট্রেলিয়ার অগ্রগতি ও বিকাশে বড় অবদান রেখেছেন। হাজার বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ার সমাজে অবদান রাখা এই দ্বীপবাসীদের স্বীকৃতি দিতে আরেকটি পতাকা ব্যবহার করে অস্ট্রেলিয়ার সরকার। এই পতাকায় ওপরে ও নিচে দুটি সবুজ প্যানেল আছে। যা দ্বীপবাসীর ভূমির অস্তিত্ব তুলে ধরে। আর মাঝখানের নীল চেম্বার তুলে ধরে সমুদ্রের নীল জলরাশি। কালো দুই রেখা তুলে ধরে দ্বীপবাসীকে। আর পতাকার মাঝখানে আছে সাদা ধারি (নাচের পোশাকের মাথার আবরণ)। তার নিচে একটি পাঁচ কোণ বিশিষ্ট নক্ষত্র। যার মাধ্যমে সমুদ্রের জলযানগুলো দিক ঠিক রাখে। এই পতাকাও আপনি অস্ট্রেলিয়ার সব জায়গায় দেখতে পাবেন। সগৌরবে ওড়ে পতপত করে।

রাহাত মিনহাজ, সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা