২০২২ সালের শেষ সপ্তাহে ঢাকার গণপরিবহনব্যবস্থায় যুক্ত হয় মেট্রোরেল। এরই মধ্যে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সব স্টেশন চালু হয়ে গেছে। এ পথে প্রতিদিন এখন দুই লাখের বেশি মানুষ যাতায়াত করছেন। দ্রুতগতির এই পরিবহনব্যবস্থা আমাদের দেশে নতুন হলেও বিশ্বের জন্য নতুন কিছু নয়। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬২টি দেশের দুই শতাধিক শহরে মেট্রোরেল চালু হয়েছে। সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন বিশ্বের সেরা ১৮ মেট্রোরেল নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এখানে রইল সাতটির কথা।
লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ড
বিশ্বে প্রথম মেট্রোরেল চালু হয় যুক্তরাজ্যের লন্ডনে। ১৮৬৩ সালের জানুয়ারি মাসে লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ড স্টিম ইঞ্জিনচালিত ট্রেন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। ১৮৯০ সালে এটিই হয়ে ওঠে বিশ্বের প্রথম মেট্রোরেল। সে সময় ইঞ্জিনের বদলে বৈদ্যুতিক লাইনের ট্রেন মাটির নিচ দিয়ে চলা শুরু করে। ৪০০ কিলোমিটার যাত্রাপথের এ মেট্রোতে আছে ১১টি লাইন ও ২৭২টি স্টেশন। এর ৪৫ শতাংশ যাত্রাপথ মাটির নিচে। লন্ডনের এই মেট্রোরেল-ব্যবস্থা প্রতিদিন ৪০ লাখের বেশি যাত্রী পরিবহন করে।
বেইজিং মেট্রো
লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ড চালুর এক শতাব্দীর বেশি সময় পর চীনের বেইজিংয়ে চালু হয় মেট্রোরেল। এটি বর্তমানে বিশ্বের দীর্ঘতম ও ব্যস্ততম মেট্রোরেলগুলোর মধ্যে অন্যতম। ১৯৭১ সালে চালু হওয়া এই মেট্রোরেলের যাত্রাপথ ৮৩৫ কিলোমিটার। এতে রয়েছে ২৭টি লাইন ও একটি ম্যাগলেভ রুট। চীনের রাজধানী ও আশপাশের শহরগুলোতে এই মেট্রোর ৪৯০টি স্টেশন রয়েছে। করোনাকালের আগে প্রতিদিন গড়ে এক কোটির বেশি ট্রিপ পরিচালনা করত এই মেট্রোরেল।
মজার বিষয় হলো, এর ছয়টি লাইনে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালকবিহীন মেট্রোরেল চলাচল করে। ২০২৫ সালের মধ্যে এক হাজার কিলোমিটারের বেশি যাত্রাপথকে মেট্রোরেল–ব্যবস্থার আওতায় আনার পরিকল্পনা নিয়েছে বেইজিং।
কোপেনহেগেন মেট্রো
ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে বছরজুড়ে রাত-দিন চলে স্বয়ংক্রিয় মেট্রোরেল। আন্তর্জাতিক মেট্রোরেলের পেশাজীবীদের ভোটে এটি ‘বিশ্বের সেরা মেট্রো’ নির্বাচিত হয়েছে একাধিকবার। ২০০২ সালে প্রথম পর্যায়ে চালু হওয়ার পর ১০০ কোটির বেশি যাত্রী পরিবহন করে।
প্যারিস মেট্রো
ফ্রান্সের প্যারিসে মেট্রোরেল চালু হয় ১৯০০ সালে। এতে রয়েছে ১৬টি লাইন ও ৩০৮টি স্টেশন। যার বেশির ভাগই প্যারিস শহরের সীমানায় অবস্থিত। যা প্যারিস মেট্রোপলিটন নামে পরিচিত, সংক্ষেপে একে বলা হয় প্যারিস মেট্রো। এই যোগাযোগব্যবস্থা জাদুঘর ও আর্ট গ্যালারিসহ প্যারিসের অন্যতম সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলোকেও সংযুক্ত করেছে। প্যারিস মেট্রোর প্রবেশ ছাউনিতে আঁকা আছে ফরাসি স্থপতি ও শিল্পী হেক্টর গুইমারের চিত্রকর্ম।
টোকিও সাবওয়ে
টোকিও সাবওয়ের কথা উঠলেই মনের চোখে ভেসে ওঠে কিছু প্যাসেঞ্জার পুশার বা যাত্রী ধাক্কাদানকারী কর্মীর মুখ। জাপানে এদের বলে ‘ওশিয়া’। টোকিও সাবওয়ে বিশ্বের দ্রুততম পরিবহনব্যবস্থাগুলোর অন্যতম। ১৯২৭ সালে চালু হয়েছে এই মেট্রো ব্যবস্থা। ১৩ লাইনের এ মেট্রোরেলের সঙ্গে যুক্ত ২৮৫ স্টেশন। এই পথে প্রতিদিন প্রায় ৮০ লাখ যাত্রী যাতায়াত করেন।
সিউল মেট্রো
মাটির নিচ দিয়ে মেট্রো যাওয়ার সময় মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক বিঘ্নিত হওয়াই স্বাভাবিক। তবে ব্যতিক্রম সিউলের মেট্রোরেল। আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকা অবস্থায়ও যাত্রীরা নির্বিঘ্নে ফোন কল এবং ইন্টারনেট ব্রাউজিং করতে পারেন।
৩১২ কিলোমিটার যাত্রাপথের এ মেট্রোরেলে রয়েছে ২৮৮টি স্টেশন। এই মেট্রোরেলে প্রতিদিন প্রায় ৭০ লাখ মানুষ যাতায়াত করেন। ১৯৭৪ সালে মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর এটি কোরীয় প্রযুক্তি অন্যতম নিদর্শন হয়ে উঠেছে।
নিউইয়র্ক সিটি সাবওয়ে
নিউইয়র্ক শহর যেমন কখনো ঘুমায় না, ঠিক তেমনই নিউইয়র্কের সিটি সাবওয়ে। বছরের ৩৬৫ দিন, ২৪ ঘণ্টাই চলে এই সাবওয়ে। প্রতিদিন প্রায় ৩৫ লাখ যাত্রী পরিবহন করে এই মেট্রোরেল। এটির নামে সাবওয়ে থাকলেও নিউইয়র্ক সিটি সাবওয়ের বেশির ভাগ অংশ মাটির ওপরে চলে। এটি উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে দীর্ঘ এবং ব্যস্ততম মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক। সেই সঙ্গে বিশ্বের সেরা মেট্রো অপারেশনগুলোর মধ্যে অন্যতম।
তথ্যসূত্র: সিএনএন