বিদেশে বেড়াতে যাওয়ার সময় অনেকে প্রিয় মোটরবাইকটাও সঙ্গে নিতে চান। কিন্তু তার ঝক্কি অনেক। আচ্ছা, ভাড়ায় মোটরবাইক নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর প্রক্রিয়াটাও কি জটিল? এক শব্দে জানতে চাইলে উত্তরটা হবে, না। এতে বরং সুবিধাই বেশি, ভ্রমণ খরচ যেমন ২০-৩০ শতাংশ কমে যায়, তেমনি ভ্রমণটাও হয় উপভোগ্য।
বিদেশে মোটরবাইক ভাড়া নিতে গেলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই থাকতে হবে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স। অনেক দেশে আবার পাসপোর্টের কপি জমা রেখেও বাইক ভাড়া নেওয়া যায়। তবে আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স, বিশেষ করে ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলে ট্রাফিক পুলিশের জরিমানা-সংক্রান্ত উটকো ঝামেলা এড়িয়ে চলতে পারবেন। আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স কীভাবে নেবেন? এ জন্য আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে। এরপর আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য মগবাজারে অবস্থিত বাংলাদেশ অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশনের অফিসে আবেদন করতে হবে। ফি লাগবে ২ হাজার ৫০০ টাকা। আবেদনের ১০-১২ দিনের মধ্যেই তারা ড্রাইভিং লাইসেন্স হস্তান্তর করে থাকে।
দেশের বাইরে বাইক ভাড়া নেওয়ার আগে কিছু জিনিস এবং সম্ভাব্য পরিস্থিতি মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিলে অনেক উটকো ঝামেলা এড়িয়ে চলা যায়। এ ক্ষেত্রে যে কাজগুলো আপনার অবশ্যই করা উচিত—
মোটরবাইকের প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন ব্রেক, ক্লাচ, থ্রটল ঠিকমতো কাজ করছে কি না, প্রথমেই কিছুক্ষণ ট্রায়াল রাইড দিয়ে দেখে নেবেন। কোনো সমস্যা থাকলে মালিককে জানাবেন অথবা সেই বাইক পরিবর্তন করে অন্য বাইক দিতে বলবেন।
মনে রাখবেন, দেশের বাইরে ভাড়া নেওয়া বাইকের দুর্ঘটনাজনিত যেকোনো ক্ষতির জন্য আপনাকে ক্ষতির সমমূল্যে অথবা কখনো কখনো তার চেয়ে বেশি মূল্যে পরিশোধ করতে হতে পারে। অনেক আনাড়ি, এমনকি অনেক প্রশিক্ষিত বাইকারও দেশের বাইরে সম্পূর্ণ অপরিচিত রোড কন্ডিশনে বাইক চালাতে গিয়ে নানা রকম দুর্ঘটনায় পড়ে। সুতরাং আপনি যে বাইক বা স্কুটারটি নিচ্ছেন, তার ক্ষতি হলে সেটা পরিশোধ করার পর্যাপ্ত অর্থ আপনার পকেটে থাকতে হবে।
বাইক ভাড়া করার সময় অবশ্যই আপনার কাছ থেকে বাইকের মালিক কোনো না কোনো পেপার বা আইডি জমা রাখবে। নিশ্চিত হোন, আপনার কাছে সেই পেপার বা আইডি কার্ডের ফটোকপি বা ছবি সংরক্ষিত আছে।
যে বাইক বা স্কুটারটি ভাড়া নিচ্ছেন, সেটির ৩৬০ ডিগ্রি ভিডিও আপনার ফোনে রাখুন এবং তার মালিককে দেখিয়ে রাখুন। না হলে অসাধু মালিকের পাল্লায় পড়ে আগের কোনো দাগের জন্য আপনাকেই জরিমানা পরিশোধ করতে হতে পারে।
যতটা সম্ভব সেফটি গিয়ার ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। আপনার যদি আগে থেকেই বাইক চালানোর পরিকল্পনা থাকে, তাহলে অবশ্যই দেশ থেকে কিছু বেসিক সেফটি গিয়ার, যেমন গ্লাভস, নি গার্ড, ভালো জুতা এসব নিয়ে যান। মনে রাখবেন, দেশের বাইরে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে দেশের মতো অনেককেই সেখানে পাশে পাবেন না, সঙ্গে চিকিৎসার জন্য বাড়তি আর্থিক ব্যাপারগুলো তো আছেই।
যে দেশে যাচ্ছেন, সেই দেশের ট্রাফিক আইন, গাড়ি চলার লেন এসব সম্পর্কে আগে থেকে ধারণা নিয়ে নিন এবং মেনে চলুন। যেমন ভিয়েতনামে গাড়ি চলে ইউরোপের নিয়মে, মানে ডান দিক দিয়ে গাড়ি যায়, বাঁ দিক দিয়ে আসে। সুতরাং ভিয়েতনামে বাইক চালাতে হলে আপনাকে তাদের এই নিয়ম মেনেই চালাতে হবে।
যেখানেই যাবেন, বাইক পার্ক করার নিয়ম মেনে চলবেন। কারণ, সব দেশের পার্কিং নিয়ম আমাদের দেশের মতো না। ভুল জায়গায় পার্কিং করার কারণে আপনাকে বড় অঙ্কের জরিমানা গুনতে হতে পারে।
বাইক যথাসম্ভব নিরাপদ জায়গায় পার্কিং করবেন। মনে রাখবেন, দেশভেদে দেশের বাইরেও কিন্তু বাইক চুরি হয়।
বাইক বা স্কুটার নেওয়ার পর অবশ্যই সেটি প্রতি লিটারে কত কিলোমিটার যায়, জেনে নিন। পর্যাপ্ত জ্বালানি গাড়িতে নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করুন। অন্যথায় অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে যেকোনো জায়গায়ই জ্বালানি শেষ হয়ে যাওয়ায় বিপদে পড়ে যেতে পারেন। সম্ভব হলে বাড়তি কিছু জ্বালানি বোতলে বহন করুন।
গাড়ির অবস্থা ও সিসির ওপর নির্ভর করে একেক দেশে একেক দামে মোটরবাইক বা স্কুটার ভাড়া করতে পারবেন। কম সিসির বাইকের ভাড়া ও কন্ডিশন মোটামুটি থাকলেও বেশি সিসির বাইকগুলো লিটারে যেমন আপনাকে কম মাইলেজ দেবে, সেই সঙ্গে আপনার পকেটের স্বাস্থ্যও খারাপ করে দেবে। প্রতিদিন বাংলাদেশি টাকায় ৫০০ থেকে ৮ হাজার টাকায় আপনি আশপাশের দেশগুলোতে বাইক ভাড়া করতে পারবেন। যত বেশি দিনের জন্য নেবেন, তত খরচ কমে আসবে। আর এশিয়ার বাইরের দেশে বাইক ভাড়া করার ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে তাদের সব নিয়ম মেনে দৈনিক ৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা ভাড়া গুনতে হতে পারে।