বদ্ধ আর স্যাঁতসেঁতে রুমটার ভাড়া চাইল ৬০ ডলার

মাদাগাস্কারে গিয়েছিলেন বাংলাদেশি চার সাইক্লিস্ট। আফ্রিকার দ্বীপরাষ্ট্রটিতে সাইকেলে ঘুরে দারুণ দারুণ সব অভিজ্ঞতা তাঁদের হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতাই সবার সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছেন মুনতাসির মামুন। আজ পড়ুন অষ্টম পর্ব

এসব ঘরে থাকতে ভাড়া চাইল ৬০ ডলার

কোথাও কোনো সাইনবোর্ড দেখছি না। রাস্তা থেকে নেমে কয়েক ফুট ভেতরে এলে একটা ফাঁকা জায়গা। নাক বরাবর দুটি ঘর। তার বাঁয়ে আরেকটি। ঘরগুলো কোথায় দেখেছি দেখেছি বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু কোথায়? এখানে নয়, বাংলাদেশে। ঢাকার মিরপুর রোডে গাবতলীমুখী হয়ে কল্যাণপুরের পরে ডান দিকে হাউস বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটে এমন দুটি ঘর আছে। সেই ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি। প্যারাবোলা বা পরাবৃত্তের মতো গম্বুজ মাটি থেকে শুরু হয়ে, ঘরের ছাদ হয়ে আবার মাটিতে এসে ঠেকেছে। পুরোটা সিমেন্টের ঢালাই। এর নামটা ঠিক জানা নেই। তবে চোখে পড়ার মতো। তখনই ভাবতাম, এমন ঘর আর কোথাও দেখা যায় না কেন। দেখতে তো দারুণ। সেই সময় ফেরোসিমেন্টের পানির ট্যাংকের চল ছিল। তেজগাঁওয়ের টিপরা মেটালের স্টিলের পানির ট্যাংকের বদলে অনেক বাড়ির ছাদে এই ফেরোসিমেন্টের ট্যাংক দেখা যেত। সরকারি ভবন, বিশেষ করে সরকারি কলোনির দালানগুলোতে বেশি দেখা যেত। এই ধনুর মতো ছাদগুলোও কি ফেরোসিমেন্টের? জানা হয়নি আমার কখনো।

মোটিফ হোটেলে যে তিনটা ঘর, সেগুলোর ছাদ প্যারাবোলার বা অধিবৃত্তের মতো। সিমেন্টের পরিবর্তে শণের এগুলো। দেয়াল পাকা। মেঝেও পাকা। হোটেল হোটেল ভাব নেই। তিনটা ঘর আলাদা আলাদা। সামনে জায়গা আছে। ছোট্ট একটা বারান্দাও আছে। দেখতে সুন্দর। নতুন হয়েছে। মনের মতো জায়গা। প্রথমে ভেবেছিলাম এগুলো মনে হয় বসতবাড়ি। দুটো কামরায় তালা দেওয়া। একটা খোলা। তাতে একজন নারী কাজ করছেন। যতটুকু বোঝা গেল, এই কামরায় তিনি পরিবার নিয়ে থাকেন। বাকি দুটো ভাড়া হয়েছে। মোদ্দাকথা, আমরা থাকতে পারছি না। একটা কামরা হলেও নিজেরা ব্যবস্থা করে নিতে পারতাম। কোনো উপায় নেই।

যে খাবারের হোটেল থেকে এসেছিলাম, তাতেই ফিরে গেলাম। এর নাম ফরেস্ট রেস্টুরেন্ট। বড় জায়গা। টিনের চালা। খোলা চারদিকে। কিছু বসার টেবিল। সাইকেল রেখে আমরা বসলাম। ভাবতে হবে কী করা যায় এখন। এখান থেকে পরের গন্তব্য এক দিনের পথ। আমরা পারব না আজ। ৮০ কিলোমিটারের বেশি চালানো হয়ে গেছে এরই মধ্যে। রাস্তা সহজ হলেও শরীরে ক্লান্তি আসছে। তমাসিনা হলো বন্দরনগরী। থাকার অনেক জায়গা। আমাদের পরিকল্পনায় আগামীকাল ওখানে থাকা।

পথের পাশের খাবার হোটেল, নাম ফরেস্ট রেস্টুরেন্ট

এর মাঝে কোনো হোটেল গুগলে পাওয়া যায়নি। তাহলে আমরা চেষ্টা করতে পারতাম। একটা উপায় আছে। পেছনে যে বাসস্টপে হোটেল দেখেছিলাম, তাতে যাওয়া। কিন্তু এই পুরো রাস্তাটা ওঠা। ইচ্ছে করল না। যাওয়া যে যেত না, তা কিন্তু নয়। ঢালের কথা ভেবে মন সায় দিল না।

এই রেস্টুরেন্টে একটা রুম ফাঁকা আছে। আমরা থাকতে চাইলে থাকতে পারি। এটা ভাড়ার জন্য তৈরি নয়। অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। থাকার ব্যবস্থা বলতে একটা চৌকি আছে। বেশি হলে দুজন থাকা যাবে। তোশক আছে কিন্তু গায়ে দেওয়ার কিছু নেই। মশারির কথা বললাম। না, তা-ও নেই। দুজন চৌকিতে থাকতে পারলেও মেঝেতে থাকা কঠিন হবে। তার ওপর মশা। খারাপ রুমে থাকার বিস্তর অভিজ্ঞতা থাকলেও এমন রুমে থাকা হয়নি। একটাই দরজা। কোনো জানালা নেই। সিমেন্টের দেয়াল। একেবারে বদ্ধ আর স্যাঁতসেঁতে। এই রুমের ভাড়া চাইল ৬০ ডলার! আকাশ থেকে পড়লাম। আমরা ভেবেছিলাম পরিস্থিতি বিবেচনায় ভাড়া হয়তো নেবেই না বা নিলেও কম। যেহেতু খেতে হবে এখানেই, তাই থাকার জন্য কম টাকা চাইতেই পারত। কিন্তু একদমই নয়। কমাবে না। (চলবে)