হিমালয় পর্বতমালায় রোমাঞ্চকর ট্রেকিংয়ে যাওয়া বাংলাদেশি পর্যটকদের অন্যতম পছন্দ—অন্নপূর্ণা বেজক্যাম্প। নেপালের এ পথে হাঁটতে হাঁটতেই দেখা যায় হিমালয়ের অপরূপ সৌন্দর্য, উপভোগ করা যায় অতি-উচ্চতায় বসবাসকারী মানুষদের সংস্কৃতি। ট্রেকিংয়ের পুরোটা সময় মুগ্ধ করে মাছাপুছারেসহ বিভিন্ন পর্বতের চূড়া।
পৃথিবীর দশম উচ্চতম পর্বতশিখর অন্নপূর্ণা-১। উচ্চতা ৮ হাজার ৯১ মিটার বা ২৬ হাজার ৫৪৫ ফুট। হিমালয়ের যতগুলো ট্রেকিং রোড আছে, তার মধ্যে অন্নপূর্ণা বেজক্যাম্প (৪ হাজার ১৩০ মিটার) বেশি জনপ্রিয়।
এই ট্রেকে অন্নপূর্ণা বেজক্যাম্প পর্যন্ত পথের বিভিন্ন জায়গায় থাকার জন্য লজ ও টি-হাউস রয়েছে। মোবাইল নেটওর্য়াক না থাকলেও লজগুলোতে ওয়াই–ফাই সুবিধা রয়েছে। ঝুঁকি বলতে শুধু অতি–উচ্চতার আবহাওয়ার সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়ানো। তবে আগেভাগে প্রস্তুতি থাকলে, কিছু নিয়ম মেনে চললে এই ঝুঁকি থেকেও মুক্ত থাকা যায়।
গন্তব্যে পৌঁছে ভিসা
বাংলাদেশি নাগরিকদের অন-অ্যারাইভাল ভিসা দেয় নেপাল। অনলাইনে নেপাল দূতাবাসের ওয়েবসাইটে (https://bd.nepalembassy.gov.np/) ভিসা ফরম পূরণ করে ডাউনলোড করে সঙ্গে নিয়ে গেলেই হলো। ঢাকা থেকে বিমানে ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই পৌঁছে যাওয়া যায় নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। কাছাকাছি সময়ে না কেটে কয়েক মাস আগে টিকিট কেটে রাখলে সাশ্রয়ও হয়।
অন্যদের সঙ্গে যেতে পারেন
নেপালের ভ্রমণ পরিচালনাকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অন্নপূর্ণা বেজক্যাম্প ট্রেকিংয়ের আয়োজন করে থাকে। আগেভাগে দেশ থেকেই তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। এ ছাড়া দেশেও ফেসবুককেন্দ্রিক বিভিন্ন ভ্রমণ পরিচালনাকারী সংস্থা অন্নপূর্ণা বেজক্যাম্প ট্রেকিংয়ের ব্যবস্থা করে থাকে। জনপ্রতি ন্যূনতম ৩৫০ ডলার থেকে শুরু হয় এসব প্যাকেজ।
প্যাকেজের মধ্যে থাকে কাঠমান্ডু থেকে পোখারায় বাসে এবং পোখারা থেকে ঝিনু পর্যন্ত জিপে যাতায়াত। ঝিনু থেকে শুরু হয় ট্রেকিং। পথে হোটেলে ভাগাভাগি করে থাকা। গাইডসহ বেজক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া-আসা এবং তিনবেলা খাবার এই প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত। এর বাইরে পোর্টার নেওয়া, চা–কফি পানসহ আনুষঙ্গিক খরচগুলো নিজেকেই বহন করতে হয়। এই প্যাকেজের আওতায় ঢাকা থেকে কাঠমান্ডু যাতায়াতের বিমানভাড়া অন্তর্ভুক্ত থাকে না। এতে ৭০০ থেকে ৮০০ ডলার খরচ পড়বে।
ভ্রমণ পরিচালনাকারী এমন কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যেতে পারেন। তবে যাওয়ার আগে তাদের সুনাম, প্যাকেজের খুঁটিনাটি সুবিধা, আগে যাঁরা তাদের সঙ্গে ঘুরতে গেছেন, এমন মানুষের রিভিউসহ আয়োজনের বিস্তারিত জেনে নেবেন।
নিজেই যখন আয়োজক
অন্নপূর্ণা বেজক্যাম্প ট্রেক করতে চাইলে চার-পাঁচজনের ছোট গ্রুপে যাওয়া ভালো। এতে কম খরচে ঘুরে আসা যায়। ঢাকা থেকে কাঠমান্ডুতে পৌঁছে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সেরে নিতে হবে। কেনাকাটার পাশাপাশি থাকার জন্যও উত্তম জায়গা থামেল। ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমেই সোজা থামেলে চলে যেতে পারেন।
কাঠমান্ডু থেকে অন্নপূর্ণা কনজারভেশন এরিয়া প্রজেক্টের এন্ট্রি পারমিট সংগ্রহ করতে পারেন। এই পারমিট পোখারা থেকেও নেওয়া যাবে। পারমিটের মূল্য এক হাজার নেপালি রুপি।
কাঠমান্ডুর কাজ শেষে আপনার গন্তব্য হবে পোখারা। অভ্যন্তরীণ বিমানে কাঠমান্ডু থেকে পোখারায় যাওয়া যায়। কম খরচে যেতে চাইলে বাসই ভরসা। কাঠমান্ডুর বালাজো বাসস্ট্যান্ড থেকে পোখারার বাস পাওয়া যায়। ভাড়া ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ নেপালি রুপি। পোখারায় নেমে যেতে হবে ঝিনুতে। এ পথে শেয়ার জিপ পাবেন। খরচ পড়বে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ নেপালি রুপি। ঝিনু থেকে ট্রেকিং শুরু।
অন্নপূর্ণা ট্রেকিংয়ে গাইড নেওয়া জরুরি। অভিজ্ঞ একজন গাইড আপনার ট্রেকিং সহজ ও নিরাপদ করবে। গাইডের খরচ পড়বে দৈনিক ২৫ থেকে ৩৫ ডলার। সঙ্গে থাকা জিনিসপত্র বহনের সঙ্গে পোর্টারও নিতে পারেন। পোর্টারের জন্য খরচ পড়বে দৈনিক ১৫ থেকে ২০ ডলার। খরচ কমাতে পোর্টার ছাড়া নিজেরাই বড় ব্যাকপ্যাকে সব জিনিস বহন করতে পারেন।
কী খাবেন
অন্নপূর্ণা ট্রেইলে প্রায় সব ধরনের খাবারই পাবেন। ভাত, শাকসবজি, ডাল, মাংস, ফ্রাইড রাইস, রুটি, নুডলস, চাউমিন, স্যুপ, চা, কফি। আপনার পছন্দমতো খাবার অর্ডার করলেই হবে। খাবারের দাম পড়বে ৫০০ থেকে ১ হাজার নেপালি রুপি।