নতুন বছরের শুরুতেই ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে অনেকেই যে কাজটা সবার আগে করেন, তা হলো কোন মাসে কত দিন ছুটি—খুঁজে দেখা। সাধারণত বছরের সবচেয়ে বড় ছুটিটা পাওয়া যায় দুই ঈদের সময়। এবারও তা–ই। ঈদুল ফিতরের ছুটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পয়লা বৈশাখের ছুটি। সব মিলিয়ে মোটামুটি আট থেকে দশ দিনের এই লম্বা ছুটিতে ভ্রমণে না বের হলে কি হয়!
বছরের সবচেয়ে বড় ছুটিটা নতুন কোনো জায়গা বা নতুন কোনো দেশ দেখে কাটিয়ে দেওয়ার চিন্তা হয়তো অনেকেই করছেন। তবে কোথায় যাবেন, কীভাবেই–বা যাবেন—তা নিয়ে যাঁরা ভাবনায় আছেন, তাঁদের জন্যই আমাদের এই ধারাবাহিক আয়োজন: ঈদের ছুটিতে ভ্রমণ পরিকল্পনা। এ আয়োজনে থাকবে পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন আকর্ষণীয় দেশ ভ্রমণবিষয়ক পরিকল্পনার বিস্তারিত।
আজ যে দেশটি সম্পর্কে জানাব, সেটি বাংলাদেশের খুব কাছের একটি দেশ নেপাল। নেপালের কথা উঠলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বরফে ঘেরা সারি সারি পাহাড়। অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য নেপাল খুবই উপযুক্ত একটি জায়গা। উঁচু পাহাড়ে ট্রেকিং থেকে শুরু করে প্যারাগ্লাইডিং এবং বাঞ্জি জাম্পিংয়ের মতো দুর্দান্ত সব অ্যাডভেঞ্চার অ্যাকটিভিটির জন্য এক নামে পরিচিত নেপাল। তবে এসব অ্যাকটিভিটি ছাড়াও সব ধরনের ভ্রমণপিপাসুদের জন্যই নেপালে কিছু না কিছু রয়েছে।
ইতিহাসপ্রেমীরা ঘুরে দেখতে পারেন কাঠমান্ডুতে অবস্থিত দরবার স্কয়ার। তৎকালীন রাজাদের আমলে জনসাধারণের একত্রিত হওয়ার জন্য এই দরবার চত্বরকে ব্যবহার করা হতো। ঐতিহাসিক এই জায়গায় পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ায় বেড়েছে দোকান ও মার্কেট। হয়েছে আরও জমজমাট। কাঠমান্ডু শহরের আনাচকানাচ ছড়িয়ে আছে দেখার মতো অনেক মন্দির। এর মধ্যে পশুপতিনাথ মন্দির, স্বয়ম্ভূনাথ মন্দির ও নমো বুদ্ধ মন্দির উল্লেখযোগ্য।
কাঠমান্ডু ঘোরা শেষ করে প্রকৃতিপ্রেমীরা ঘুরে আসতে পারেন পোখারা, নাগারকোট ও বানদিপুর। পোখারায় আছে বহু লেক ও ঝরনা। ফেওয়া লেক পোখারার অন্য রকম সৌন্দর্য। চোখধাঁধানো এই লেকে আরাম করে বোটে ঘুরে বেড়ানো খুবই মনোরম একটি স্মৃতি হয়ে থাকতে পারে। এ ছাড়া সারাংকোট হিল থেকে দেখা যাবে মনে রাখার মতো হিমালয়ের ঝলক।
পোখারাতেই মূলত অ্যাডভেঞ্চার অ্যাকটিভিটিগুলো একসঙ্গে পাওয়া যায়। এর মধ্যে প্যারাগ্লাইডিং অন্যতম। অনেকেই শুধু আকাশে ভেসে থাকার এই রোমাঞ্চকর অনুভূতি নেওয়ার জন্য দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন। পোখারায় হাইকিংয়ের জন্য বেশ কিছু ট্রেইলও রয়েছে। যাঁরা পাহাড় ভালোবাসেন এবং পাহাড়ের জনজীবনে মিশে গিয়ে প্রকৃতি পাহাড়ের রহস্য উদ্ঘাটন করতে চান, তাঁদের জন্য আজীবনের অভিজ্ঞতা হবে এই নেপাল ভ্রমণ।
ঘোরাঘুরির একটা বড় অংশজুড়ে থাকে খাবার। নেপালে গেলেই রাস্তার পাশে ছোট দোকান হোক বা বড় কোনো রেস্তোরাঁ—সবখানেই যে খাবারটা সবাই উপভোগ করেন, তা হলো মোমো। মোমোর স্বাদ না নিয়ে নেপাল থেকে ফেরত আসাটা উচিত হবে না।
যাঁরা একটু ভালো বাজেটের মধ্যে দেশের বাইরে ঘুরে আসতে চান, তাঁদের জন্য নেপাল খুবই উপযুক্ত একটা জায়গা। আর অনেক অ্যাকটিভিটি থাকার কারণে বন্ধুদের সঙ্গে গিয়েও একটা ভালো ট্যুর দেওয়া সম্ভব। নেপালের আরেকটি বড় সুবিধা হলো ‘অন-অ্যারাইভাল ভিসা’। এ জন্য নেপাল দূতাবাসের ওয়েবসাইট থেকে ভিসা অ্যাপ্লিকেশন ফরম পূরণ করলেই হয়ে যাবে। আর নেপালের ফ্লাইট বুকিংয়ের ক্ষেত্রে বুকিং যত তাড়াতাড়ি করা যায়, তত ভালো। কারণ, ভ্রমণের তারিখ ঘনিয়ে এলে দামের মধ্যেও বেশ তারতম্য দেখা যায়। অনলাইন ট্র্যাভেল প্ল্যাটফর্ম গোযায়ান এ ক্ষেত্রে খুবই কাজের হতে পারে। গোযায়ানে একসঙ্গে সব ফ্লাইট ও ফ্লাইটের বিবরণ দেওয়া থাকে, যেখান থেকে ফ্লাইট বাছাই করা খুবই সহজ ও সময় সাশ্রয়ী। নেপাল ভ্রমণ পরিকল্পনার জন্যও গোযায়ানের সাহায্য নিতে পারেন।
তাই, আসন্ন ঈদের ছুটিতে ঘুরতে যাওয়াই যদি মনস্থির করে ফেলেন, তবে এখনই প্রস্তুতির কাজ শুরু করে দেওয়া উচিত।