নতুন বছরের শুরুতেই ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে অনেকেই যে কাজটা সবার আগে করেন, তা হলো কোন মাসে কত দিন ছুটি, তা খুঁজে দেখা। সাধারণত বছরের সবচেয়ে বড় ছুটিটা পাওয়া যায় দুই ঈদের সময়। এবারও তা–ই। ঈদুল ফিতরের ছুটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পয়লা বৈশাখের ছুটি। এই লম্বা ছুটিতে ভ্রমণে না বের হলে কি হয়! তবে কোথায় যাবেন, কীভাবেই–বা যাবেন, তা নিয়ে যাঁরা ভাবনায় আছেন, তাঁদের জন্যই আমাদের এই ধারাবাহিক আয়োজন: ঈদের ছুটিতে ভ্রমণ পরিকল্পনা। এ আয়োজনে থাকছে পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন আকর্ষণীয় দেশ ভ্রমণবিষয়ক পরিকল্পনার বিস্তারিত তথ্য।
বছরের সবচেয়ে বড় ছুটিটি কাটানোর জন্য আজ যে দেশটি বাছাই করা হয়েছে, সেটি জাঁকজমকের শহরখ্যাত দুবাই। সুউচ্চ সব ইমারতে ঢাকা বিশ্বের অন্যতম আধুনিক শহর দুবাইয়ে গেলে দেখা মিলবে অনেক রকম বিস্ময়ের। সব ক্ষেত্রে দুবাইয়ের উত্থান দেখার মতো, যা অন্য অনেক শহর থেকে এটিকে আলাদা করে। এ কারণে দুবাইকে ‘স্বপ্নের শহর’ও বলা হয়।
দুবাই বললেই সবার আগে মাথায় আসে বিশ্বের অন্যতম দর্শনীয় স্থান ‘বুর্জ খলিফা’র নাম। বুর্জ খলিফা বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু দালান। সব রকমের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে এই বুর্জ খলিফায়। দর্শনার্থীরা ১৬৩ তলার ওপরে উঠে পুরো শহরের অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করতে কখনোই ভোলেন না। এ ছাড়া দুবাইয়ের বিখ্যাত ‘দুবাই ফাউন্টেন’ তো রয়েছেই। আশপাশে অনেক রেস্তোরাঁ আছে, যেখানে বসে আপনি এই ফাউন্টেনের শো দেখে অসাধারণ একটি সন্ধ্যা কাটিয়ে ফেলতে পারবেন।
দুবাই শহরের অন্যতম আরেকটি আকর্ষণ হলো ‘মিউজিয়াম অব দ্য ফিউচার’। ভবিষ্যতের সব ধারণা, পণ্য ও সেবা দিয়ে সাজানো এই মিউজিয়াম। এ ধরনের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং রোবোটিকস নিয়ে যাঁদের আগ্রহ আছে বা যাঁরা একটি অদ্ভুত বিশ্বকে আবিষ্কার করতে চান, তাঁরা ঘুরে দেখতে পারেন এই মিউজিয়াম। দুবাইয়ের মিরাকল গার্ডেনে গেলে দেখা যাবে হাজারো ফুল দিয়ে আবৃত একটি কৃত্রিম উড়োজাহাজ। এই মিরাকল গার্ডেনে রয়েছে হাজার রকমের ফুলের সমারোহ। পরিবারসহ ঘুরতে গেলে জায়গাটি সময় কাটানোর জন্য উপযুক্ত।
দুবাই ঘুরতে গেলে বিখ্যাত ‘গ্লোবাল ভিলেজ’ একদমই মিস করা যাবে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যগুলো বিভিন্ন প্যাভিলিয়নের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় এই গ্লোবাল ভিলেজে। খাবারদাবার থেকে শুরু করে কেনাকাটা—সবকিছুই করা যায় এই গ্লোবাল ভিলেজে। কেনাকাটার প্রসঙ্গ এলেই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম শপিং সেন্টার ‘দুবাই মল’–এর কথা না বললেই নয়। দুবাইয়ে ঘুরে দেখার জন্য স্থানের কোনো অভাব নেই। একবার গিয়ে হয়তো সবটা দেখাও সম্ভব নয়। তবে দুবাই ক্রিক, দুবাই মরুভূমি, দুবাই ফ্রেম, দুবাই মেরিনা—এসব জায়গাই মনে রাখার মতো। যেহেতু ছুটিটা এবার বেশ লম্বাই আছে, তাই আশা করা যাচ্ছে, অনেক জায়গায়ই ঘুরে দেখতে পারেন, যদি পরিকল্পনা ভালোভাবে করা হয়।
পরিবার নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার জন্য দুবাই ভালো একটি গন্তব্য। খুব একটা অ্যাকটিভিটিপূর্ণ ভ্রমণে যেতে না চাইলে আরাম করে কিছুদিন কাটানোর জন্য অনেকেই দুবাইকে বেছে নেন। অনেক রকম বড় রেস্তোরাঁ চেইন তো আছেই, সঙ্গে চাইলে বাংলাদেশি রেস্তোরাঁয় গিয়ে দেশের চিরচেনা খাবারও খেতে পারবেন।
দুবাই ভ্রমণের জন্য অবশ্যই আগে থেকে ভিসা করে রাখতে হবে। বাংলাদেশ থেকে দুবাই ভ্রমণ ভিসা করা মোটামুটি সহজই বলা চলে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিজিট ভিসায় একবার দেশে প্রবেশ করলে ৩০ দিন পর্যন্ত থাকা সম্ভব। দুবাই যেতে খুবই কম সময় লাগে। সর্বোচ্চ চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা থেকে দুবাই পৌঁছানো সম্ভব। বেশ কিছু এয়ারলাইনসেই দুবাইয়ের ফ্লাইট বুক করা যায়। এয়ারলাইনসগুলোর সব রকম তথ্য জানার জন্য গোযায়ানের সাহায্য নিতে পারেন। শুধু ফ্লাইটই নয়, দুবাইয়ের বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শনের জন্য যদি মনের মতো ভ্রমণ পরিকল্পনা করতে চান, তাহলেও তা এখান থেকেই করা সম্ভব।
দুবাই ভ্রমণ তুলনামূলকভাবে অন্য সব দেশের চেয়ে কিছুটা ব্যয়বহুলই বলা চলে। তবে সঠিকভাবে পরিকল্পনা করলে কম খরচেও ভালোভাবে ঘুরে আসা সম্ভব। আপনি যদি একটু অন্য রকমভাবে বছরের সবচেয়ে বড় ছুটিটিকে কাজে লাগাতে চান, সে ক্ষেত্রে দুবাই হতে পারে আপনাদের জন্য দারুণ একটি গন্তব্য।