খাতা-কলমে বুদ্ধিমত্তা যাচাই করার একটি পরীক্ষা আছে। যুক্তি, পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ ইত্যাদি বিষয়ে ২৫ থেকে ৩০টি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যে নম্বর পাবেন, সেটিই বলে দেবে আপনার বুদ্ধির মাত্রা। বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত এই পরীক্ষার নাম ‘আইকিউ (ইন্টেলিজেন্স কোশেন্ট) টেস্ট’। তবে পরীক্ষার বাইরেও মানুষের কিছু স্বভাবের ভিত্তিতে বুদ্ধিমত্তা যাচাইয়ের সহজ উপায় বাতলে দিয়েছেন মনস্তাত্ত্বিকেরা। জেনে নিন বুদ্ধিমান ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায় এমন আটটি স্বভাব। নিজের সঙ্গেও মিলিয়ে দেখতে পারেন।
ডারউইনের বিবর্তনতত্ত্ব অনুযায়ী, যোগ্যরাই টিকে থাকেন। যোগ্য তাঁরাই, যাঁরা পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেন। কানাডার পেশাবিষয়ক লেখক শানা লেবোভিটজ বলেন, বুদ্ধিমান তাঁরাই, যাঁরা যেকোনো পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে দ্বিধা করেন না। অনেক বিধিনিষেধ ও জটিলতার মধ্যেও তাঁরা খুঁজে বের করেন উপায়, বলেন মার্কিন সাংবাদিক ডোনা এফ হ্যামেট। সাম্প্রতিক মনস্তাত্ত্বিক গবেষণাগুলোও এ ধারণাকে সমর্থন করে।
বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা আশপাশের বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে চান। তাঁদের মধ্যে অজানাকে জানার একটা আগ্রহ দেখা যায়। পাশাপাশি বুদ্ধিমান লোকেরা ‘আমি জানি না’ বলতে ভয় পান না। কোনো কিছু না জানলে তা নিয়ে প্রশ্ন করতে দ্বিধা করেন না।
চিন্তার আড়ষ্টতা মানুষের জানার পরিধিকে সীমিত করে। জ্ঞানপিপাসু বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা অন্যদের মতামত শুনতে, বিবেচনা করতে এবং প্রয়োজনে গ্রহণ করতেও রাজি থাকেন। মনখোলা চিন্তাধারার কারণে তাঁরা বিকল্প সমাধানও সহজে খুঁজে বের করতে পারেন।
বুদ্ধিমানেরা দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় একান্তই নিজের জন্য বরাদ্দ রাখেন। নানা মনস্তাত্ত্বিক গবেষণায় উঠে এসেছে যে বন্ধু বা আত্মীয়দের মধ্যে সময় কাটানোর চেয়ে নিজের সঙ্গে সময় কাটাতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন বুদ্ধিমানেরা। হয়তো এ জন্যই তাঁদের চিন্তাশক্তিও সূক্ষ্ম হয়। জীবনে কী করছেন, কী করবেন এবং তার ফলাফল কী হতে পারে, এগুলো নিয়ে তাঁরা সর্বদা চিন্তায় থাকেন।
আত্মনিয়ন্ত্রণ ও বুদ্ধিমত্তার মধ্যে একটি যোগসূত্র আছে। ২০০৯ সালের এক গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের দুই ধরনের অর্থ পুরস্কারের মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নিতে বলা হয়; তাৎক্ষণিক নিলে কম টাকা, কিছুদিন বাদে নিলে বেশি টাকা। যাঁরা তৎক্ষণাৎ টাকা পাওয়ার লোভ নিয়ন্ত্রণ করে কিছুদিন বাদে অর্থ নেওয়া বেছে নিয়েছিলেন, বুদ্ধিমত্তায় অন্যদের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন তাঁরা। শুধু তা–ই নয়, বুদ্ধিমানেরা নিজেদের রাগ, ক্ষোভ, বিরক্তি, আনন্দ, ব্যবহার—সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
হাসা এবং হাসাতে পারা মারাত্মক এক গুণ! বুদ্ধিমান ব্যক্তিদের মধ্যে এই গুণ দেখা যায়। নানা দেশের বিজ্ঞানীরাও এ বিষয়ে একমত। খুব সাধারণ কিছুকে খুব মজার করে উপস্থাপন করতে পারেন বুদ্ধিমানেরা।
সংবেদনশীলতা বুদ্ধিমত্তার একটি বিশেষ লক্ষণ। বুদ্ধিমানেরা অন্যের অনুভূতির কদর করতে জানেন। পরিবার কিংবা কাছের মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছা ও অনুভূতিগুলো বুঝতে চেষ্টা করেন তাঁরা। এ ছাড়া তাঁদের মধ্যে নানা মানুষের ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতা জানার প্রবল আগ্রহ দেখা যায়।
বুদ্ধিমানেরা জানেন তাঁরা সমাজের কাজে আসবেন, যেকোনো ইতিবাচক পরিবর্তনে অবদান রাখতে পারবেন। তাই অলস সময় না কাটিয়ে তাঁরা সব সময় চেষ্টা করেন কোনো না কোনো কাজে লেগে থাকতে।
সূত্র: নিউরোস্পা, সাইকোলগস