দরজায় কড়া নাড়ছে নতুন ইংরেজি বছর। নতুন বছর মানেই নতুন দিন ও নতুন আশা। তাই বছরের শুরুতে আমরা প্রায় সবাই নতুন কিছু করার সংকল্প করি, কিন্তু কিছু ভুল আমাদের এই সংকল্পগুলোকে বাস্তব রূপান্তরে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই এসব ভুল সচেতনভাবেই এড়িয়ে যেতে হবে। চলুন, দেখে নেওয়া যাক নতুন বছরে কোন সাতটি ভুল করবেন না।
নতুন বছর মানে নতুন উদ্দীপনা ও নতুন পরিকল্পনা। কিন্তু অনেকেই কিছুদিন পর এসব পরিকল্পনা থেকে সরে আসেন। এর অন্যতম কারণগুলোর একটি মূল্যবান সময় নষ্ট করা। তাই নতুন বছরে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো দ্রুত ও সঠিকভাবে সম্পন্ন করার দিকে মনোযোগ দিন। বছরের শুরুতে ৩৬৫ দিনের পরিকল্পনা না করে প্রতিটি দিনের শুরুতে পরিকল্পনা করুন এবং সে অনুযায়ী কাজ করুন, সুফল পাবেন।
বছরের শুরুতে আমরা অনেক সময় নিজের কাছে অযথা বড় প্রত্যাশা তৈরি করে ফেলি। মনে মনে হয়তো অনেকে বলি, ‘এ বছর সব অর্জন করব’। কিন্তু শেষমেশ এমন পরিকল্পনা স্রেফ ‘হেন করেঙ্গা তেন করেঙ্গা’র মতোই হয়ে যায়, অর্থাৎ কাজের কাজ কিছুই হয় না, কেবল নিজের কাঁধে জমতে থাকে বাড়তি প্রত্যাশার চাপ। তাই বছরের শুরুতে আকাশকুসুম পরিকল্পনা না করাই ভালো। লক্ষ্য স্থির করার সময় নিশ্চিত করুন যে তা স্পষ্ট, নির্দিষ্ট ও বাস্তবসম্মত। যেমন ‘ওজন কমাব’ বলার চেয়ে বলুন, ‘প্রতি সপ্তাহে ১ কেজি ওজন কমানোর জন্য কাজ করব’। মোটকথা, বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারণ করুন এবং ছোট পদক্ষেপে এগিয়ে যান। বড় লক্ষ্য স্থির করে সে অনুযায়ী কাজ না করলে কেবল হতাশাই হতে হবে।
নতুন বছরে নতুন কিছু অর্জনের জন্য অনেকেই নিজের ওপর বাড়তি চাপ দিয়ে ফেলেন। এতে শরীর ও মন উভয়েরই ক্ষতি হতে পারে। লক্ষ্য অর্জনের পথে ‘ধীর চলুন’ নীতিতে আগান। মনে রাখবেন, সবার আগে নিজের শরীর ও মন। স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে যত পরিকল্পনাই করুন, কোনো লাভ হবে না। তাই বাড়তি চাপ না নিয়ে নিজের শরীর ও মনের যত্ন নিন।
নতুন বছরে কিছু পুরোনো বদভ্যাস পরিবর্তন করা জরুরি। এটা আমরা উপলব্ধি করি বলেই বছরের শুরুতে পরিবর্তনের সংকল্পও করি। তবে পুরোনো বদভ্যাস আদতে ছাড়তে পারি না অনেকেই। বাস্তবতা হলো এসব বদভ্যাস আপনার উন্নতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সফল হতে চাইলে পুরোনো বদভ্যাসগুলো থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে। সুতরাং বদভ্যাসগুলো চিহ্নিত করুন এবং পরিবর্তনের জন্য ব্যবস্থা নিন।
নতুন বছরের শুরুতে নিজের জন্য কিছু পরিকল্পনা করা জরুরি। কিন্তু অনেকেই এই পরিকল্পনার সময় অন্যের সঙ্গে নিজের তুলনা করতে শুরু করেন। ‘ও তো আরও ভালো করছে, আমি তো পিছিয়ে পড়ছি’ এমন চিন্তা আপনাকে হতাশ করবে। মনে রাখবেন, আপনার চলার পথ একান্তই নিজের এবং সে পথেই আপনাকে এগিয়ে যেতে হবে। অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা না করে নিজের উন্নতির দিকে মনোযোগ দিন।
দিন যাচ্ছে, ব্যয় বাড়ছে। ফলে ছেলেবেলায় পড়া আপ্তবাক্য ‘আয় বুঝে ব্যয় করো’ সব সময় মনে রাখুন। নতুন বছরে হয়তো বেতন একটু বাড়বে, তাই বলে বেহিসাবী খরচ করে মাস শেষে পকেট ফাঁকা করে ফেলবেন না। আনন্দের সঙ্গে বেঁচে থাকতে হলে শখ কিংবা বিলাসিতারও দরকার আছে, তবে তার আগে নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের দিকে নজর দিন। টাকা খরচ করুন পরিকল্পনা করে, অপ্রয়োজনীয় বিলাসিতা থেকে দূরে থাকুন। সঞ্চয় বাড়ান। একটা বাজেট তৈরি করুন এবং তাতেই সীমাবদ্ধ থাকুন। দীর্ঘমেয়াদে আপনার আর্থিক সুস্থতা বজায় রাখতে এটি অত্যন্ত জরুরি।
নতুন লক্ষ্য এবং কাজের ব্যস্ততায় কখনো কখনো আমরা প্রিয়জনদের সময় দিতে ভুলে যাই। সম্পর্কের গুরুত্বকে অগ্রাধিকার দিন। নিয়মিত সময় বের করে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান। তাঁদের প্রয়োজন ও অনুভূতি যেন আপনার কাছে মূল্যহীন না হয়। প্রিয়জনের আবেগ–অনুভূতির মূল্য দিলে পুরস্কার পাবেন আপনি নিজেই।
নতুন বছর মানে নতুন শুরু, তবে এই নতুন সূচনা যদি ভুল পথে চলে, তাহলে অনেক কিছু হারাতে পারেন। সুতরাং এই সাত ভুল এড়িয়ে চলুন এবং আপনার লক্ষ্য অর্জনের পথে সঠিক সিদ্ধান্ত নিন। নতুন বছর মনের মতো করে সাজিয়ে তুলুন, যাতে প্রতিটি দিনই আরও মূল্যবান হয়ে ওঠে।