ওজন কমাতে খেতে পারেন এই ৯ ধরনের খাবার

ওজন কমাতে গেলে অবচেতন মনে চলে আসে, ‘এটা খাওয়া যাবে না, ওটা খাওয়া যাবে না।’ কিন্তু এটা-ওটা-সেটা বাদ দিতে থাকলে পাতে আর রইল কী! একেবারে না খেয়ে কিংবা খুবই অল্প খাবার খেয়ে দিনযাপন করাটা বাস্তবসম্মত কোনো পদ্ধতি নয়। সুস্থ থাকতে খেতেই হবে। আর খেলেই চলে আসে ক্যালরির হিসাব–নিকাশ।

ওজন কমানোর জন্য জেনেবুঝে ঠিক করতে হবে খাদ্যতালিকা।
মডেল: তুর্যি, ছবি: প্রথম আলো

ওজন কমানোর জন্য আপনাকে এমন খাবার বেছে নিতে হবে, যা হজম হয় ধীরে অর্থাৎ যেসব খাবার খেলে সহজে ক্ষুধা লাগে না। খাবারের পুষ্টিমানের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে, যাতে ওজন কমাতে গিয়ে অপুষ্টিতে না ভোগেন। সাধারণভাবে আমরা জানি, ওজন কমাতে শাকসবজি বা ফলমূল খাওয়া ভালো। তবে সব সবজি বা সব ফলের ক্ষেত্রেই বিষয়টি সত্য নয়। তাই জেনেবুঝে ঠিক করতে হবে খাদ্যতালিকা। তা ছাড়া রান্নার সময়ই খেয়াল রাখতে হবে, অতিরিক্ত তেল যাতে দেওয়া হয়ে না যায়। এমন নানা তথ্য দিয়েছেন ঢাকার গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লায়েড হিউম্যান সায়েন্সের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শম্পা শারমিন খান। তাঁর কাছ থেকেই জেনে নেওয়া যাক, কোন কোন খাবার খেয়ে ওজন কমানো যায়।

লাল আটা, লাল চাল, মোটা চাল

লাল আটা, লাল চাল এবং মোটা চালের তৈরি খাবার খেতে পারেন। এসব খাবার হজম হতে সময় লাগে বেশি। তাই সহজে ক্ষুধা লাগে না।

ওটস

ওটস, যব, ছাতু, বাজরা

চাল, গম, আলুর মতো খাবার থেকেই আমরা রোজ প্রচুর শর্করা গ্রহণ করে ফেলি। এর ফলে আমাদের ওজন বাড়তে থাকে। অথচ ওটস, যব, ছাতু কিংবা বাজরা দিয়ে তৈরি খাবারই হতে পারে শর্করার বিকল্প উৎস; যা খেলে নিয়ন্ত্রণে থাকবে ওজন।

শাকপাতা

ওজন কমাতে বেছে নিতে পারেন যেকোনো শাক। প্রতিদিন পর্যাপ্ত শাক খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা ভালো। কেউ কেউ ভাবেন, রাতের বেলা শাক খেতে হয় না। এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি কিন্তু নেই।

মাটির ওপর জন্মানো সবজি

ওজন কমাতে নানা রকম সবজি খেতে হবে রোজ। পুষ্টিমানেও সবজি অসাধারণ। বিশেষত যেসব সবজির ভেতরটা সাদা, রোজকার খাদ্যতালিকায় অবশ্যই সেগুলো রাখতে চেষ্টা করুন। তবে ওজন কমানোর জন্য এমন সবজি বেছে নিন, যেগুলো মাটির ওপর জন্মায়। আলু, গাজর বা মুলার মতো সবজি খেলে কিন্তু ওজন বাড়বে। এ ধরনের সবজি বাদ দিয়ে অন্যান্য সবজির কাঁচা সালাদও খেতে পারেন। তবে সবজিকে মুখরোচক করতে পাকোড়ার মতো ভাজাপোড়া খাবার কিংবা মেয়নিজ মেশানো সবজির স্যান্ডউইচ খাবেন না যেন। তাতে ক্যালরির পরিমাণ বেড়ে যাবে। মিশ্র সবজির পদে মিষ্টিকুমড়া রাখতে পারেন। কিন্তু কেবল মিষ্টিকুমড়া দিয়েই তৈরি পদ খাবেন না, তাতে ক্যালরির পরিমাণ বাড়বে।

ডায়েটে শর্করা, তেলজাতীয় খাবার আর ভাজাপোড়া কমিয়ে বাড়ান ফলের পরিমাণ

ফল

সারা দিনে নানা রকম ফল খেতে পারেন। তবে মিষ্টি ফল এড়িয়ে চলুন। টক এবং পানসে ফল খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণেই থাকবে। নাশপাতি, টক বরই, আমড়া, বাঙ্গি—এমন নানা ফলই তাই খেতে পারেন নিশ্চিন্তে।

আমিষজাতীয় খাবার

কেউ কেউ ভাবেন, মাংস খেলে বুঝি ওজন বাড়ে। এ ধারণা কিন্তু ভুল। ওজন বাড়ে চর্বি খেলে। তাই চর্বি ছাড়া মাংস খেতেই পারেন। সারা দিনে একটি ডিম, এক টুকরা মাছ কিংবা মাংস, ২১০-২২০ মিলিলিটার দুধ আর এক কাপ মাঝারি ঘনত্বের ডাল খেলে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের রোজকার আমিষের চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। এই আমিষটুকু সারা দিনে ভাগে ভাগে খেতে পারেন। একবার আমিষজাতীয় খাবার খেলে কিন্তু চট করেই আবার ক্ষুধা লাগে না।

চর্বি ছাড়া মাংস খেতেই পারেন

খেয়াল রাখুন, মাংস বা মাছের সঙ্গে যদি খণ্ড খণ্ড চর্বি থাকে বা জমাটবাঁধা চর্বি থাকে, সেটি অবশ্যই কেটে ফেলে দিতে হবে। তবে মাছের তেল বা তেলতেলে পিঠের চামড়া খেলে ক্ষতি নেই, বরং এতে পাবেন প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। দুধে আবার যেন চিনি দেবেন না। দুধের সঙ্গে হালকা নাশতা হিসেবে বিস্কুট খেতে পছন্দ করেন? ওজন কমাতে চাইলে সেই ইচ্ছাটিকেও বাদ দিতে হবে।

নানা রকম স্যুপ

সবজি বা মুরগির মাংস দিয়ে স্যুপ বানাতে পারেন নানানভাবেই। খেতে বসে শুরুতেই এক বাটি স্যুপ খেয়ে নিলে অন্যান্য খাবার তুলনামূলক কমই খাওয়া হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, স্যুপে যেন কর্নফ্লাওয়ার দেওয়া না হয়। কারণ, কর্নফ্লাওয়ার হলো শর্করা। তাই ক্লিয়ার স্যুপ খাওয়াই ভালো।

স্যামন স্যুপ

চিনাবাদাম

দেশি চিনাবাদাম খেতে পারেন। তবে এক দিনে ৮০-১০০ গ্রামের বেশি নয়। এতেও পাবেন আমিষ এবং ফ্যাটি অ্যাসিড। খোসা ছাড়ানোর পর যে লাল আবরণটি দেখা যায় চিনাবাদামের গায়ে, এই আবরণটি ফেলবেন না।

টক দই

ওজন কমাতে টক দইও খেতে পারেন। সালাদ তৈরিতে কাজে লাগাতে পারেন এই উপকরণ।