জীবন বাঁচাতে বইমেলার আয়োজন

১৫ দিনব্যাপী চলেছে বইমেলা
ছবি: সংগৃহীত

হৃৎপিণ্ডে একটা ছিদ্র নিয়ে জন্মেছে তাহসিন। এক বছর বয়সী এই শিশুটিকে সুস্থ রাখতে তাই হিমশিম খাচ্ছিলেন দরিদ্র মা-বাবা। চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন প্রায় ২ লাখ টাকা। কীভাবে এই টাকার বন্দোবস্ত হবে?

এগিয়ে আসে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাসেবী ও জনকল্যাণমুখী সংগঠন ‘স্বপ্নোত্থান’। সংগঠনটি প্রায় প্রতিবছরই বইমেলার আয়োজন করে। তবে এবারের প্রেক্ষাপট ছিল একেবারেই ভিন্ন। জীবন বাঁচাতে বইকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছে তারা। আগে থেকেই ঠিক ছিল, বই বিক্রি থেকে প্রাপ্ত লাভের টাকা তাহসিনের মা-বাবার হাতে তুলে দেওয়া হবে।

স্বপ্নোত্থানের বইমেলা চলেছে ৩ থেকে ১৭ অক্টোবর। ১৫ দিনের বইমেলায় পাঠক, ক্রেতা, দর্শনার্থীদের কাছে থেকে বেশ ভালো সাড়া পাওয়া গেছে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্যপ্রকৌশল ও চাপ্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষার্থী ও স্বপ্নোত্থানের সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল ইসলাম জানান, বইমেলায় এবার শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি। ক্লাসের ফাঁকে ও ক্লাস শেষে দলবেঁধে এসেছিল সবাই। এ ছাড়া শিক্ষকেরাও এসেছেন।

আয়োজকেরা জানালেন, প্রথমা, সময়, বাতিঘর, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, কথাপ্রকাশ, অনন্যা, শিখা, ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল) সহ দেশের স্বনামধন্য প্রায় সব প্রকাশনীর বই তাদের স্টলে ছিল। ১৫ দিনে বিক্রি হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৫০০ বই, যা থেকে লাভ হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা।

গত ২৯ নভেম্বর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য কবির হোসেন এবং স্বপ্নোত্থানের প্রধান উপদেষ্টা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ আমিনা পারভীনের উপস্থিতিতে তাহসিনের মা-বাবার হাতে টাকা তুলে দেন স্বেচ্ছাসেবীরা। আগামী জানুয়ারিতে তাহসিনের অস্ত্রোপচারের জন্য এই টাকা ব্যয় করা হবে। রেজওয়ানুল বলেন, ‘মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অনুভূতি সব সময় আনন্দদায়ক। তবে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগবে, যেদিন তাহসিন চিকিৎসা শেষ করে হাসিমুখে আমাদের মধ্যে ফিরবে।’

এর আগেও স্বপ্নোত্থান জীবন বাঁচাতে উদ্যোগ নিয়েছে। ২০১৯ সালে ক্যানসার আক্রান্ত শিশু তাওহীদার জন্য ‘স্বপ্নোত্থান চ্যারিটি ফিল্মফেস্ট’, ২০১৯ সালে লিভার ক্যানসার আক্রান্ত শিশু হাফিজুরের জন্য ‘রং তুলিতে রং মাখিয়ে, জীবন বাঁচাই স্বপ্ন দিয়ে’, ২০২২ সালে পায়ুপথের জটিলতায় আক্রান্ত শিশু তানভীরের জন্য ‘স্বপ্নোত্থান পিঠা উৎসব’ এবং ২০২৩ সালে কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজে আক্রান্ত শিশু মর্তুজার জন্য ‘স্বপ্নোত্থান বসন্ত উৎসব’ আয়োজন করেছিল সংগঠনটি।