মামা আমার বাবার কাছ থেকে কৌশলে জমি কবলা করে নেন

পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার।

মিতি সানজানা
মিতি সানজানা

প্রশ্ন: আমার মা যখন মারা যান, তখন আমার বয়স ১ বছর আর আমার বোনের বয়স ৩ বছর। আমরা দুই ভাই বোন আমার মায়ের সম্পত্তির উত্তারিধকারী হই, যা আমার মা তাঁর বাবা (আমাদের নানা) মারা যাওয়ার পর উত্তারিধকার সূত্রে পেয়েছিলেন। আমার বয়স যখন ১২ বা ১৩ বছর, তখন  আমার মামা কৌশলে আমার বাবার কাছ থেকে ৩৮ শতক জমি সাফকবলা করে নেন, যা আমাদের দুই ভাইবোনের নামে রেকর্ড। আমরা সাবালক হয়ে জানতে পারি, সেই জমি ১৯৮৭ সালে পারিবারিক আদালতের অনুমতি ছাড়াই আমার মামা আমার বাবার কাছ থেকে কৌশলে কবলা করে নেন। এখন আমার বয়স ৪৮ বছর এবং আমার বোনের বয়স ৫১ বছর। আমার বাবা জীবিত আছেন। এখন আইনগতভাবে আমরা ওই জমি দাবি করে পাব কি না? যদি পাই, তাহলে আমাদের কী করতে হবে?

রেজা, ঢাকা

উত্তর: আপনাদের বাবা আপনাদের পক্ষে ওই সম্পত্তি সাফকবলা দলিলের মাধ্যমে আপনার মামার কাছে ১৯৮৭ সালে বিক্রি করেছেন। আপনি উল্লেখ করেছেন যে আপনার মামা কৌশলে আপনার বাবার কাছ থেকে সাফকবলা করে নিয়েছেন।

অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইন, ১৮৯০ –এর বিধান অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়স্ক সন্তানকে ‘নাবালক’ বলে বিবেচনা করা হয়। আইন অনুযায়ী তার অভিভাবক হবেন তিনি, যিনি কোনো নাবালকের শরীর অথবা সম্পত্তি অথবা সম্পত্তি ও শরীর উভয়ের তত্ত্বাবধানের এবং তাকে ভরণপোষণ প্রদানে আইনিভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত। আইনে বলা আছে, নাবালকের স্বাভাবিক ও আইনগত অভিভাবক হলেন বাবা।  আপনাদের বাবা অভিভাবক হিসেবে এবং আপনাদের সম্পত্তির তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে আপনাদের পক্ষে সম্পত্তি বিক্রি করেছেন। সে ক্ষেত্রে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।

কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে যদি কোনো লিখিত দলিল বাতিল বা বাতিলযোগ্য হয় এবং একই সঙ্গে সেই ব্যক্তির যদি যুক্তিসংগত আশঙ্কা থাকে যে যদি এই দলিল বলবৎ থাকলে, সেটা তার গুরুতর ক্ষতির কারণ হবে, তখন উক্ত ব্যক্তি যথাযথ এখতিয়ারসম্পন্ন কোর্টে দলিলটি বাতিল বা বাতিলের মামলা করতে পারেন। এই ধরনের মামলাকে দলিল বাতিলের মামলা বলে।

সুনির্দিষ্ট  প্রতিকার  আইন, ১৮৭৭ এর  ৩৯ ধারার  শর্তসমূহ  সাপেক্ষে  যেকোনো দলিল বাতিল ঘোষিত  হতে  পারে।  সাফকবলা দলিলও আইনে বর্ণিত শর্ত অনুযায়ী বাতিল হতে পারে।

তবে তামাদি আইনের ৯১ ধারা অনুযায়ী, সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩৯ ধারায় দলিল বাতিলের মামলা করার অধিকারী ব্যক্তিকে, এই বিষয় অবগত হওয়ার তিন বছরের মধ্যে মামলা করতে হয়।  ক্ষেত্রবিশেষে তামাদি আইনের ১২০ অনুচ্ছেদ অনুসারে ৬ বছরের মধ্যেও মামলা করা যেতে পারে। আপনাদের ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে এই সময়সীমা অতিবাহিত হয়ে গেছে।

পাঠকের প্রশ্ন, বিশেষজ্ঞের উত্তর

 পাঠকের প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে।

ই–মেইল ঠিকানা: adhuna@prothomalo.com (সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’)

ডাক ঠিকানা

প্র অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫। (খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’)  ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA