আইইএলটিএস হলো ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা প্রমাণের একটি পরীক্ষা। অধিকাংশ ভিনদেশি বৃত্তি বা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের পূর্বশর্ত হিসেবেই আইইএলটিএস স্কোর জানতে চায়। তবে পরীক্ষাটি কিছুটা ব্যয়বহুল, প্রস্তুতি নিতেও কারও কারও লম্বা সময় লেগে যায়। তাই অনেকেই এমন বৃত্তির খোঁজ করেন, যেগুলোর আবেদনের জন্য আইইএলটিএস স্কোরের প্রয়োজন হয় না। এমন চার বৃত্তির খবর জানাচ্ছেন জাহিদ হোসাইন খান
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তি নিয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। পার্শ্ববর্তী এই দেশে উচ্চশিক্ষার অন্যতম জনপ্রিয় বৃত্তি আইসিসিআর। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনস (আইসিসিআর) বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের এই বৃত্তি দেয়। মেডিসিন, প্যারামেডিকেল, ফ্যাশন, আইন ইত্যাদি কোর্স বাদে ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বৃত্তির জন্য আবেদন করা যায়। স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে পড়ার জন্য আবেদনকারীর বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে হতে হয়। পিএইচডি করতে চাইলে সর্বনিম্ন বয়সসীমা ৪৫।
এই বৃত্তির ক্ষেত্রে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ইংরেজির দক্ষতা প্রমাণের জন্য ৫০০ শব্দে একটি প্রবন্ধ লিখতে হয়। টোয়েফল বা আইইএলটিএস স্কোরও জমা দিতে পারেন, তবে তা বাধ্যতামূলক নয়। মনে রাখবেন, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের নম্বরপত্রও ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হবে। তাই নম্বরপত্র বা সনদগুলো বাংলায় হয়ে থাকলে আপনাকে ইংরেজিতে রূপান্তর করে নিতে হবে। এই শিক্ষাবৃত্তির অধীনে মাসিক ভাতাও দেওয়া হয়। মাসিক ভাতার পরিমাণ নির্ভর করে কোর্সের ধরনের ওপর। সাধারণত স্নাতকের শিক্ষার্থীরা ১৮ হাজার রুপি, স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীরা ২০ হাজার রুপি, পিএইচডি শিক্ষার্থীরা ২২ হাজার রুপি এবং পোস্টডক্টরেট শিক্ষার্থীরা ২৫ হাজার রুপি করে পান। বৃত্তিপ্রাপ্তদের কোনো টিউশন ফি দিতে হয় না। বৃত্তির জন্য আলাদা কোনো আবেদনমূল্যও নেই।
বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন এখানে।
স্নাতক, স্নাতকোত্তর বা পিএইচডির জন্য বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থীই আজকাল রাশিয়া যাচ্ছে। কেননা রাশিয়ায় শিক্ষার ব্যয় তুলনামূলক কম। আবেদনের জন্য টোয়েফল বা আইইএলটিএস লাগে না। রাশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞান, কলা ও বাণিজ্য শাখার সব বিষয়ে পড়ার সুযোগ আছে। ব্যাচেলর ডিগ্রির মেয়াদ চার বছর, মাস্টার্স ডিগ্রির মেয়াদ দুই বছর, বিশেষায়িত ডিপ্লোমার মেয়াদ পাঁচ-ছয় বছর।
রাশিয়ায় শিক্ষাজীবন শুরুর আগে রুশ ভাষা শিখে নেওয়ার সুযোগ আছে। ইংরেজি ভাষায় পড়ারও সুযোগ আছে। দেশটিতে শিক্ষাবর্ষ শুরু হয় সেপ্টেম্বরে। একেকটি শিক্ষাবর্ষ ২ সেমিস্টারে বিভক্ত। প্রথমটি সেপ্টেম্বরে এবং দ্বিতীয়টি ফেব্রুয়ারিতে। সেমিস্টার বিরতির সময় শিক্ষার্থীরা খণ্ডকালীন চাকরিও করতে পারেন। বিজ্ঞান বিভাগের জন্য রাশিয়ায় বাৎসরিক টিউশন ফি ২ থেকে ৭ হাজার ডলার। মানবিক বিভাগের জন্য ৩ হাজার ২০০ থেকে ৫ হাজার ডলার। বাণিজ্য বিভাগের জন্য ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার ডলার। রাজধানী মস্কোর বাইরে টিউশন ফি আরও কম। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য গড় নম্বর থাকতে হবে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ। ঢাকার রাশিয়ান হাউস থেকে বৃত্তির খোঁজখবর পাওয়া যাবে। উচ্চমাধ্যমিকে ৮০ শতাংশ নম্বর পেলে বৃত্তির জন্য আবেদন করা যায়।
বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন এখানে।
তুরস্ক সরকার সারা পৃথিবীর শিক্ষার্থীদের জন্যই একটি বৃত্তি দেয়। পৃথিবীর প্রায় ১৮০টি দেশ থেকে এই শিক্ষাবৃত্তির জন্য আবেদন জমা পড়ে। বৃত্তিপ্রাপ্তরা তুরস্কের ৫৫টি শহরে প্রতিষ্ঠিত শতাধিক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান। বৃত্তির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও টিউশন ফি, এক বছরের ভাষা কোর্স, আবাসন ও খাবার, স্বাস্থ্যবিমা, মাসিক সম্মানী ভাতা মিলবে। আবেদন করতে হলে স্নাতকের জন্য এসএসসি বা সমমান ও এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় ৭০ শতাংশ এবং স্নাতকোত্তর-পিএইচডির জন্য স্নাতক-স্নাতকোত্তরে ৭৫ শতাংশ নম্বর থাকতে হয়। আইইএলটিএস স্কোর প্রয়োজন হয় না। আর মেডিকেলে ভর্তি হতে চাইলে ৯০ শতাংশ নম্বর লাগে। তুরস্কে পড়াশোনার ভাষা তুর্কি হলেও কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ইংরেজিতে পড়ার সুযোগ আছে।
স্নাতকের জন্য আবেদন করতে গেলে বয়স হতে হবে ২১ বছরের নিচে। স্নাতকোত্তরে ৩০ এবং পিএইচডির ক্ষেত্রে বয়সসীমা ৩৫ বলা আছে। আবেদনের জন্য ছবি, পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মসনদের স্ক্যান কপি, এসএসসি বা দাখিল এবং এইচএসসি বা আলিমের মূল সনদ ও মার্কশিটের স্ক্যান কপি, সব পরীক্ষার সনদ, সব পরীক্ষার মার্কশিট, দুটি সুপারিশপত্রসহ (রেফারেন্স লেটার) সহশিক্ষা কার্যক্রমে অভিজ্ঞতার সনদ জমা দিতে হয়।
স্নাতকে বৃত্তির জন্য এসএসসি বা সমমান এবং এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় ৭০ শতাংশ এবং স্নাতকোত্তর-পিএইচডির জন্য স্নাতক-স্নাতকোত্তরে ৭৫ শতাংশ নম্বর থাকতে হয়। তুরস্কের শিক্ষাবৃত্তির জন্য আবেদন করতে হয় অনলাইনে। আর আবেদনের পুরো প্রক্রিয়াই সম্পন্ন করা যায় বিনা মূল্যে।
আবেদন করতে ক্লিক করুন এখানে।
পড়ালেখার মানের কারণে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অন্যতম পছন্দের দেশ জাপান। দেশটিও বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন বৃত্তি দেয়। জাপান সরকারের নানা বৃত্তির মধ্যে একটি জনপ্রিয় বৃত্তি হলো মেক্সট স্কলারশিপ। এ বৃত্তির মাধ্যমে টিউশন ফি ছাড়াই জাপানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে পারেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা। স্নাতকোত্তরের সময়সীমা দুই বছর ও পিএইচডির জন্য সময় তিন বছর। আবেদন বা ভর্তির জন্য কোনো ফি লাগে না। মাসিক উপবৃত্তি, বিমানে যাতায়াত খরচসহ নানা সুযোগ-সুবিধা আছে। আইইএলটিএস বা টোয়েফল সনদ ছাড়াই আবেদন করতে পারেন, তবে জাপানি ভাষায় দক্ষতার সনদ থাকলে আপনি এগিয়ে থাকবেন।
জাপানে যাওয়া-আসার বিমান খরচও মেক্সট বৃত্তির আওতায় পড়ে। অধিকাংশ বৃত্তির ক্ষেত্রেই সুবিধাটি পাওয়া যায় না। তাই উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে খরচ যাঁদের ভাবাচ্ছে, তাঁরা মেক্সট বৃত্তির খোঁজখবর নিতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো রকম টিউশন ফি, পরীক্ষা ফি বা অন্যান্য কোনো ফি দিতে হয় না। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর যাবতীয় ফি মওকুফ করে। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি ও অন্যান্য ব্যয়ভার বহন করে দেশটির শিক্ষা ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, আর্থ সায়েন্স, যন্ত্রকৌশল, সিস্টেম অ্যান্ড কন্ট্রোল ইঞ্জিনিয়ারিং, তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস কৌশল, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংসহ নানা বিষয়ে পড়ার সুযোগ আছে। বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বৃত্তির জন্য আবেদন করতে হয়।
বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন এখানে।