টেক্সাসে যেভাবে বসন্ত নেমে এল

দেশ থেকে প্রায় ৯ হাজার মাইল দূরে টেক্সাসের আরভিং মিডল স্কুলে অনুষ্ঠিত এই বসন্ত উৎসব হয়ে উঠেছিল এক টুকরা বাংলাদেশ
ছবি: সংগৃহীত

ভেন্যুতে প্রবেশ করতেই দেখা গেল বাসন্তী রঙের আধিপত্য। আরেকটু এগিয়ে মিলনায়তনে পা রেখে দেখা গেল বিশাল মঞ্চ, সারি সারি ভ্রাম্যমাণ দোকান আর বহু দর্শনার্থী। কেউ খাচ্ছেন দেশীয় খাবার, কেউ আবার শাড়ি কিংবা দেশীয় অন্য কোনো পণ্য কেনায় ব্যস্ত। মঞ্চে তখন চলছে দেশীয় ধাঁচের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ১০ ফেব্রুয়ারি দেশ থেকে প্রায় ৯ হাজার মাইল দূরে টেক্সাসের আরভিং মিডল স্কুলে অনুষ্ঠিত এই বসন্ত উৎসব হয়ে উঠেছিল এক টুকরা বাংলাদেশ।
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ডালাস শহরে ৪০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশির বসবাস। ডালাস-ফোর্ট ওয়ার্থ মেট্রোপ্লেক্সের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের এই আয়োজন এখানকার পুরো বাঙালি কমিউনিটির অন্যতম আনন্দোৎসবে রূপ নিয়েছে। গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে হওয়া এই আয়োজনের অপেক্ষায় থাকেন সবাই। তবে উৎসবটি শুধু আনন্দের উৎসই নয়, নিজেদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ধরে রাখার এক প্রচেষ্টা।

নর্থ টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র রাদ বিন ওয়াদুদ পেশায় একজন কম্পিউটার প্রকৌশলী। অনুষ্ঠানে তিনি বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মঞ্চে পারফর্ম করেন। তিনি বলেন, ‘বসন্তবরণ উৎসবে গান, নাচ থেকে শুরু করে সুস্বাদু খাবারের আয়োজনে আমাদের সংস্কৃতি ফুটে ওঠে। আমি প্রতিবছরই এই আয়োজনের অপেক্ষা করি।’
এবারের আয়োজনের অন্যতম আকর্ষণ ছিলেন জনপ্রিয় গায়ক এস আই টুটুল। মঞ্চে তাঁকে সঙ্গ দিয়েছেন ডিজে রাহাত। এস আই টুটুল নিজের মৌলিক গানের পাশাপাশি গেয়েছেন আইয়ুব বাচ্চুসহ বেশ কয়েকজন শিল্পীর গান। দর্শকদের মাতিয়ে রেখেছেন অনুষ্ঠানের শেষ পর্যন্ত।

বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য-সম্পর্কিত আর্টওয়ার্ক-সংবলিত বিভিন্ন বুকমার্ক, পোস্টকার্ড, নোটবুক, স্টিকারসহ নানা পণ্য ছিল এই স্টলে


উৎসবে দেখা মেলে নানা ধরনের ভ্রাম্যমাণ স্টলের। দেশীয় খাবার থেকে শুরু করে জামাকাপড়, জুয়েলারিসহ নানা পণ্য ছিল সেখানে।
এমনই এক স্টল আর্ট্রো। এখানে ছিল বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য-সম্পর্কিত আর্টওয়ার্ক-সংবলিত বিভিন্ন বুকমার্ক, পোস্টকার্ড, নোটবুক, স্টিকারসহ নানা পণ্য। আর্ট্রোর মালিক সিরাজাম মুনিরা বলেন, ‘বুথটির মূল উদ্দেশ্য আমাদের সংস্কৃতি ও ইতিহাসকে ছোট পরিসরে তুলে ধরা। আমাদের পণ্যগুলোর ডিজাইন এখানকার বাংলাদেশি আর্টিস্টরাই করেছেন। চেষ্টা করেছি সব পণ্যে দেশীয় ছোঁয়া রাখতে।’


দেশীয় রান্নায় ব্যবহৃত বিভিন্ন মসলার দেখা মিলল ‘দেশি স্বাদ’ স্টলে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী ফয়সাল মাহমুদ জানান, তাঁদের সব মসলাই বাংলাদেশে উৎপাদিত এবং এফডিএ অনুমোদিত। বসন্তবরণে কেমন সাড়া পেয়েছেন জানতে চাইলে বলেন, ‘এখানকার বাংলাদেশি কমিউনিটিতে বসন্তবরণ উৎসবের আলাদা গ্রহণযোগ্যতা আছে। বিভিন্ন পেশা, বয়সের প্রচুর মানুষ এখানে আসেন। আমরা বেশ সাড়া পেয়েছি তাঁদের কাছ থেকে।’

দেশীয় পোশাকের স্টলও চোখে পড়ল এ আয়োজনে

মূলত তরুণদের আয়োজন হলেও বসন্তবরণ উৎসবে বরাবরই বিভিন্ন বয়সের দর্শনার্থী হাজির হন। আয়োজকদের একজন বলেন, ‘এই আয়োজনকে আমরা বিদেশের মাটিতে নিজেদের সংস্কৃতি ধরে রাখার একটা প্রচেষ্টা হিসেবে দেখি। পরের প্রজন্মের পাশাপাশি এখানকার অন্যান্য সংস্কৃতির মানুষকেও আমাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানানোর একটা প্রচেষ্টা এটি। ২০১৪ সালে শুরু হওয়া এই আয়োজনে প্রতিবছরই কিছু না কিছু পরিবর্তন এসেছে। প্রতিবছরই আমরা আগের চেয়ে ভালো আয়োজন উপহার দিতে পেরেছি। আগামী বসন্তে এই আয়োজনের এক যুগ পূর্তি হবে। এ নিয়ে বেশ কিছু পরিকল্পনা আছে আমাদের।’