আনন্দের সঙ্গে কি অর্থের যোগ আছে? আছে বৈকি। কতটা? ঠিক ততটাও নয়, যতটা মনে করা হয়। আনন্দ-ফূর্তি উদ্যাপনে অতিরিক্ত অর্থব্যয় নেহাতই অপচয়। আনন্দ ও মিতব্যয়িতা দিব্যি হাত ধরে পাশাপাশি চলতে পারে। কম খরচেও খরিদ করা যেতে পারে উচ্ছ্বল আনন্দ।
অবশ্য অনেকেই হয়তো এর সঙ্গে দ্বিমত করবেন। খুব স্বাভাবিক। আমাদের সমাজবাস্তবতাই এমন যে এখানে অর্থ খরচকে আনন্দের সমার্থক বলে ভাবা হয়। ফলে ভালো সময় কাটানোর জন্য অর্থ খরচ করতে হবে—মানুষের মধ্যে এ রকম একটা ধারণা চালু আছে। অথচ মৌলিক সত্যটা কিন্তু একদমই বিপরীত।
ব্যাংক হিসাব কিংবা পকেটের ওপর বাড়তি চাপ না দিয়েও নির্মল সুখ পাওয়া সম্ভব। পুরো ব্যাপারটাই নির্ভর করছে, আপনি অর্থব্যয়ের ক্ষেত্রে কতটা চৌকস ও বুদ্ধিদীপ্ত তার ওপর। দৈনন্দিন জীবনযাপনে কোথায় কতটুকু খরচ করা উচিত, ব্যবহার্য পণ্যসামগ্রী বাছাই ও ক্রয়ে কতটুকু মিতব্যয়ী হওয়া দরকার, প্রয়োজনীয়তা-অপ্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে যথার্থ বিবেচনা-বোধ—এসব বিষয়ই মূলত আপনার প্রাত্যহিক আনন্দের সঙ্গে অর্থের সমীকরণ নির্ধারণ করে দেবে। মিতব্যয়িতা মানে কিন্তু কোনোভাবেই কৃপণতা নয়। বরং ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে টাকাপয়সার এমন বিবেচনাপ্রসূত ব্যবহার নিশ্চিত করা, যা নিয়ে আসবে সত্যিকারের সুখ ও সমৃদ্ধি।
তবে এই প্রলোভনমুখী বাজারব্যবস্থায় মিতব্যয়ী হওয়াটা সহজ নয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষের বিলাসী জীবনের চিত্র, বাহারি বিজ্ঞাপনের ছড়াছড়ি আমাদের সামনে অপচয়ের রঙিন ফাঁদ পেতে রেখেছে। ফলে ধারদেনা করে হলেও অর্থের বিনিময়ে চাই সুখ।
আজ ৫ অক্টোবর, মিতব্যয়ী আনন্দ (কম খরচে আনন্দ) দিবস। ১৯৯৯ সালে আমেরিকান লেখক শেল হরোভিৎজ উদ্যোগে দিনটি চালু হয়। অতিরিক্ত অর্থব্যয় না করে জীবন উপভোগ করার ব্যাপারে মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে এই দিবসের প্রবর্তন করেন তিনি। তবে এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে পরিবেশ সচেতনতাও। পরিবেশ বাঁচাতে প্রাকৃতিক সম্পদের পুনর্ব্যবহার করে যেমন অর্থ বাঁচানো সম্ভব, তেমনই প্রয়োজন মেটানোও সম্ভব। দিবসটি তাহলে পালন করা যাক। অল্প খরচে কিংবা বিনা খরচে কাটুক একটা আনন্দময় দিন। কম খরচে আনন্দ কীভাবে পাওয়া যেতে পারে? মুক্ত প্রকৃতিতে বেরিয়ে পড়ুন। পার্কে হাঁটুন। ঘরোয়া আয়োজনে করতে পারেন রান্নাবান্না। সামাজিক কার্যক্রম কিংবা স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমেও পেতে পারেন নির্মল আনন্দ। এবার নিজের মতো করে আরও কিছু ভাবুন।
ডেজ অব দ্য ইয়ার অবলম্বনে