যে ৫টি অতিমূল্যবান নিদর্শন ছাড়া রাজার অভিষেক হয় না

রাজা হিসেবে আজ আনুষ্ঠানিকভাবে সিংহাসনে আরোহণ করেছেন ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস। ব্রিটিশ রাজার অভিষেক অনুষ্ঠান দুনিয়ার অন্যতম প্রাচীন অনুষ্ঠান। তাই পুরো আয়োজনে থাকে তারই ছাপ। মানা হয় নানা আনুষ্ঠানিকতা। যার মধ্যে রেগালিয়া বা রাজনিদর্শনের (যেমন মুকুট, রাজদণ্ড, রাজগোলক) ব্যবহার অন্যতম। ঐতিহ্যবাহী পাঁচটি রাজনিদর্শনের খোঁজখবর করেছেন আবৃত্তি আহমেদ

১. চামচ

চামচ

৬০০ বছরেরও বেশি আগে ব্রিটিশ রাজপরিবারের সংগ্রহে আসে চামচটি। তবে রাজার অভিষেক অনুষ্ঠানের অংশ হয় ১৬০৩ সালে রাজা প্রথম জেমসের সিংহাসনে আরোহণের সময়। কারুকার্যখচিত রুপায় মোড়ানো চামচটি লম্বায় সাড়ে ১০ ইঞ্চি। এই চামচের ব্যবহার রাজ্যাভিষেকের সবচেয়ে পবিত্র অংশ হিসেবেও মনে করা হয়। কারণ, জেরুজালেম থেকে আনা জলপাইয়ের তেল এই চামচে ঢেলেই আর্চবিশপ রাজার হাত, বুক ও মাথায় ছোঁয়ান।

২. সেইন্ট এডওয়ার্ডের মুকুট

সেইন্ট এডওয়ার্ডের মুকুটটি শুধুই রাজ্যাভিষেকের সময় রাজা বা রানির মাথায় শোভা পায়

ব্রিটিশ রাজতন্ত্রে বেশ কটি মুকুট আছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সেইন্ট এডওয়ার্ডের মুকুট। শুধুই রাজ্যাভিষেকের সময় এটি রাজা বা রানির মাথায় শোভা পায়। মূল মুকুটটি ১১ শতকে সেইন্ট এডওয়ার্ডের ছিল বলে মনে করা হয়। ইংরেজ গৃহযুদ্ধের সময় তা ধ্বংস হয়ে যায়। ১৬৬১ সালে দ্বিতীয় চার্লসের রাজ্যাভিষেকের জন্য ঠিক একই রকম আরেকটা মুকুট বানাতে হয়েছিল। এখনকার মুকুটটিও একটি শক্ত সোনার কাঠামোর ওপর বসানো। ১৯১১ সালে পঞ্চম জর্জ এই মুকুটে স্থায়ীভাবে রুবি, অ্যামেথিস্ট, নীলকান্তমণি, গারনেট, পোখরাজ, ট্যুরমালাইনসহ মূল্যবান সব পাথর বসিয়েছিলেন। এর ওজন প্রায় ৫ পাউন্ড বা ২ কেজি ২৩ গ্রাম।

৩. রাজ্যাভিষেকের চেয়ার

রাজ্যাভিষেকের চেয়ারের সামনে রাখা স্কটিশ সার্বভৌমত্বের প্রতীক ‘স্টোন অব স্কন’

এই চেয়ার তৈরি হয়েছে ব্রিটিশ রাজা-রানির অভিষেকের সময় বসার জন্যই। ব্রিটিশ রাজারা প্রথমবার মুকুট পরার সময় এই চেয়ারে বসেন। চেয়ারটি তৈরি করা হয়েছিল প্রথম এডওয়ার্ডের অনুরোধে। স্কটিশ সার্বভৌমত্বের প্রতীক ‘স্টোন অব স্কন’-এর সুরক্ষাই ছিল এর উদ্দেশ্য। ১২৯৬ সালে এডওয়ার্ড পাথরটি নিয়ে এসেছিলেন ভবিষ্যতে রাজ্যাভিষেকের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করার কথা ভেবে। চেয়ারটি প্রথম ব্যবহৃত হয় ১৩০৮ সালে, দ্বিতীয় এডওয়ার্ডের রাজ্যাভিষেকের সময়। তবে তা রাজ্যাভিষেকের অংশ ছিল কি না, তা স্পষ্ট নয়। তবে ১৩৯৯ সালে চতুর্থ হেনরি এই চেয়ারে বসেই মাথায় মুকুট পরেছিলেন।

চেয়ারটি ওক কাঠ দিয়ে তৈরি। লম্বায় ২ দশমিক ৫ মিটার। সোনায় মোড়ানো চারটি সিংহ দিয়ে সাজানো এই চেয়ারের পেছনে এডওয়ার্ড দ্য কনফেসার বা প্রথম এডওয়ার্ডের একটি ছবি আছে। একসময় ‘স্টোন অব স্কন’ ছিল চেয়ারের নিচে। পরে তা সরিয়ে ফেলা হয়।

৪. রাজদণ্ড

রাজদণ্ড

‘সার্বভৌমত্বের রাজদণ্ড’ হিসেবে পরিচিত এই রাজদণ্ড লম্বায় ৩৬ ইঞ্চি, ওজন ১ কেজির বেশি। দণ্ডটির মাথায় আছে ক্রুশ, নিচে হৃদয়াকৃতির কাঠামো, তারপর মূল দণ্ড। এই রাজদণ্ডে ব্যবহার করা হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে নিয়ে আসা ‘প্রথম কালিনান’ নামের একটা হীরা। রাজদণ্ড হাতে পাওয়ার পরই রাজার মাথায় মুকুট পরানো হয়।

৫. রাজগোলক

রাজগোলক

রাজার অভিষেক অনুষ্ঠানের সবচেয়ে অদ্ভুত জিনিসটি হলো ক্রুশ স্থাপিত সোনার গোলক। ‘সার্বভৌমত্বের গোলক’ নামে পরিচিত এই রাজনিদর্শনটি ‘রাজার ক্ষমতা ঈশ্বরের কাছ থেকে প্রাপ্ত’—এমন বিশ্বাসের প্রতিনিধিত্ব করে। অভিষেক অনুষ্ঠানে এটি রাজা বা রানির হাতে তুলে দেওয়া হয়। রাজগোলকটির ভেতরটা ফাঁপা হলেও ওজন প্রায় ১ কেজি ৩২ গ্রাম। এতে ৯টি পান্না, ১৮টি রুবি, ৯টি নীলকান্তমণি, ৩৬৫টি হীরা, ৩৭৫টি মুক্তাসহ আছে বিভিন্ন রত্ন।