‘ইলন মাস্কের নট আ বোরিং কম্পিটিশন: ফাইনালে বাংলাদেশ, কিন্তু যাওয়া হবে তো?’—শিরোনামে খবরটা এই ‘স্বপ্ন নিয়ে’ পাতাতেই ছাপা হয়েছিল। সুখবর হলো, বাংলাদেশের দল ‘বোরড টানেলার্স’–এর শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া হয়েছে। মার্চের শেষ সপ্তাহে টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের বাসট্রপে বসেছিল ফাইনালের মহাযজ্ঞ। ফাইনালে সেরা তিনে থাকার পাশাপাশি প্রথম দল হিসেবে সম্মানসূচক ‘রুকি’ পদক জিতেছে আমাদের তরুণ দল। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলের ২০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে গড়া হয়েছে ‘বোরড টানেলার্স’। যাঁদের মধ্যে ৭ জন চূড়ান্ত পর্বে অংশ নিতে গিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে।
নট আ বোরিং কম্পিটিশনের আয়োজক বিখ্যাত ধনকুবের ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান ‘দ্য বোরিং কোম্পানি’। নতুন নতুন চিন্তা ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে মাটির নিচ দিয়ে টানেল তৈরির অত্যাধুনিক যন্ত্র নির্মাণের উদ্দেশ্যে প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে তারা।
২০২১ সাল থেকে ‘নট আ বোরিং কম্পিটিশন’ হয়ে আসছে। দুই ধাপের অনলাইন পর্ব পেরিয়ে ফাইনালে পৌঁছায় সারা বিশ্বের সেরা দশ দল। আট দিনের ফাইনাল পর্বের প্রথম সাত দিন প্রকল্প উপস্থাপনা করতে হয়। সঙ্গে চলে যন্ত্রের নিরাপত্তাসংক্রান্ত পরীক্ষা। অর্থাৎ কাজ করার জন্য যন্ত্রটি প্রস্তুত কি না, তারই যাচাই–বাছাই। শেষ দিনে নিজেদের তৈরি যন্ত্র দিয়ে মাটি খুঁড়ে দেখাতে হয়।
বোরড টানেলার্সের দলনেতা শায়েখ মোহাম্মদ মুঠোফোনে জানালেন, ‘এই ফলাফল নিয়ে আমরা এখনো ঘোরের মধ্যে আছি। সেরা তিনে থাকা আমাদের জন্য অনেক সম্মানের। রুকি পুরস্কার সেই সম্মানকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। আমরাই এশিয়ার প্রথম দল, যারা এই প্রতিযোগিতায় এত ভালো অবস্থানে পৌঁছালাম।’ জানা গেল, প্রতিযোগিতায় প্রথমবার অংশ নিয়েই নিজেদের প্রতিভা ও দক্ষতার প্রমাণ দেওয়ায় বাংলাদেশ দলটিকে ‘রুকি’ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
পৃষ্ঠপোষকতা পেতে বোরড টানেলার্সকে কিন্তু বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। যন্ত্র নির্মাণে কারিগরি সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক)। পরে গিগাবাইট ও সুপার স্টার গ্রুপও পৃষ্ঠপোষক হিসেবে যোগ হয়েছে। তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সহ–দলনেতা এম শাহরিয়ার ইকবাল বলেন, ‘শুরুর দিকে আমরা প্রত্যেক সদস্য নিজেদের সাধ্যমতো টাকা দিয়ে যন্ত্রটা দাঁড় করিয়েছি। পর্যাপ্ত টাকার অভাবে কিছু অংশ সম্পূর্ণ করা হয়ে ওঠেনি। যন্ত্রটি যুক্তরাষ্ট্রে নিতেও অনেক ঝক্কি পোহাতে হয়েছে। টাকার অভাবে যন্ত্রাংশগুলো ভাগ করে নিজেদের লাগেজে করে নিতে হয়েছে।’
‘বোরড টানেলার্স’–এর তৈরি খননযন্ত্রটি (টিবিএম) দেশের কাজেও লাগবে বলে বিশ্বাস করেন এর নির্মাতারা। ওয়াসার পানির লাইনের জন্য খনন পরিচালনা করা, নিষ্কাশনব্যবস্থায় কাজ করাসহ নানা খননকাজে ব্যবহৃত হতে পারে এই যন্ত্র। দলের প্রযুক্তি প্রধান ফাহিন উদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশের বেসামরিক অবকাঠামো খাত ব্যাপকভাবে কায়িক শ্রমনির্ভর। অপর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থার কারণে অনেককেই ঝুঁকিতে থাকতে হয়। বোরড টানেলার্সের লক্ষ্য হলো টানেলিং প্রক্রিয়ায় নিরাপত্তা দেওয়া, কাজে গতি বাড়ানো এবং খরচ কমিয়ে আনা।’
এই দলের উপদেষ্টা ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক সালমান প্রমন। শিল্প উপদেষ্টা ছিলেন বিটাকের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুনুর রশীদ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. আশরাফুজ্জামান। এই তিনজনের প্রতিই ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে ‘বোরড টানেলার্স’।