পোশাকে চেতনা ধারণ করার ভাবনাটি নতুন নয়। দুটি রঙের মিশেলে দেশের জন্য ভাবনাকে ফুটিয়ে তুলতে পারা যায় অনায়াসে। পোশাকের নকশা, কাট, ডিজাইন যেমনই হোক, লাল-সবুজ মানেই একটি চেতনা। সব পরিচয় ছাপিয়ে যেখানে বড় হয়ে ওঠে নিজেদের বাংলাদেশি পরিচয়টাই। পোশাকের সবুজ পটে লাল টকটকে রঙের উপস্থাপনে দেশের জন্য মনপ্রাণ উজাড় করা ভালোবাসাই ফুটে ওঠে। পোশাকের সঙ্গে থাকে লাল-সবুজ অনুষঙ্গও।
বিজয় দিবস সামনে রেখে ফ্যাশন হাউসগুলোর আয়োজনে থাকে লাল-সবুজের সমাহার। ২০০৪ সালে ফ্যাশন হাউস নিত্য উপহারের আনা পতাকা থিমের লাল-সবুজ টি-শার্টের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে আপনার। দেশের ফ্যাশনধারায় সেই চল রয়েছে আজও। এমনকি সেই সময় যাঁদের জন্মও হয়নি, তাঁরাও সানন্দে গ্রহণ করেছেন লাল-সবুজের আয়োজনের এই অকৃত্রিম ধারাকে। ফ্যাশন হাউসগুলোর এবারের বিজয় দিবসের আয়োজনেও ধরে রাখা হয়েছে এই ধারা। তাদের আনা শাড়ি, কামিজ, টপ, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, টি-শার্ট, এমনকি শীতের শাল আর হুডিতেও উঠে এসেছে লাল-সবুজের বিজয়গাথা, একাত্তরের প্রেরণা। শিশুদের জন্যও আছে ফ্রক, পাঞ্জাবি ও টি-শার্ট।
নিত্য উপহারের স্বত্বাধিকারী বাহার রহমান বলছিলেন পতাকা থিমের টি-শার্ট তৈরির শুরুর সময়ের কথা। পোশাকে নিজের দেশকে উপস্থাপনের ভাবনা থেকেই সেই সময় কাজটি শুরু করেছিলেন তিনি। দেশের বাইরে থেকে আসা মানুষের জন্য এমন একটি স্মারক উপহারের ভাবনা ছিল তাঁর, যাতে ফুটে উঠবে বাংলাদেশের নিজস্বতা। সেই থেকে লাল-সবুজ নিয়ে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে নিত্য উপহার। দুই দশক পর আজকের প্রজন্মের জন্যও বিশেষভাবে ভাবছেন বাহার রহমান। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে ফ্যাশনধারা বদলালেও দেশপ্রেমের চেতনা রয়েছে অটুট। তাই তিনি এমন কাজের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন, যাতে নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পান তরুণেরাও।
ফ্যাশন হাউস কে ক্র্যাফটের উদ্যোক্তা ও পরিচালক খালিদ মাহমুদ খান বলেন, ‘আমাদের গর্ব, আমাদের অর্জন এবং ঐতিহ্যগত নানা বিষয় আমরা তুলে ধরার চেষ্টা করছি পোশাক ও অন্য অনুষঙ্গের মাধ্যমে। কে ক্র্যাফট শুরুর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আমাদের ভাবনাগুলো চর্চায় পরিণত হয়। দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকেই এর শুরু।’ এবারের বিজয় দিবসের আয়োজনেও থিমভিত্তিক রং ও মোটিফের বিন্যাস এনেছে কে ক্র্যাফট। আরামদায়ক কাপড়ে করা হয়েছে এসব পোশাক। অধিকাংশ পোশাকে থাকছে প্রিন্টের কাজ।
ফ্যাশন হাউস নোঙরের স্বত্বাধিকারী মৃণাল কান্তি হাওলাদার জানান, ১৯৭১ সালে দেশের সব মানুষ যেভাবে এক পতাকার নিচে, দেশকে ভালোবেসে, একটিমাত্র উদ্দেশ্য নিয়ে এক হয়েছিল, সেই একাত্মতার ভাবনা থেকেই সেই সময়ের পতাকার নকশা ব্যবহার করে বিজয় দিবসের পোশাকগুলো করেছেন তাঁরা। দেশীয় কাপড়ে স্ক্রিন প্রিন্ট ও ব্লক প্রিন্টে তুলে ধরেছেন একাত্তরকে। কিছু এমব্রয়ডারির কাজও আছে। দেশপ্রেমের ভাবনায় সবচেয়ে বড় সত্য মুক্তিযুদ্ধ। একাত্তরের সেই ভাবনাই আছে নোঙরের পোশাকে।
দেশপ্রেমের চেতনা ধারণ করে এগিয়ে চলার আত্মপ্রত্যয়ে আপনিও যদি এমন পোশাক পরতে চান, তাহলে ঘুরে আসতে পারেন দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো থেকে। রাজধানীর আজিজ সুপার মার্কেটের বিভিন্ন শোরুমে পাবেন এমন পোশাকের খোঁজ। অনলাইনভিত্তিক কেনাকাটার সুযোগও রয়েছে। চাইলে বানিয়েও নিতে পারেন নিজের পছন্দমতো পোশাক। বিজয় দিবস থিমে আপনার পোশাকটির মূল রং হতে পারে সবুজ; বুকে থাকতে পারে লাল নকশা, এমনকি পতাকার লাল বৃত্তটাই। পোশাকের হাতা আর কলারে থাকতে পারে লাল রঙের ব্যবহার। আবার মূল রং লাল রেখে সবুজের বৈচিত্র্যময় ব্যবহারও হতে পারে। চাইলে এই রঙের ভিন্নতাটুকু অ্যাপ্লিকের কাজ দিয়েও করিয়ে নিতে পারেন পোশাকে। থাকতে পারে দেশের ইতিহাসের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো পঙ্ক্তি। জাতীয় সংগীতের লাইন, একাত্তরে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু হয়ে ওঠা জর্জ হ্যারিসনের গানের লাইনও লেখা আছে বাজারের কিছু পোশাকে। নারীরা চাইলে লাল রঙের কো-অর্ডের সঙ্গে সবুজ শাল পরতে পারেন, কিংবা সবুজ কো-অর্ডের সঙ্গে টকটকে লাল ওড়না বা কোটি। আর ব্যান্ডানা তো পথেও বিক্রি করেন পতাকার ফেরিওয়ালারা। পোশাক কিংবা অনুষঙ্গে লাল-সবুজের পরশ রাখা যায় নানাভাবেই। লাল-সবুজের চেতনা অন্তরে নিয়েই হোক সবার পথচলা।