সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার জেমস চার্লস
সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার জেমস চার্লস

পুরুষের মেকআপ কেন পাচ্ছে বিপুল জনপ্রিয়তা

একদিকে পুরুষের মেকআপ নিয়ে বাড়ছে জনপ্রিয়তা, অন্যদিকে বিতর্ক। ইয়াং ইউ, ৩৫ বছর বয়সী এক মার্কিন পুরুষ ক্লিনজার, টোনার, সিরাম, ময়েশ্চারাইজার, সানস্ক্রিন, প্রাইমার, কনসিলার, কনট্যুর, ব্লাশ ও আইলাইনার ব্যবহার করেন। অনেকের কাছে বিষয়টি ‘অতিরিক্ত’ বলে মনে হতেই পারে। তবে ইউ মনে করেন, বিষয়টি স্বাভাবিক। মেকআপের পণ্যকে লৈঙ্গিক বেড়াজালে আটকে রাখার কোনো মানে নেই। টিকটকে ইউর অনুসারী ১৬ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। তাঁদের একটা বড় অংশই নারী, সবাই ইউর মেকআপ টিউটোরিয়াল দেখেন। নিজেকে মেকআপসহ প্রকাশ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন এই সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার।

নিজেকে মেকআপসহ প্রকাশ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার ইয়াং ইউ

মেকআপ ও ত্বকের যত্নের বিষয়ে ইউএসএ টুডেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইউ বলেন, ‘মেকআপ আমার কাছে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। মেকআপকে বাঁধাধরা নিয়মে আটকে ফেললে চলবে না। মেকআপকে নির্দিষ্ট লিঙ্গতে আটকে রাখা ভুল, অন্যায়। পুরুষের মেকআপ করার ইতিহাস হাজার বছরের। সতেরো ও আঠারো শতকে পৌরুষ পায় নতুন সংজ্ঞা। এরপর মেকআপ থেকে পুরুষকে আলাদা করে ফেলা হয়। নারী আর পুরুষের পোশাকেও আসে নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য।’

রবার্ট ওয়েলশ

ইউ মনে করেন, এসব নিয়মকানুন মানবসভ্যতাকে টেনে নিয়ে গেছে কয়েক শ বছর পেছনে! সৌন্দর্যের ধারণায় বৈষম্যের বেড়াজালে আটকা পড়েছে বিশ্ব। এখন এসব বেড়াজাল ভেঙে ভিন্নতাকে সাদরে গ্রহণ করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পুরুষের মেকআপের সঙ্গে তাঁর জেন্ডার আইডেনটিটি আর সেক্সুয়াল আইডেনটিটির কোনো সম্পর্ক নেই। তাই কোনো পুরুষকে মেকআপ করতে দেখে তাঁকে নির্দিষ্ট কোনো ‘ট্যাগ’ দেওয়া যাবে না।

পুরুষ কেন মেকআপ করে

মেকআপ আর্টিস্ট ও ইউটিউবার ম্যানি মুয়া

নারীর পাশাপাশি অনেক পুরুষ নিজেদের সৌন্দর্যের সেরাটা বের করে আনতে হাতে তুলে নিচ্ছেন মেকআপ পণ্য। টিকটক, ইনস্টাগ্রামসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পুরুষের মেকআপ। তরুণদের মেকআপের ভিডিও পাচ্ছে মিলিয়ন ভিউ। টিকটকে হ্যাশট্যাগ মেনইনমেকআপ দেখা হয়েছে ২৫ কোটির বেশিবার। যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ার সাভানা কলেজ অব আর্ট অ্যান্ড ডিজাইনের স্কুল অব বিজনেস ইনোভেশন বিভাগের অ্যাসোসিয়েট ডিন মেলোনে মুর বলেন, ‘সৌন্দর্যের ধারণা সংস্কৃতি থেকে সংস্কৃতিতে আলাদা। ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতেও আলাদা। অস্বীকার করা যাবে না যে পুরুষের মেকআপ নিয়ে বিতর্ক আছে। কেউ যদি মেকআপ করে নিজের সৌন্দর্যকে আরও বাড়াতে চায়, মেকআপ যদি তাকে আত্মবিশ্বাসী করে, তাহলে সেটাকে লৈঙ্গিক বেড়াজালে আটকে ফেলার কিছু নেই। আমরা মেকআপের গণতন্ত্রায়ণে বিশ্বাসী।’

গ্যাব্রিয়েল জামোরা

মুর পুরুষের মেকআপ জনপ্রিয়তা পাওয়ায় যাঁরা খুশি নন, তাঁদের কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘আপনি পুরুষ। মেকআপ আপনার ভালো লাগে না। তাই আপনি মেকআপ করেন না। আরেকজনের ভালো লাগে, তাই সে করে। সে আপনাকে সম্মান করে। আপনিও ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ সামলে তাকে সম্মান করুন।’

পুরুষের মেকআপের জনপ্রিয়তা পাওয়ার কয়েকটা কারণ

মেকআপ আর্টিস্ট ও গায়ক উবেন ডি মেইড
  • ভিন্ন কিছু মানেই লাইক, কমেন্ট, ভাইরাল। অনেক তরুণই মেকআপের মাধ্যমে টিকটক ও ইনস্টাগ্রামে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। অল্প সময়েই পেয়ে যান সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারের তকমা।

  • পেশাদার মডেলরাও সাদরে গ্রহণ করছেন পুরুষের মেকআপ। বেশ কিছু আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফ্যাশন ম্যাগাজিনে নিয়মিত উঠে আসছে পুরুষের মেকআপের বিষয়টি।

  • ‘ইউনিসেক্স’ ধারণার ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে ইউনিসেক্স ফ্যাশন অনুষঙ্গ থেকে শুরু করে ইউনিসেক্স গানের কণ্ঠ পাচ্ছে সমাদর।

  • অনেক পুরুষ মেকআপের মাধ্যমে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। সাজ নিয়ে আলোচনা আর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে চান।

  • ভোগবাদী আর বস্তুবাদী এই সময়ে দাঁড়িয়ে সৌন্দর্যভিত্তিক শিল্প যদি আরও প্রসারিত হয়, এর সুফল ভোগ করবে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই।

সূত্র: জেন্টলহোম ডটকম, জেন্টলম্যানস গেজেট, ইউএসএ টুডে