৪৬তম মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ জুরি পুরস্কার পেয়েছে বাংলাদেশের ছবি ‘নির্বাণ’। উৎসবে অংশ নিতে মস্কো গিয়েছিলেন ছবির অভিনয়শিল্পী প্রিয়াম অর্চি। শুরু থেকেই চেয়েছিলেন আয়োজনে বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে তুলে ধরবেন। শাড়ি পরবেন ঠিক করাই ছিল। কিন্তু শাড়ির সঙ্গে মানানসই মেকআপ ও চুলের সাজ কে করে দেবেন? যেসব মেকআপ আর্টিস্টের খোঁজ মিলছিল, তাঁরা বাংলা তো দূরে থাক, ইংরেজিও বোঝেন না। লালগালিচায় যাওয়ার দিন সাজতে গিয়ে তাই বেশ বিপাকে পড়েন এই অভিনেত্রী।
লালগালিচায় অংশ নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেও মেকআপ আর্টিস্ট খুঁজে পাচ্ছিলেন না। সদ্য পরিচিত অনেক রাশিয়ানের কাছে সহায়তা চেয়েছিলেন, নিজেও খোঁজ করেছেন, কিন্তু সেই রকম কাউকে পাননি। একসময় মন খারাপ হয়ে যায়। প্রিয়াম বলেন, ‘মনে হচ্ছিল জীবনের এই বিশেষ স্মৃতি স্মরণীয় করে রাখা হবে না। তখনই হঠাৎ বিকল্প একটা চিন্তা মাথায় আসে। সেই ভাবনা থেকেই সরাসরি চলে যাই বিউটিশিয়ানের কাছে।’
সেখানে গিয়ে প্রিয়াম ইংরেজিতে বলতে থাকেন হেয়ার স্টাইল করাবেন। বিউটিশিয়ান কিছুই বুঝতে পারছিলেন না। তখন ইংরেজি লিখে সেটাকে রুশ ভাষায় সঙ্গে সঙ্গে অনুবাদ করে দেখান। এতে বিউটিশিয়ান হেসে ওঠেন। তিনি বুঝতে পেরেছেন। তিনিও আবার রুশ ভাষায় কথা বলেন। সেটাও ইংরেজিতে অনুবাদ হয়ে যায়। কিছুটা স্বস্তি পান প্রিয়াম। যাক বোঝানো গেছে!
প্রিয়াম বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের মেয়ে। আমার আলাদা একটা সংস্কৃতি রয়েছে। আমি চেয়েছিলাম সেভাবেই সবার সামনে যাব। বাঙালি নারী বলতে তো শাড়িই বোঝায়। আর আমরা যেভাবে শাড়ির সঙ্গে চুল খোলা রাখি, সেভাবেই স্টাইলটা করতে চেয়েছিলাম। আমার চুল ছোট থাকায় কিছুটা সমস্যা হয়। যে কারণে হেয়ারস্টাইলিস্ট ছাড়া উপায় ছিল না।’
চুলের স্টাইল করার পুরো সময় অনুবাদ করে চলে কথোপকথন। আগেই বোঝানো হয়েছে শাড়ির সঙ্গে চুলের লুক সেট করতে হবে। কিছু ছবিও দেখানো হয়েছে। এরপর কাজ শুরু করেন স্টাইলিস্ট। কিন্তু একটা সময় প্রিয়াম দেখেন তাঁর লুক হয়ে গেছে পশ্চিমা। এ নিয়ে আবারও দুজনের মধ্যে চলে অনুবাদে কথোপকথন। বিউটিশিয়ান তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, চুলটা বসে গেলে ঠিক হয়ে যাবে। প্রিয়াম বলেন, ‘এদিকে বেশি সময় আর হাতে নেই। টেনশনে পড়ে গেলাম। মনে হচ্ছিল আমি তাঁকে বোঝাতে পারিনি। তিনি বারবার রুশ ভাষায় আমাকে আশ্বস্ত করে বললেন, “চিন্তা কোরো না।” পরে চুল দেখে আশ্বস্ত হই।’
১৯ থেকে ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয় ৪৬তম মস্কো চলচ্চিত্র উৎসব। ২২ এপ্রিল লালগালিচায় শাড়ি পরে হেঁটেছেন বাংলাদেশের এই অভিনেত্রী। কিন্তু অনেকেই সেখানে তাঁকে মনে করেছিল ভারতীয়। লালগালিচায় হাঁটার সময়ে কেউ কেউ বলেছেন, ‘বলিউড থেকে এসেছে।’ তাঁদের সংশোধন করে প্রিয়াম বলেন, তিনি বাংলাদেশি অভিনেত্রী।
প্রিয়াম বলেন, ‘রাশিয়ায় আমার দারুণ সময় কেটেছে। শাড়ি পরে যখন ঘুরছিলাম, সবাই তাকিয়ে ছিল। আমাদের সিনেমা এর আগে মস্কোতে এসেছে কি না, জানতে চাইল। আরেকটা মজার ব্যাপার, রাশিয়ার অনেক নারী আমার প্রশংসা করছিলেন। তাঁরা সবাই আমার গায়ের রং নিয়ে আলাদাভাবে প্রশংসা করেছেন। আমার গায়ের রং কত সুন্দর, এই কথা শতবার শুনেছি। অথচ দেশে আমার গায়ের রং নিয়ে কত কথা শুনতে হয়!’
রাশিয়ায় যাওয়ার আগেই পছন্দের জায়গাগুলোর নানা রকম ভিডিও দেখেছেন। সেভাবেই ঘোরাঘুরি করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু সব জায়গায় ঘুরতে পারেননি। কারণ, রাশিয়ায় বর্তমান পরিস্থিতির কারণে চলাচলে কিছু বিধিনিষেধ আছে। এরপরও সেভেন সিস্টার্স, পুশকিন মিউজিয়াম, মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটি, পুতিনের বাসভবনসহ বেশ কিছু দর্শনীয় জায়গায় ঘুরেছেন।
প্রিয়াম বলেন, ‘যেখানেই যাই, সব সময় ভালো স্মৃতি নিয়ে ফিরে আসতে চাই। উৎসবের বাইরে যে সময়টা পেয়েছি, সেটা ঘুরে কাটিয়েছি। ভালো একটা অভিজ্ঞতা নিয়েই ফিরেছি।’
Photos from red carpet are taken by Ivan Ponomarenko.