বিল গেটস কিংবা মার্ক জাকারবার্গকে কখনো উজ্জ্বল লাল বা হলুদ রঙের পোশাক পরতে দেখেছেন? অতি ধনী ও তারকারা তাঁদের ‘সিগনেচার স্টাইল’ বজায় রাখেন। সিনেমার দৃশ্যের মতো প্রয়োজনীয়তা থাকলে ভিন্ন কথা; নইলে হালকা, নিরপেক্ষ রঙের ও সাদামাটা নকশার সাধারণ পোশাকই বেছে নেন তাঁরা। এতেই তাঁদের আভিজাত্য ফুটে ওঠে। স্বাভাবিকভাবেই ধনী ও প্রভাবশালী মানুষেরা একধরনের আভিজাত্যময় পরিবেশে থাকেন। নির্দিষ্ট কোনো ব্র্যান্ডের লোগোকে সামনে রেখে জীবনযাপন করেন না তাঁরা; বরং নিজেরাই হয়ে ওঠেন অভিজাত ব্র্যান্ড। চলুন দেখে নেওয়া যাক, প্রভাবশালী মানুষেরা কোন সাত রঙের পোশাক এড়িয়ে চলেন।
প্যাস্টেল শেডগুলো হালফ্যাশনে জনপ্রিয় হলেও কর্তব্যপরায়ণতা ও কর্তৃত্বের মতো গুণগুলোকে প্রকাশ করে না। তারুণ্য আর হালকা মেজাজের পরিচায়ক এসব রং কেবল অবসরযাপনের সময়ই পরেন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। ধরুন, কেউ গাঢ় নীল, গাঢ় সবুজ কিংবা বারগান্ডি রঙের পোশাক পরলেন। এসব রঙে ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। কিন্তু এসব রঙেরই প্যাস্টেল শেডগুলো আমুদে হিসেবে বিবেচনা হয় অভিজাত সমাজে।
বিশ্বজুড়ে ঝাঁ–চকচকে অফিসগুলোয় একরঙা পোশাকের ব্যবহারই হয়ে থাকে সবচেয়ে বেশি। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এই ধারাই অনুসরণ করেন। পরিচ্ছন্ন লুক বজায় রাখেন তাঁরা। উজ্জ্বল ও বড়সড় প্রিন্ট অন্যের মনোযোগ আকর্ষণ করে। তাতে নিজের আমিত্বকেই হারিয়ে ফেলার ঝুঁকি থাকে। অতি ধনী মানুষেরা তাই ধ্রুপদি ধারার পরিচ্ছন্ন শেডই বেছে নেন।
উজ্জ্বল হলুদ প্রাণোচ্ছল রং। ইতিবাচকতা, প্রাণশক্তি, উষ্ণতা ও আনন্দ-ফুর্তির সঙ্গে এর গভীর সম্পর্ক। খানিকটা শিশুসুলভ প্রাণোচ্ছলতা প্রকাশিত হতে পারে এই রঙে। তাই অতি ধনীরা উজ্জ্বল হলুদ রং এড়িয়ে চলেন। পরিশীলতা আর গাম্ভীর্যের অভাবের কারণেই পেশাগত কাজের বেলায় এই রং গ্রহণযোগ্যতা পায় না; বরং গাঢ় রংগুলোয় গাম্ভীর্য আর আভিজাত্য প্রকাশ হয়।
উজ্জ্বল লাল বেশ কর্তৃত্বপূর্ণ রং হলেও অতিরিক্ত মনোযোগ আকর্ষণ করে। উজ্জ্বল লালে খানিকটা আগ্রাসীভাবও ফুটে উঠতে পারে। ধনী ব্যক্তিরা বরং নিজের গুণ ও কাজের মাধ্যমেই নিজের প্রভাব বিস্তার করেন, পোশাকের রঙের মাধ্যমে নয়। কটকটে লাল পোশাক পরলে তাঁদের কাজের প্রতি দায়বদ্ধতাও প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে।
উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত রং হলেও নিয়ন শেডগুলো চোখের জন্য বেশ অস্বস্তিকরই বটে। এমন রঙের প্রভাবে কমে যেতে পারে আত্মবিশ্বাস। অতিরিক্ত ঝকমকে ও অপেশাদার দেখাতে পারে এমন রঙের পোশাকে। তাই প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এ ধরনের রং এড়িয়েই চলেন। ঔজ্জ্বল্যের ফ্যাশনে আভিজাত্য প্রকাশের চেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ জীবনধারাই তাঁদের পছন্দ।
পোশাকে অতিরিক্ত সোনালি বা রুপালি রঙের ছোঁয়া থাকলে একটু বেশিই জাঁকজমকপূর্ণ দেখায়। এসব রঙের আধিক্য চোখেও লাগে। স্বাভাবিক লাবণ্য হারিয়ে যায় এমন রঙের আধিক্যে। একসঙ্গে এই দুয়ের আধিক্য থাকলে উদ্যমের নেতিবাচকতাও প্রকাশিত হতে পারে। নম্রতা আর মাধুর্যের স্বাভাবিক প্রকাশও হতে পারে ব্যাহত। তার চেয়ে হালকা রঙের পোশাকে নিজেকে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য রূপে প্রকাশ করা যায় বলেই অতি ধনীদের ওয়ার্ডরোবে এমন উজ্জ্বল রঙের আতিশয্যময় পোশাক থাকে না।
উজ্জ্বল কমলা রঙেও অন্যের মনোযোগ আকর্ষিত হয় প্রবলভাবে। কমলা রঙে একজন ব্যক্তিকে যেমন হাস্যোজ্জ্বল দেখায়, তেমনি দেখায় খানিকটা অপেশাদারও। গাম্ভীর্য ধরে রাখা মুশকিল এমন রঙে। এতে বেশ কম বয়সী ও অস্থির একটা ভাব প্রকাশ পায়। তার চেয়ে মেটে রঙের, এমনকি খানিকটা ‘রংহীন’ গোছের রংই বেছে নেন প্রভাবশালী ধনীরা। কেবল তা-ই নয়, অনেক অভিজাত ব্র্যান্ডও উজ্জ্বল কমলা রঙের পোশাক তৈরি করে না।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া