গাঢ় লাল ঠোঁট, হালকা সোনালি চুল, আকর্ষণীয় সাজসজ্জায় কোটি ভক্তের নজর কেড়েছিলেন মার্কিন অভিনেত্রী মেরিলিন মনরো। সাত দশক পরেও তাই আজও তাঁকে মনে রেখেছে দর্শক। বর্তমান সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় গায়িকা টেলর সুইফটের কথাই ধরুন না! অসাধারণ সংগীত–প্রতিভার পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পেয়েছে তাঁর সিগনেচার লাল লিপস্টিক। স্টাইল স্টেটমেন্ট তৈরি করতে লালরঙা ঠোঁটই কেন বেছে নেন তারকারা? কীভাবেই–বা লাল লিপস্টিক হয়ে উঠল আত্মবিশ্বাস ও মর্যাদার প্রতীক?
ইতিহাসের পাতায় লাল লিপস্টিক
ঠোঁট রাঙাতে লাল রঙের ব্যবহার সেই প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার যুগ থেকে। পাথর গুঁড়া করে তার সঙ্গে সাদা সিসার মিশ্রণ দিয়ে ঠোঁট রাঙাতেন তখনকার উচ্চবিত্ত ও রাজপরিবারের নারীরা। লিপস্টিকের বিবর্তনের ইতিহাসে সৌন্দর্যের রানি ক্লিওপেট্রার নামও চলে আসে। প্রাচীন মিসরে রানি ক্লিওপেট্রা নিজেই একধরনের পোকা থেকে প্রাপ্ত কারমাইন দিয়ে তাঁর ঠোঁট লাল করতেন। এ ছাড়া মিসরীয়রা অ্যালজিন, আয়োডিন ও ব্রোমিনের মিশ্রণে লাল রং তৈরি করে ঠোঁটে ব্যবহার করতেন। উচ্চবিত্ত ও রাজপরিবারের সদস্যদের ব্যবহারের কারণে তখন থেকেই লালরঙা ঠোঁট শক্তি-ক্ষমতা ও সামাজিক মর্যাদার নিদর্শন হয়ে ওঠে।
বিদ্রোহের প্রতীক হিসেবে লাল লিপস্টিক
বিশ শতকের দিকে লাল রঙের লিপস্টিক রাজনৈতিক আন্দোলনে বিদ্রোহের প্রতীকে পরিণত হয়। নারীদের রাজনৈতিক অধিকার ও ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে সংগঠিত সাফ্রাগেট আন্দোলনের সময়ে নারীরা ঠোঁট রাঙাতেন লাল রঙে, যা ছিল সাহস ও প্রতিবাদের সংকেত। এমনকি সৌন্দর্য উদ্যোক্তা এলিজাবেথ আর্ডেন আন্দোলনে অংশ নেওয়া নারীদের মধ্যে লাল লিপস্টিক বিতরণ করেন, যা তখন নারীমুক্তির প্রতীক হয়ে উঠেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দেশপ্রেম ও দৃঢ়তার প্রতীক হিসেবে লাল লিপস্টিক ব্যবহার করা হতো, যেখানে “ভিক্টরি রেড” নামে টকটকে লাল রঙের আলাদা একটি শেডই বাজারে চালু হয়ে গিয়েছিল। যুদ্ধপরবর্তী সময়ে মেরিলিন মনরো ও অড্রে হেপবার্নের মতো হলিউডের কিংবদন্তিরা এই লাল লিপস্টিককে করে তুলেন সৌন্দর্য ও ফ্যাশনের একচ্ছত্র প্রতিনিধি।
বর্তমান যুগে লাল লিপস্টিক
আধুনিক যুগে গাঢ় লালরঙা ঠোঁট আত্মবিশ্বাস ও গ্ল্যামারের প্রতীক। বর্তমান তারকাদের মধ্যে টেলর সুইফট লাল লিপস্টিককে বেছে নিয়েছেন। টেলর সুইফট আর লাল ঠোঁট প্রায় সমার্থক হয়ে উঠেছে। লাল লিপস্টিক কেবল একটি সাধারণ প্রসাধনসামগ্রী নয়, বরং নারীর ক্ষমতা, মর্যাদা ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। লাল রং প্রকৃত অর্থেই অন্য রকম তীব্র আবেগ ও আকর্ষণ সৃষ্টি করে, যা অন্য কোনো রং করতে পারে না। ফলে এটি ফ্যাশনের বাইরে গিয়েও প্রাত্যহিক জীবনে বিদ্রোহ, সাহসিকতা, এমনকি প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। লালরঙা ঠোঁটের চিরন্তন আকর্ষণ তাই একে অন্য সব রঙের লিপস্টিকের চেয়ে আলাদা করে তুলেছে।
সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক