করোনার ছোবলে জর্জরিত ইতালি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করেছে। এই ইতালির ভেনিসের লিডো দ্বীপে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভালের ৭৭তম আসর। এবারের আসর হওয়া, না হওয়া নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের শেষ ছিল না। তারপরও ২ থেকে ১২ সেপ্টেম্বর বেশ সফলতার সঙ্গে আয়োজিত হলো এবারের আয়োজন। আর প্রাণ ফিরে পেলো রেড কার্পেট ফ্যাশন।
মহামারির মধ্যে আয়োজিত প্রথম আন্তর্জাতিক এই উৎসবে সঙ্গত কারণেই অন্য সবসময়ের তুলনায় সেলিব্রেটিদের অনুপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো। সকলের সুরক্ষার জন্য কর্তৃপক্ষ নিয়েছিলো বিশেষ ব্যবস্থা। বিশেষত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ ছিল বাধ্যতামূলক: ফেস মাস্ক পরা, তাপমাত্রা পরীক্ষা, ছবি স্ক্রিনিংয়ের সময় শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা।
তবুও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বল্পসংখ্যক সেলিব্রেটি এবার অন্য রূপে আলোকিত করেছেন রেড কার্পেট। সাধারণত ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভাল মানেই বল গাউন আর কতুর ফ্যাশনের অঘোষিত প্রদর্শনী। তবে এ বছর বেশিরভাগ তারকাই ছিলেন ক্যাজুয়াল পোশাকে উজ্জ্বল।
ভিক্টোরিয়া সিক্রেট’স অ্যাঞ্জেল টেইলর হিল ক্যামেরায় বেশ কয়েকবার ধরা দেন অ্যাট্রো ব্র্যান্ডের পোশাকে। ‘লাচি’র প্রিমিয়ারে তিনি পরেছিলেন কাট-আউট ফ্লোরাল প্রিন্টের অ্যাট্রো গাউন। তবে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছে তাঁর পরা কাস্টমমেইড বাথরোব কাটের শর্ট র্যাপ ড্রেসটি। অ্যাট্রোর এই গাউনটি তিনি পরেছিলেন ‘আমান্তস’ ছবির প্রদর্শনীতে।
তাঁরই সতীর্থ ফ্রিডা আসেনও কম যান না! একই অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত হয়েছিলেন আলবার্টা ফেরেত্তির সাদা রঙের কতুর গাউনে। রোমান দেবীর মতো সাজে তাঁকে লেগেছে অসাধারণ।
‘গেম অব থ্রোনস’-এর অভিনয়শিল্পী নাথালি ইমানুয়েল ‘রিভেঞ্জ রুম’ ছবির প্রদর্শনীতে হাজির হয়েছিলেন ক্যাজুয়াল ও ফরমালের মিশ্র সাজে। পরেছিলেন মিউ মিউ ব্র্যান্ডের রাজকীয় নীল ফরমাল স্কার্ট। সঙ্গে উইমেন’স টেলস সিরিজের প্রচারণার জন্য বানানো ‘মিউ মিউ ওমেন’স টেলস’ স্লোগানের বিশেষ টি শার্ট। এই স্বপ্লদৈর্ঘ্য সিরিজ তৈরি হয়েছে মিউ মিউর আর্থিক পৃষ্ঠপোষণায়।
এবারের আসরে টেইলর হিল, জরজিনা রড্রিগেজ, ফ্রিডা আসেনদের মতো মডেলদের ভিড়েও আলো ছড়িয়েছে কেট ব্লানচেট ও টিলডা সুইটনের মতো জৈষ্ঠ্য অভিনেত্রীদের লুক।
টিলডা সুইটনকে কখনো দেখা গিয়েছে শ্যানেলের কতুর কোট ড্রেসে তো কখনো হায়দার একারমানের টেইলর স্যুটে। বরাবরের মতোই ফেমিনিন ও নিউট্রাল উভয় সাজেই অনন্য সুইনটন। তবে তাঁর সোনালি স্টেটমেন্ট মাস্ক নিয়ে আলোচনা যেন থামছেই না। কাস্টমমেড এই মাস্কটি তৈরি করতে ডিজাইনার জেমস মেরির অনুপ্রেরণা হয়েছে ভেনিসের বিখ্যাত মাছের বাজার রিয়াল্টো ফিস মার্কেট।
সুইটনের মতো নজর কেড়েছেন ইতালিয়ান শিল্পী প্রিন্সিপে মরিসের বৈচিত্র্যপূর্ণ রূপালি মাস্ক। পোলিশ অভিনেত্রী কাসিয়া স্মার্টনিকের মেরুন মাস্কের সাথে থাকা অ্যান্টিক ফ্লোরাল পিসটি ছিলো অদ্ভুত সুন্দর।
এবারের আসরের জুরি প্রধান কেট ব্লানচেট উৎসবের একটি নয় বরং দুটি অনুষ্ঠানে পরেছিলেন দুটি পুরোনো ড্রেস। উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাঁকে দেখা গিয়েছে এস্তেবান কোরতাসার নীল সিকুইন গাউনে। গাউনটি প্রথম পরেছিলেন ২০১৫ সালে বিএফআই লন্ডন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে। অন্য আরেকটি প্রদর্শনীতে পরার জন্য ব্লানচেট বেছে নিয়েছিলেন জমকালো অ্যাসেমিট্রিক আলেক্সান্ডার ম্যাককুইন টপ ও কালো ট্রাউজার ও ব্লেজার। এই একই টপ তিনি পরেছিলেন চার বছর আগে বাফটা অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে। এ থেকেই বোঝা যায় যে ব্লানচেট সাসটেইনেবল ফ্যাশনের একজন নিগূঢ় সমর্থক।
শুধু মডেল আর অভিনেত্রীরাই নয়, লাল গালিচা মাতিয়েছেন নারী পরিচালকেরাও। বিশেষ করে বলতে হবে ক্লেয়ার ডেনিস, জিয়া কপ্পোলা আর মাতি দিওপের কথা। ৭৪ বছর বয়সী ক্লেয়ার ডেনিস একটি ইভেন্ট এসেছিলেন ইক্কাত প্রিন্টের বোল্ড শেডের টু- পিস স্যুটে। সঙ্গে অনুষঙ্গ হয় লুই ভুইতো বুট। ক্ল্যাসিক রেড কার্পেট স্টাইলে তাঁর প্রাণোচ্ছল উপস্থিতি সবাইকেই মুগ্ধ করে। জিয়া কপ্পোলা তাঁর নিজের পরিচালিত ছবি ‘মেইনস্ট্রিম’-এর প্রিমিয়ারের জন্য বেছে নিয়েছিলেন সত্তর দশক প্রাণিত গুচির চোখ ধাঁধানো মাল্টি কালার শিফন গাউন।
আর অন্যদিকে অভিনয়শিল্পী ভেনেসা কিরবিও কালো অ্যাসেমেট্রিক লংগাউনে ছিলেন নজরকাড়া। আর চিরাচরিত ফ্রেঞ্চ স্টাইলের সাথে বোল্ড কালার আর টেক্সচারের মিশ্রণে মাতি দিওপের নজরকাড়া উপস্থিতি। ‘মিউ মিউ ওমেন’স টেলস’ সিরিজের ফটোকলে তাঁকে দেখা গেলো স্ট্রাইপড সোয়েটার ভেস্টের সাথে কালো ওয়াইড ট্রাউজার আর অলংকৃত কোমর বন্ধনীতে।
তথ্য: রয়টার্স এবং ইন্টারনেট