জার্মানির ইউনিভার্সিটি অব দ্য বুন্দেসভেয়ার মিউনিখে রোবোটিকস ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেন বাংলাদেশের তরুণ শামসুল আকরাম। তাঁর সংগ্রামের গল্প শুনেছেন তানভীর রহমান
গাইবান্ধার কড়াইবাড়ি গ্রামের শামসুল আকরামদের পারিবারিক অবস্থা একসময় ভালোই ছিল। ১৯৯৮ সালে তিস্তার ভাঙনে বাপ-দাদার সব সম্পদ নদীগর্ভে চলে যায়, তাঁদের জীবনে শুরু হয় অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট! শামসুল বলেন, ‘আব্বা হাইস্কুলে শিক্ষকতা করে বেশি বেতন পেতেন না। তার ওপর আট ভাই-বোনের যাবতীয় খরচ, পারিবারিক খরচ ও অন্যান্য খরচ। শখ-আহ্লাদ তো দূরের কথা, তিন বেলা খাবারই জুটত না। এমন অবস্থায় আব্বা স্কুলের পাশাপাশি জমিতে চাষাবাদ শুরু করেন। আমরা সব ভাই-বোন সেখানে কাজ করতাম। উদ্দেশ্য একটাই, পরিবারে সচ্ছলতা আনা।’
শামসুলের প্রবল ইচ্ছা ছিল আইনজীবী হবেন। অন্যদিকে বাবা চাইতেন ছেলে ডাক্তার হোক। কোনোটাই হতে পারেননি শামসুল। পারিবারিক টানাপোড়েনের কথা চিন্তা করে ভর্তি হন রংপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে। ২০১৬ সালে শেষ হয় তাঁর ডিপ্লোমা পড়া। প্রাইম ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে ভর্তি হন। একই সঙ্গে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আইটি কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। শামসুল বললেন, ‘ডিপ্লোমার পর মনে হলো, দেশের কোনো একটি আইটি কোম্পানিতে ম্যানেজারিয়াল পদে কাজ করতে পারলেই আমার জীবন ধন্য হবে। রাতে বিএসসির ক্লাস করতাম, দিনে চাকরি।’
সেই চাকরি অবশ্য বেশি দিন করেননি। সে বছরই উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে ল্যাব সহকারী হন। সেখান থেকে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক। শামসুলের স্বপ্ন ছিল আরও বড়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিদেশে পড়তে যাওয়া দেখে তাঁরও ইচ্ছা জাগে দেশের বাইরে যাওয়ার। শুরু করেন প্রস্তুতি। ২৫ মাস অপেক্ষার পর সেই স্বপ্নের দুয়ারও খুলে যায়। ২০২২ সালে শীতকালীন সেমিস্টারে বার্লিন ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সেসের (বিএইচটি) ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশনস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে স্নাতকোত্তর পড়া শুরু করলেন শামসুল।
বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে আগেই জেনেছিলেন, রাইডিং কোম্পানিতে চাকরি করলে বেতনের পাশাপাশি ভালো অঙ্কের বকশিশ (টিপস) পাওয়া যায়। জার্মানি এসেই তাই রাইডিং কোম্পানির খোঁজ শুরু করেন শামসুল। একটা কোম্পানি পেয়েও যান, কিন্তু ভাগ্য সহায় হয় না। পরে বহুজাতিক কোম্পানি ডেলোয়টি জিএমবিএইচে এবং টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব ডার্মস্ট্যাডে কাজের সুযোগ পান। সর্বশেষ যোগ দেন ইউনিভার্সিটি অব দ্য বুন্দেসভেয়ার মিউনিখের রোবোটিকস ল্যাবে। রোবোটিকস প্রকৌশলী হিসেবে সেখানে তাঁর কাজ এম্বেডেড সিস্টেম বিভাগে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপে ও অধ্যাপকদের বৈজ্ঞানিক গবেষণায় সহযোগিতা করা, রোবোটিকসের বিভিন্ন প্রকল্পের উন্নয়নে কাজ করা।
রোবোটিকস খাতের সম্ভাবনার কথা ভালোভাবেই জানেন শামসুল। নিজেকে রোবোটিকস প্রযুক্তিতে দক্ষ করে তুলতে চান। ভবিষ্যতের এই প্রযুক্তি বিপ্লবে অংশ নিতে চান।