‘একবার দেখেই ডিলিট করে দেব’, বলেছিল ছেলেটি

পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।

ব্যারিস্টার মিতি সানজানা

প্রশ্ন: আমার এক স্বজনের মেয়ে, ঢাকার বাইরের একটি নামকরা স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। কিছুদিন আগে একটি ছেলের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর পরিচয়। একসময় দুজনে ফোনে কথা বলতে শুরু করে। ছেলেটি ঢাকার একটি স্কুলের ছাত্র। মুঠোফোনে ও ভিডিও কলে কথা বলতে বলতে একসময় ছেলেটি মেয়েটিকে তার ব্যক্তিগত ছবি তুলে পাঠাতে বলে। ফোনে কথা বলতে বলতে ছেলেটি এমন এক পরিবেশ সৃষ্টি করে যে মেয়েটিও তাকে তৎক্ষণাৎ ছবি পাঠিয়ে দেয়। ছেলেটি মেয়েটিকে আশ্বাস দিয়েছিল, ‘একবার দেখেই ডিলিট করে দেব।’ কিন্তু কিছুদিন পর ছেলেটি এই ছবি দিয়ে মেয়েটিকে ব্ল্যাকমেল করতে শুরু করে। তার কাছ থেকে নানা রকম অবৈধ সুবিধা নিতে থাকে। মেয়েটিকে একাধিকবার ঢাকায় এসে তার সঙ্গে দেখা করতে বাধ্য করে। ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে অনেক টাকাপয়সা হাতিয়ে নিতে থাকে। ছেলেটির বিরুদ্ধে আইনগত কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

উত্তর: চিঠির জন্য ধন্যবাদ। ইন্টারনেট ব্যবহারে সাবধান বা সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি। সেই সঙ্গে টিনএজার সন্তানের মা-বাবাকেও সচেতন থাকতে হবে। সন্তান অনলাইনে অপরিচিত মানুষের সঙ্গে কথা বলছে কি না, কী কাজে সে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, এসব বিষয়ে অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে হবে। অভিভাবকেরা একটু অসচেতন হলেই নানা ধরনের বিপদে পড়ে যেতে পারে সন্তানেরা।

ছেলেটি যদি অনলাইনে কোনো ছবি প্রকাশ করে ফেলে, তাহলে এ জন্য তাকে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। আপনি অভিভাবক হিসেবে ছেলেটির সঙ্গে আলোচনা করে ছবি, অডিও, ভিডিও ইত্যাদি তাকে ডিলিট করতে বলুন। ছেলেটি ব্ল্যাকমেলের মাধ্যমে মেয়েটির কাছ থেকে টাকা আদায় করছে। ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৩৮৩ ধারা অনুযায়ী, এ ধরনের ব্ল্যাকমেলকে এক্সটরশন বা চাঁদাবাজির আওতায় ফেলা যাবে। ৩৮৪ ধারা অনুযায়ী, এর শাস্তি সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড।

ব্ল্যাকমেলিং একটি জঘন্য অপরাধ। দেশের প্রচলিত সব আইন সম্পূর্ণরূপে আপনার পক্ষে। আপনি অতি দ্রুত কাছের থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করুন। প্রয়োজনে জিডির কপি নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের হেডকোয়ার্টারে অবস্থিত সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। এ ছাড়া দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে পুলিশের ‘হ্যালো সিটি’ অ্যাপের মাধ্যমে অভিযোগ দাখিল করে প্রতিকার চাইতে পারেন।

যেহেতু সে ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে, তাই দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারা বলে সরাসরি আদালতেও অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। তবে জিডি করলে পুলিশ ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে নন-এফআইআর প্রসিকিউশন দাখিল করতে পারে। জিডির পর পুলিশ যদি ঘটনার সত্যতা পায়, তাহলে হুমকিদাতার বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর জন্য দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় প্রতিবেদন দাখিল করবে। এরপর বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হবে। ৫০৬ ধারার অধীন অপরাধমূলক হুমকির জন্য শাস্তি, দুই বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় দণ্ডেই দণ্ডিত হতে পারেন।

ছেলেটি মেয়েটিকে হুমকি দিয়ে এবং ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে। যদি কোনো এক পক্ষ অর্থ বা সম্পদের জন্য প্রেম করে এবং বিশ্বাস অর্জনের পর অপর পক্ষের অর্থ বা সম্পদ হাতিয়ে নেয়, তাহলে বাংলাদেশে প্রচলিত দণ্ডবিধির ৪১৫ থেকে ৪২০ পর্যন্ত বিভিন্ন ধারা অনুযায়ী তা প্রতারণা হিসেবে বিবেচিত হবে। দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারাতে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি অসৎ উদ্দেশ্যে কারও ওপর প্রভাব খাটিয়ে তাঁর কোনো কিছু হাতিয়ে নেয় (তাঁর সম্মতি থাকলেও) সেটা প্রতারণা হিসেবে গণ্য করা হবে। উপরিউক্ত প্রতারণার জন্য সেই ব্যক্তি দণ্ডবিধির ৪১৭ ধারার অধীন এক বছরের সশ্রম বা বিনাশ্রম কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

লেখা পাঠানোর ঠিকানা

পাঠকের প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে। ই–মেইল ঠিকানা: adhuna@prothomalo.com (সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’)

ডাক ঠিকানা

প্র অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫। (খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’)  ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA