সাড়ে ৭০০ বিঘা জমির জন্য ধানের চারা তৈরি করছেন বাকৃবির শিক্ষার্থীরা

শিক্ষকদের পরামর্শে চলছে চারা তৈরির কাজ
ছবি: প্রথম আলো

অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি বন্যায় এবার আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষ অনেকাংশেই আমন ধানের ওপর নির্ভরশীল। কীভাবে এই সংকটে তাঁদের পাশে দাঁড়ানো যায়, ভাবছিলেন ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকাবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি শিক্ষার্থী মুখলেছুর রহমানের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন তাঁরা। পরে তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হন আরও কয়েকজন গবেষক ও কৃষি উদ্যোক্তা। সবাই মিলে চালু করেন ‘অ্যাগ্রি স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স’। বাকৃবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ছাড়াও এই প্ল্যাটফর্মে আছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক, শিক্ষার্থী ও কৃষি উদ্যোক্তা। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত হয়, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে নাবি আমন ধানের চারা বিতরণ করা হবে। এ উদ্যোগে স্বচ্ছতা ও আরও গতিশীলতা আনতে বেশ কয়েকজন শিক্ষককে যুক্ত করে শুরু হয় কার্যক্রম।

উপকৃত হবেন হাজারের বেশি কৃষক

বাকৃবির ৫ একর, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ একর, চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ৪ একর, লক্ষ্মীপুরে ২ একরসহ মোট ১২ একর জমিতে চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। এই চারায় রোপণ করা যাবে সাড়ে সাত শ বিঘা জমি। প্রাথমিকভাবে বাকৃবির কৃষিতত্ত্ব বিভাগের গবেষণা মাঠের এক একর জমিতে ২০০ কেজি বিনা ধান-১৭-এর বীজ বপন শুরু হয়েছে।

তবে এই উদ্যোগ শুধু বীজ উৎপাদন ও বিতরণেই সীমাবদ্ধ রাখতে চান না উদ্যোক্তারা। বন্যা–পরবর্তী সময়ে প্রান্তিক কৃষকদের আর্থিক বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এক হাজারের বেশি কৃষককে সার, কীটনাশক ও নগদ অর্থ বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু এত টাকা কীভাবে পাওয়া যাবে? ‘অ্যাগ্রি স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স’-এর অন্যতম উদ্যোক্তা মুখলেছুর রহমান বলেন, ‘আমরা হিসাব করেছি। পুরো কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে ২২ লাখ টাকা প্রয়োজন। ৩-৪ লাখ টাকা আমরা এর মধ্যে পেয়েও গেছি। বাকি টাকাও স্পনসর, অ্যালামনাই ও কৃষি উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি।’

থাকবে পরামর্শক দল

নাবি আমন ধানে রোগবালাই, চিটা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই কৃষকের ক্ষতির মাত্রা কমাতে একটি পরামর্শক দল তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। দলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পাশাপাশি ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের সমন্বয়ে একটি দল গঠন করা হবে, যাঁরা পুরো মৌসুমজুড়ে কৃষকদের পরামর্শ দেবেন।

বর্তমানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুক্ত আছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মো. পারভেজ আনোয়ার। তিনি বলেন, ‘কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের শিক্ষার্থীরা যে উদ্যোগ নিয়েছে, বন্যা–পরবর্তী খাদ্যসংকট নিরসনে নিঃসন্দেহে তা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। এটা মূলত শিক্ষার্থীদেরই উদ্যোগ। শিক্ষক হিসেবে আমরা তাঁদের পরামর্শ দিয়ে, বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করিয়ে দিয়ে সহযোগিতা করছি।’