৯ মে সকালে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান নিয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণ শেষে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ঘাঁটিতে ফিরছিলেন উইং কমান্ডার সোহান হাসান খান ও স্কোয়াড্রন লিডার আসিম জাওয়াদ। এ সময় অকস্মাৎ তাঁদের বিমানে আগুন ধরে যায়। বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় পড়লে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা। সেটা এড়াতে দুই বৈমানিক বিমানটিকে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে সরিয়ে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যান। এরপর জরুরি প্যারাস্যুট দিয়ে বিমান থেকে নদীতে অবতরণ করেন। তাঁদের উদ্ধার করার পর দেখা যায়, স্কোয়াড্রন লিডার আসিম জাওয়াদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য বিএনএস পতেঙ্গায় নেওয়া হয়। এ সময় চিকিৎসক আসিম জাওয়াদকে মৃত ঘোষণা করেন।
বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সোর্ড অব অনার পাওয়া বৈমানিক ছিলেন আসিম জাওয়াদ। নেট দুনিয়ায় নিহত বৈমানিকের ছবি, বিভিন্ন ভিডিও শেয়ার করে অনেককে শোকবার্তা জানাতে দেখা যায়। এর মধ্যে একটি চিত্রকর্ম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ ছড়িয়ে পড়ে; যেখানে দেখা যায়, দুর্ঘটনায় পতিত বিমান থেকে প্যারাস্যুটযোগে নামছেন এক বৈমানিক। এই চিত্রকর্মের নাম ‘আত্মত্যাগ’। এঁকেছেন কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ওয়াসিফ জামান।
আঁকিয়ে জানান, ছবিটি আঁকতে জলরং ও অ্যাক্রিলিক রং ব্যবহার করা হয়েছে। মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিটে ছবিটি এঁকেছেন তিনি।
শখের বশে ছবি আঁকেন ওয়াসিফ। ল্যান্ডস্কেপ পেইন্টিং তাঁর পছন্দের জায়গা। তবে মাঝেমধ্যে সমসাময়িক ঘটনা নিয়েও আঁকার চেষ্টা করেন। ‘আত্মত্যাগ’ প্রসঙ্গে ওয়াসিফ জামান বলেন, ছোটবেলা থেকে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের শৃঙ্খলা, সততা ও দেশপ্রেম আমাকে মুগ্ধ করে। সেই ভালোবাসার জায়গা থেকে যখন দেখলাম, একজন অফিসারের এমন করুণ মৃত্যু হয়েছে, তাঁর আত্মত্যাগ সম্পর্কে না এঁকে পারলাম না।’
ফেসবুকে প্রকাশের পরপরই চিত্রকর্মকে ঘিরে নিজেদের মুগ্ধতা ও ভালো লাগার কথা জানাচ্ছেন নেটিজেনরা। একটা চিত্রকর্মকে ঘিরে সাধারণ মানুষের এত উন্মাদনা কেন? ওয়াসিফ জামানই প্রশ্নটির উত্তর দিলেন, ‘আমার মনে হয়, ছবিটাতে যেহেতু বাস্তব ঘটনা দেখানো হয়েছে, একজন অফিসারের সাহসিকতা ও দায়িত্বশীলতা ফুটে উঠেছে, তাই মানুষকে এটি স্পর্শ করেছে।’
ছোটবেলায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ারের আঁকা দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। সেই শুরু। অর্জনও নিছক কম নয়। ২০২১ সালে রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনী এবং ২০২২ সালে কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত আর্ট ফেস্টিভ্যালে প্রথম স্থান অধিকার করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রদর্শনীতে তাঁর চিত্রকর্ম নির্বাচিত হয়েছে।