লাগামহীন কেনাকাটার পেছনে দায়ী হতে পারে একপ্রকার মানসিক ব্যাধি
লাগামহীন কেনাকাটার পেছনে দায়ী হতে পারে একপ্রকার মানসিক ব্যাধি

৭টি লক্ষণ দেখে যাচাই করুন আপনি কেনাকাটায় আসক্ত কিনা

‘যা দেখি তা–ই কিনতে ইচ্ছা করে’—বাজারে কিংবা অনলাইনে কেনাকাটা করতে গিয়ে অনেক সময় এমন ভাবনা উঁকি দেয়। ফলে একের পর এক অহেতুক জিনিস কিনে ফেলেন অনেকে। কেনাকাটার পর আবার ভুল বুঝতে পেরে আফসোসও করেন কেউ কেউ। তবে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা অহেতুক কেনাকাটার দোষ মনে মনে চাপিয়ে দেন লোভনীয় বিজ্ঞাপন কিংবা দোকানির ওপর। আদতেই কি সব দোষ বিজ্ঞাপন কিংবা দোকানির? বিশেষজ্ঞদের মতে, এই লাগামহীন কেনাকাটার পেছনে দায়ী হতে পারে একপ্রকার মানসিক ব্যাধি। হতে পারে আপনি একজন ‘শপাহলিক’ বা কেনাকাটায় আসক্ত! সাতটি লক্ষণ দিয়ে যাচাই করুন, আপনিও এই দলভুক্ত কি না...

১. অনলাইন শপিং অ্যাপে ঘণ্টার পর ঘণ্টা

নেই কাজ তো খই ভাজ। আজকাল স্মার্টফোন যেন ওই খই ভাজার অন্যতম যন্ত্র। ওতেই আছে দুনিয়ার যেকোনো প্রান্তের যেকোনো কিছু দেখা ও কেনার সুযোগ। নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী থেকে শুরু করে রেস্তোরাঁর খাবার—সবই কেনা যায় স্মার্টফোন দিয়ে ঘরে শুয়ে-বসেই। কেনাকাটা করার এই মাধ্যম শপাহলিকদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট করে বিভিন্ন অনলাইন মার্কেট প্লেস, পেজ ও অ্যাপ ঘেঁটে অপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনেন তাঁরা। নিজের মধ্যে এই বদভ্যাস খুঁজে পেলে আপনিও হতে পারেন শপাহলিক।

২. সামর্থ্যের চেয়ে বেশি খরচ করা

‘সামনের মাসে বেতন পেলে শোধ করে দেব’—ধার করে জিনিস কিনে এমনটা ভাবছেন তো? তাহলে জেনে রাখুন, কেনাকাটায় আসক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে এটি ‘কমন’ বদভ্যাস। ধার করে সামর্থ্যের চেয়ে বেশি খরচ করা অনেকটা জুয়া খেলার মতোই আসক্তি। এই বদভ্যাসের বশবর্তী হয়ে অনিয়ন্ত্রিত খরচ করার ফলে সঞ্চিত অর্থের ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। নিজেকে যদি প্রায়ই এমন পরিস্থিতিতে আবিষ্কার করেন, তাহলে ধরে নিতে পারেন আপনিও শপাহলিক।

৩. নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলার অনুভূতি

অনিয়ন্ত্রিত কেনাকাটা করার স্বভাব ধ্বংসাত্মক চক্রের মতো কাজ করে। একটি জিনিস দেখলে মনে হয়, এটি কিনলে জীবন সহজ হবে। কেনার পর সাময়িক শান্তি পেলেও আবার অন্য একটির প্রতি আকাঙ্ক্ষা জন্মায়। চক্রটি এভাবে ঘুরতেই থাকে। এর থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সমস্যা বুঝে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

অনিয়ন্ত্রিত কেনাকাটা করার স্বভাব ধ্বংসাত্মক চক্রের মতো কাজ করে

৪. রাগ কিংবা মন খারাপ হলেই কেনাকাটা করা

নতুন জামা, নতুন জুতা, যেকোনো নতুন কিছু আমাদের মন ভালো করে। সাধারণ এই ব্যাপাই অনেকে আবার বাড়াবাড়ির পর্যায়ে নিয়ে যান। মন খারাপ হলেই অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা করেন তাঁরা। রাগ হলে তো কথাই নেই। মনটা শান্ত করতে মার্কেটে মার্কেটে ঘুরে বেড়ান। যা দেখেন, তা–ই কিনে ফেলেন।

৫. কেনা জিনিস হাতে না পাওয়া পর্যন্ত অস্থিরতা

অনলাইনে একটি জিনিসের অর্ডার করেছেন। জিনিসটি যতক্ষণ না হাতে পাচ্ছেন, কোনোভাবেই যেন শান্ত হতে পারছেন না। বারবার মুঠোফোন দেখছেন এবং সারাক্ষণ জিনিসটির কথা ভাবছেন। এ ধরনের আচরণ আমরা তখনই করি, যখন মস্তিষ্কে ডোপামিন নামের রাসায়নিকের নিঃসরণ হয় অতিমাত্রায়। বিষয়টা অনেকটা মাদকাসক্তির মতো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আসক্তি বাড়তে থাকে। ফলে কেনাকাটা করার চাহিদাও বাড়তে থাকে।

৬. অব্যবহৃত জিনিসের পাহাড় গড়ে ওঠা

যত্ন করে তুলে রাখা পোশাকটি কিনেছিলেন কোনো বিশেষ অনুষ্ঠানে পরবেন বলে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা আর পরাই হয়নি। নিজের আশপাশে লক্ষ করে দেখুন তো, এমন আরও জিনিস পান কি না, যা প্রয়োজনীয় ভেবে কিনেছিলেন, কিন্তু কোনো দিনই কাজে আসেনি। যদি এমন জিনিসের পরিমাণ অনেক বেশি হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনি কেনাকাটায় আসক্ত।

প্রয়োজনীয় ভেবে কিনেছিলেন, কিন্তু কোনো দিনই কাজে আসেনি। এমন জিনিসের পরিমাণ যদি অনেক বেশি হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনি কেনাকাটায় আসক্ত

৭. রাতের ঘুম বাদ দিয়ে কেনাকাটা করা

ফোনে কেনাকাটার অ্যাপগুলো যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে শপাহলিকদের। একের পর এক নতুন নতুন জিনিস চোখের সামনে রেখে ঘুমাতে যাওয়া যেন অসম্ভব বিষয়! অনেক সময় তো চেষ্টা করেও ঘুমাতে পারেন না অনেকে। মাথায় ঘুরতে থাকে কোনো কিছু হাত ফসকে গেল কি না। আর এ কারণেই ঘুম বাদ দিয়ে মুঠোফোন নিয়ে বসে থাকেন তাঁরা।

যা করতে পারেন

  • মুঠোফোন থেকে সব কেনাকাটার অ্যাপ সরিয়ে ফেলুন।

  • ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে কতক্ষণ ধরে জামাকাপড় কিংবা কেনার মতো অন্যান্য জিনিস দেখছেন, তা পর্যবেক্ষণ করুন।

  • কেনাকাটাকে কেউ কেউ ‘শৈল্পিক পর্যায়ে’ নিয়ে যান। তাই সব সময় মডেল ও ইনফ্লুয়েন্সারদের মতো পোশাক পরার কথা ভাবেন। বাস্তবতা হলো, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিভিন্ন ব্র্যান্ড ফটোশুটের পর মডেলদের কাছ থেকে কাপড় ফিরিয়ে নিয়ে যায়! ফলে মডেলদের অনুকরণ করার কথা মাথা থেকে ঝেরে ফেলুন।

বেশি কেনার বদলে কম কেনার জন্য নিজেকে অনুপ্রাণিত করুন
  • বেশি কেনার বদলে কম কেনার জন্য নিজেকে অনুপ্রাণিত করুন। মনে রাখবেন, যত কম জিনিস কিনবেন, পরিবেশের জন্য তা ততই উপকার বয়ে আনবে।

  • অব্যবহৃত জিনিসগুলো দান করে দিন। বাড়তি টাকা জমলে ঘুরতে যান, সঞ্চয় করুন, পরিবারের সদস্যদের প্রয়োজন অনুযায়ী পাশে দাঁড়ান। চাইলে দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দানও করতে পারেন। মন ভালো হবে নিশ্চিত।

  • শপাহলিক হয়ে পড়েছেন, জানার পর বিচলিত হবেন না। এটি খুব ভয়াবহ কোনো মানসিক ব্যাধি নয়। তবে এটি আপনার জীবনের অনেক সমস্যার পেছনের একটি গোপন কারণ হতে পারে। তাই এর থেকে রেহাই পেতে নিজেই নিজেকে সাহায্য করুন। প্রয়োজনে পরিবার, বন্ধু অথবা কোনো মনোবিদের সঙ্গে কথা বলুন।

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট