কম দামে কেনাকাটা করতে পারবেন মোহাম্মদপুরের এই মার্কেটে

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে বাজেটের মধ্যেই কেনাকাটা করতে পারবেন। মডেল: তিথি ও পিহু
ছবি: সুমন ইউসুফ

সাধ আর সাধ্যের মিলনমেলা যেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট। আছে ১৫০ থেকে ২০০টির মতো দোকান। বেশির ভাগই ‘ভ্যান-দোকান’। ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই মার্কেটে কী পাওয়া যায়, এই প্রশ্ন না করে জিজ্ঞেস করা উচিত—কী পাওয়া যায় না! শাড়ি থেকে মশারি, কুর্তা, পর্দা, ডিনার সেট—সবই মিলবে। তবে তিনটি জিনিস দামে কম, মানে ভালো এই শর্ত মিটিয়ে কিনতে হলে কৃষি মার্কেটের বিকল্প মেলা ভার।

সাধ আর সাধ্যের মিলনমেলা যেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট।

পর্দা

এই তালিকার প্রথমেই থাকবে পর্দা। ভ্যানের ওপর শত শত রঙিন পর্দার পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। সেসবের সঙ্গী হয়েছে বিছানার চাদর, বালিশের কভার, কুশন ইত্যাদি। কম দামে প্রিন্টের সুন্দর পর্দা কিনতে হলে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট থেকে ঘুরে আসতেই পারেন। প্রতি পিস পর্দার দাম ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা।

কাপড়ের মান, কুঁচির সংখ্যার ওপর নির্ভর করে এর দাম। সুতি, লিনেন, ভয়েল, সিনথেটিক বা নেটের পর্দাও মিলবে। একরঙা, গামছা প্রিন্ট, ব্লক, টাই-ডাই বা স্ক্রিনপ্রিন্টের পর্দাও মিলবে। তবে সুতি কাপড়ের ‘আড়ং প্রিন্ট’-এর পর্দার চাহিদাই সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে আকৃতি ও মানভেদে বিছানার চাদরের দাম পড়বে ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা।

সিরামিকের জিনিসপত্র

কৃষি মার্কেটে একটি গলিই রয়েছে, যেখানে মিলবে ভ্যানভর্তি সিরামিকের তৈজসপত্র। প্রায় সব ভ্যানের সংগ্রহ আর দাম কাছাকাছি। তবে ভাই ভাই কালেকশন বা ইবরুন সিরামিকসের মতো কিছু দোকানের সংগ্রহ আরও সমৃদ্ধ। প্রায় সব মগের দাম ১০০ থেকে ২০০ টাকার ভেতর। ছোট, বড় আর মাঝারি আকৃতির তিনটি সার্ভিং ডিশের দাম পড়বে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা।

কিছু ডিশ সেট ছাড়া সিঙ্গেলও কিনতে পারবেন। ৬টি বাটি আর ১টি বড় বাটির ফিরনি সেটের দাম ৮০০ টাকা। স্যুপ সেটের দামও কাছাকাছি। টি-পট, সুগার পট, মিল্ক পট, হ্যান্ডওয়াশের কৌটা মিলে যাবে ২০০ থেকে ২৫০ টাকার ভেতরে। মাছ বা পাতার শেপ, ডায়মন্ড কাট বা মার্বেল কোটের চার কোনা অথবা গোল সিরামিকের বাটিগুলো কিনতে পারবেন ৩০০ টাকার ভেতরেই। ৮০০ থেকে হাজারের ভেতরেই মিলবে বিভিন্ন নকশার ৬টি কাপ আর ৬টি পিরিচ।

এখানে যেসব পণ্য বিক্রি হয়, এগুলো সাধারণত ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা তৈরি করেন।

ছোটদের জামাকাপড়

আপনি ব্যাগ ভরে মনের সাধ মিটিয়ে আশ্চর্যজনক কম দামে শিশুদের জিনিসপত্র কিনতে পারবেন। অনেকগুলো দোকানে যা-ই কেনেন না কেন, ৫০, ৮০ বা ১০০ টাকা দাম। এমনকি ৫০ টাকায় বড়দের গেঞ্জিও পাওয়া যায়।

এগুলোর একটা বড় অংশ ‘সেকেন্ড হ্যান্ড’ সংগ্রহ। তাই কেনার পর ভালো করে স্যাভলন দিয়ে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে তারপর শিশুকে পরাবেন। ২০০ থেকে ৩০০ টাকা দিয়ে বৈচিত্র্যময় সুন্দর ফ্রক, টপ, প্যান্ট-গেঞ্জির সেটও কিনতে পারবেন।

এ ছাড়া কৃষি মার্কেটে নারীদের স্টাইলিশ ওয়ান পিস, টু–পিস (কো–অর্ডস), থ্রি–পিস, শাড়ি, প্যান্ট, পায়জামা, স্কার্টও মিলবে। তবে টপ আর কো–অর্ডসের সেট মিলবে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে।

স্টাইলিশ সব অনুষঙ্গ বাজেটের মিলবে।

কেন এত কম দাম

প্রথমত, দোকানগুলো রাস্তার পাশে ভ্যানের ওপরে হওয়ায় দোকানভাড়া, বিদ্যুতের বিল, কর্মচারী খরচ ও আরও নানা আনুষঙ্গিক খরচ নেই বললেই চলে। দ্বিতীয়ত, এই মার্কেটে যা কিছু কিনতে পাওয়া যায়, তার ৮০ ভাগেরও বেশি দেশি পণ্য। তৃতীয়ত, যেসব পণ্য বিক্রি হয়, এগুলো সাধারণত ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা তৈরি করেন। কোনো তৃতীয় পক্ষ ছাড়াই সরাসরি তাঁদের কাছ থেকে পণ্য সংগ্রহ করেন বিক্রেতারা।

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে কেনাকাটা শেষে অবশ্যই চেখে দেখবেন সেখানকার খাবার। আশপাশেই রয়েছে মোহাম্মদপুরের ঐতিহ্যবাহী সব স্ট্রিট ফুড, খানাপিনা। সন্ধ্যা নামলেই চাপ, কাবাব, ফালুদা, মোমো, দোসা আর চা-কফিতে জমজমাট। সেগুলোর দামও মানিব্যাগের স্বাস্থ্যের জন্য অনুকূল।

দ্বিতীয় আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, কৃষি মার্কেটে কেনাকাটা করলে মুঠোফোন, মানিব্যাগ সাবধানে রাখবেন। কম দামে জিনিস কিনতে গিয়ে যদি গয়না, টাকা বা ফোন হারিয়ে আসেন, এই প্রতিবেদক দায়ী থাকবে না!