বৃক্ষপ্রেমীরা জুন-জুলাই মাসের জন্য যেন অপেক্ষায় থাকেন। গাছ যাঁরা ভালোবাসেন, বাগান করেন, তাঁদের জন্য এই কয়টা দিন যেন উৎসবের। এই উৎসবের উপলক্ষ ‘জাতীয় বৃক্ষমেলা’। এবারের বৃক্ষমেলা ৫ জুন রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র (বিআইসিসি) সংলগ্ন মাঠে শুরু হয়েছে। মাঝখানে ঈদের ছুটির কটা দিন বন্ধ ছিল। বিরতির পর আবার শুরু হয়েছে। বন বিভাগ আয়োজিত এই মেলা চলবে আগামী ১৩ জুলাই পর্যন্ত।
বৃক্ষমেলার সুবিধা হলো এক সময়ে এক জায়গায় নানা রকম গাছ, গাছের চারা দেখা যায়, কেনা যায়। ফুল-ফল থেকে শুরু করে বনসাই, ঔষধি, অর্কিড, দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির বাহারি গাছে ভরা। এরই মধ্যে কিছু গাছের দাম হয়ে যায় আকাশচুম্বী। দুষ্প্রাপ্য কিছু গাছও থাকে। থাকে বিদেশ থেকে আসা আমাদের কাছে নতুন কিছু গাছ। গত রোববার বৃক্ষমেলা ঘুরে পাওয়া গেল আমবটের এক বনসাই বা বামন বৃক্ষ। নার্সারির মালিক এই গাছের দাম চাইছেন ১৩ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত দামের দিক থেকে এটাই সর্বোচ্চ। লাখ টাকার বেশি দাম—এমন আরও গাছ রয়েছে।
নার্সারির মালিক ও কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, দাম যা চাওয়া হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত সেটা খুব একটা কমে না। ক্রেতা মুলামুলি করে ৫ থেকে ১০ শতাংশ হয়তো কমাতে পারেন। কারা কেনেন এত দামি গাছ? জানা গেল, বৃক্ষপ্রেমী শিল্পপতি ও বড় ব্যবসায়ীরা এসব গাছ কেনেন। পাশাপাশি বেসরকারি পার্ক, রিসোর্ট কিংবা অভিজাত আবাসন প্রকল্পের জন্যও এমন গাছ কেনা হয়। রাজধানীর কৃষিবিদ উপকরণ নার্সারির ব্যবস্থাপক হামিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রজাতি, বয়স, আমদানি খরচ ও রক্ষণাবেক্ষণের ওপর নির্ভর করে গাছের দাম। আবার প্রথম প্রজন্ম হিসেবে দেশে কোনো গাছ এলে সেটারও দাম বেড়ে যায়। নানা কিছু মিলেই কিছু গাছের দাম লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়।’
বামন বৃক্ষ বা বনসাই শুধু তো গাছ নয়, একেকটা শিল্পকর্ম। আর পেছনে থাকে বছরের পর বছর ধরে পরিচর্যা, অধ্যবসায়ের গল্প। তাই দামে বনসাই এগিয়ে। এবারের মেলাতেও তা দেখা গেল। পঞ্চাশোর্ধ্ব বছর বয়সের বনসাই আমবট এনেছে হোসেন নার্সারি। গাছটির কাণ্ড বটের মতো আর পাতা আমপাতার মতো। আমবটটির দাম চাওয়া হচ্ছে ১৩ লাখ টাকা। এখানে বাওবাবগাছের ৩০ বছর বয়সী বনসাইয়ের দাম ৬০ হাজার টাকা।
বরিশাল নার্সারিতে আরেক ‘মিলিয়নিয়ার’ বনসাইয়ের দেখা মিলল। চীনের জিনসেংগাছের লম্বাটে এই বনসাইয়ের দাম হাঁকা হচ্ছে ১০ লাখ টাকা। এটা পাঁচ বছর আগে চীন থেকে আমদানি করা হয়েছে। একই গাছের একটু ছোট কয়েকটা বনসাইও এখানে আছে। আকারভেদে দাম ৪, ৬ ও ৮ লাখ টাকা।
আশুলিয়া গার্ডেন সেন্টারের স্টলে ফাইকাসের একটি বনসাইয়ের দাম সাড়ে ৫ লাখ টাকা। বিক্রেতা বলছেন, ৫ লাখ টাকা হলে ছেড়ে দেবেন। ফাইকাসেরই ৪৫ বছর বয়সী বনসাই এনেছে কিশোরগঞ্জ নার্সারি। দাম হাঁকা হচ্ছে ৫ লাখ টাকা। এখানে জিনসেং বটের বনসাইও আছে একটা। দাম আড়াই লাখ টাকা। থাইল্যান্ডের প্যাগোডাট্রির বনসাই এনেছে লেকভিউ গার্ডেন সেন্টার। দাম চাওয়া হচ্ছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। ৯ বছর ধরে বাংলাদেশেই চলেছে এর পরিচর্যা। ২৬ বছর বয়সী বেশ বড়সড় প্রাকৃতিক বনসাই অ্যাডেনিয়ামের দাম ১ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে রিকল গ্রিন। অ্যাডেনিয়াম প্রজাতির ৩০ বছর বয়সী একটা অ্যারাবিকামগাছ আছে গ্রিন বাংলায়। দাম ১ লাখ ৭০ টাকা। এর ফুলের রং গোলাপি।
আশুলিয়া গার্ডেন সেন্টারের স্টলে ফাইকাসের একটি বনসাইয়ের দাম সাড়ে ৫ লাখ টাকা। বিক্রেতা বলছেন, ৫ লাখ টাকা হলে ছেড়ে দেবেন। ফাইকাসেরই ৪৫ বছর বয়সী বনসাই এনেছে কিশোরগঞ্জ নার্সারি। দাম হাঁকা হচ্ছে ৫ লাখ টাকা। এখানে জিনসেং বটের বনসাইও আছে একটা। দাম আড়াই লাখ টাকা। থাইল্যান্ডের প্যাগোডাট্রির বনসাই এনেছে লেকভিউ গার্ডেন সেন্টার। দাম চাওয়া হচ্ছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। ৯ বছর ধরে বাংলাদেশেই চলেছে এর পরিচর্যা। ২৬ বছর বয়সী বেশ বড়সড় প্রাকৃতিক বনসাই অ্যাডেনিয়ামের দাম ১ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে রিকল গ্রিন। অ্যাডেনিয়াম প্রজাতির ৩০ বছর বয়সী একটা অ্যারাবিকামগাছ আছে গ্রিন বাংলায়। দাম ১ লাখ ৭০ টাকা। এর ফুলের রং গোলাপি।
মনে হতে পারে শুধু বিদেশি গাছেরই বুঝি বনসাই হয়। দেশি বনসাইও দেখা গেল মেলায়। গ্রিনল্যান্ড নার্সারি ১০ বছর বয়সী হিজলের বনসাই এনেছে। দাম ১ লাখ টাকা। এখানে ৮০ হাজার টাকা চাওয়া হচ্ছে একটি দেশি বটের বনসাই। দেশি বটের আরেকটি বনসাই দ্বীপ গার্ডেনে। ৩৫ বছর বয়সী এই গাছের দাম ১ লাখ ২০ হাজার। তেঁতুলগাছের বেশ সুন্দর বনসাই নজর কাড়ল মুক্তাগাছার বনরূপা নার্সারিতে। ১৫ থেকে ১৬ বছর বয়সী এই তেঁতুল বনসাইয়ের দাম ৭০ হাজার টাকা।
এবারের মেলায় দেখা যাচ্ছে পোডোকারপাস বা পাম পাইনগাছের বনসাই। ব্র্যাক নার্সারিতে ৩৫ বছর বয়সী পোডোকারপাস বনসাইয়ের দাম ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। কিংশুক গ্রিনহাউসে একই গাছের বনসাইয়ের দাম দেড় লাখ টাকা। ব্র্যাকে ৩০ বছর বয়সী চীনা বটের বনসাই আছে, দাম দেড় লাখ টাকা।
কয়েক বছর ধরেই সৌদি আরবের খেজুরগাছ ও চারার চাহিদা বেশ। খেজুর ধরা গাছগুলোর দামও বেশি। সৌদি আরবের আল-বারহি জাতের খেজুরের একটা গাছ ফলসহ বিক্রি করছে খান নার্সারি। দাম চাওয়া হচ্ছে আট লাখ টাকা। বিক্রয়কর্মী জানালেন, সাত বছর বয়সী গাছটির দাম এখন পর্যন্ত ছয় লাখ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। তবে সাড়ে সাত লাখ টাকার কমে দেবেন না বিক্রেতা। আশুলিয়া গার্ডেন সেন্টারে ফলসহ একটা মিডজোন খেজুরগাছের দাম সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা। বয়স ২৮ মাস। কৃষিবিদ উপকরণ নার্সারিতে টিস্যু কালচার করে বড় করা হয়েছে সৌদি খেজুরের একটি গাছ। তিন বছর বয়সী এই গাছের দাম দেড় লাখ টাকা। নরসিংদী খাদিজা রাবেয়া নার্সারিতে আল-বারহি জাতের একটা খেজুরগাছের দাম তিন লাখ টাকা। এই গাছের বয়স আনুমানিক ১০ বছর।
বৃক্ষমেলায় কত পদের আমগাছ ও চারার যে দেখা মেলে, তা গুনে শেষ করাও কঠিন। তবে দামে এগিয়ে থাইল্যান্ডের চিয়াং মাই জাতের আম। রাশিদা নার্সারির ফল ধরা একটা চিয়াং মাই আমগাছের দাম ৪০ হাজার টাকা।
সাভারের ডিসি নার্সারির স্টলে দেখা গেল থাইল্যান্ডের এগফ্রুটগাছ। ফলসহ দাম দেড় লাখ টাকা। এখানে চাকাপাত লিচুর একটা গাছ পাওয়া গেল, দাম দেড় লাখ টাকা। এই স্টলেই একটা নারকেলগাছে হলুদ ডাব ধরে আছে। কেরালা জাতের এই নারকেলগাছের দাম হাঁকা হচ্ছে ৩ লাখ টাকা। এখানে আছে আঠাহীন কাঁঠাল। ফলসহ গাছটির দাম ৪০ হাজার টাকা।
বরিশাল নার্সারিতে আছে ফলসহ পার্সিমনগাছ। দাম ৪০ হাজার টাকা। চারার দাম ২ হাজার টাকা। এখানে বিচি ছাড়া লিচুগাছও রয়েছে। থাইল্যান্ড থেকে আসা এই গাছে লিচু ধরে আছে। দাম ৬ হাজার টাকা। চারার দাম ১ হাজার টাকা করে। ফিলিপাইন থেকে আনা আঙুরগাছ দেখা গেল হীরা নার্সারিতে। থোকায় থোকায় ধরে আছে আঙুর। দাম ১ লাখ টাকা।
বাগানবিলাস পছন্দ অনেকেরই। বাড়ির শোভা বর্ধনের এটি অনন্য। হীরা নার্সারিতে বাগানবিলাসের একটি গাছেই ফুটে আছে কমলা, লাল, গোলাপি, সাদাসহ ছয় রঙের ফুল। বড়সড় গাছটির দাম দেড় লাখ টাকা। জাপান থেকে জ্যামিয়া পামট্রি এনেছে লেকভিউ গার্ডেন সেন্টার। দাম ৪০ হাজার টাকা।
নরসিংদী খাদিজা রাবেয়া নার্সারিতে চোখে পড়ল ছোট আকারের বাঁশ। এর কাণ্ডের প্রতিটি গিঁট ছোট ছোট কলসির মতো। ভারত থেকে আনা হয়েছে কলসি বাঁশ। দাম দেড় হাজার টাকা। মেক্সিকোর বড় আকারে গুল্ম-জাতীয় গাছ সেঞ্চুরি পাওয়া গেল অমনি গ্রিনের স্টলে। শতবর্ষ বাঁচে বলে এর নাম সেঞ্চুরি। বেশ কয়টি গাছ আছে অমনিতে। সবচেয়ে বড়টির দাম ৫০ হাজার টাকা। ছোটগুলো ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা করে।
জাতীয় বৃক্ষমেলা বিনা মূল্যেই ঘুরে দেখা যায়। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে।