আম্বানির মতো ধনীদের উপহার হিসেবে কী দেওয়া যায়

এমন কাউকে না কাউকে আমরা প্রত্যেকেই চিনি, যাঁর অঢেল সম্পদ। সোজা বাংলায় যাকে বলে অতিধনী। তাঁদের কারও কারও সঙ্গে হয়তো আমাদের আত্মীয়তার সম্পর্কও থাকে। সংখ্যায় কম হলেও এ ধরনের লোকজনকেও তো মানুষ উপহার দেয়, সে ক্ষেত্রে উপহার হিসেবে তাঁরা কী বেছে নেন? ভারতীয় ব্যবসায়ী এবং বিশ্বের সবচেয়ে ধনীদের একজন মুকেশ আম্বানির ছোট ছেলে অনন্ত আম্বানি ও রাধিকা মার্চেন্টের প্রাক্‌–বিবাহ আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে এখন। হলিউড–বলিউড তারকা থেকে শুরু করে বিল গেটস, মার্ক জাকারবার্গের মতো ধনকুবেরেরাও সেখানে আমন্ত্রিত অতিথি। ধরা যাক, এই অতিথির তালিকায় আপনিও আছেন। কোন উপহারটা কিনবেন আপনি? দেখে নিন যাঁর সব আছে, তাঁকে উপহার হিসেবে কী কী দেওয়া হয়...

সাধ্যের মধ্যে

আমাদের দেশে প্রভাবশালী ব্যক্তিকে নিজের গাছের কলাটা–মুলাটা কিংবা নদীর সবচেয়ে বড় মাছটা উপহার দেওয়ার চল আছে। তবে একে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উপহার না বলে আমরা বলি ‘ঘুষ’। ফলে এ প্রসঙ্গ বাদ। আমরা বরং নিখাদ উপহার প্রসঙ্গেই থাকি। এ ক্ষেত্রে ফুল কিংবা বই কিন্তু উপহার হিসেবে দারুণ। খুব সাধারণ মনে হলেও এই উপহার দুটি আপনি দিতে পারেন অনায়াসে। যিনি বই ভালোবাসেন, তিনি কোন বই পড়েছেন আর কোন বই পড়েননি, আগেভাগেই তা একটু কায়দা করে জেনে রাখতে পারলে ভালো।

ফুল বা বই হতে পারে সাধ্যের মধ্যে সেরা উপহার

লেখার জন্য চমৎকার কলমও দিতে পারেন। তাঁর হয়তো অনেক কলম আছে, কিন্তু বিশেষ একটা কলম সেই সংগ্রহে যুক্ত হলে তো ক্ষতি নেই। আপনি সৃজনশীল কাজে আগ্রহী হলে তো খুবই ভালো। নিজেই ছোটখাটো কিছু তৈরি করে ফেলতে পারেন। বুদ্ধি খাটিয়ে, শ্রম দিয়ে দারুণ কোনো উপহার দিতে পারলে নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার হবেন। এ ক্ষেত্রেও উপহারের জন্য অনেক বেশি খরচ না করলেও চলে। ধরা যাক, যাঁকে উপহার দেবেন, তিনি আপনার বন্ধুপ্রতিম। আপনি নিজ হাতে কিছু বানিয়ে দিলে তা কিন্তু অনেক দামি উপহারের চেয়েও মূল্যবান হয়ে উঠবে তাঁর কাছে। আপনার গাছে সুন্দর একটি ফুল ফুটে থাকলে, সেটিও তাঁর জন্য দারুণ উপহার হয়ে উঠতে পারে। কারণ, ফুলটি আপনার যত্নের ফসল।

অতিধনীরা অতিধনীদের যেসব উপহার দেন

ওপরে তো বলা হলো সাধারণ মানুষ অতিধনীদের কী উপহার দিতে পারেন, তার ফিরিস্তি। তবে বাস্তবতা হলো অতিধনীদের বিয়ে বা কোনো আয়োজনে মূলত অতিধনীরাই উপহার দেন। সে ক্ষেত্রে তাঁরা কী বেছে নেন? দেখে নিন এই তালিকাও—

ব্ল্যাক আইভরি কফি

ব্ল্যাক আইভরি কফি

এর বাংলা অর্থ ‘হাতির গোবরের কফি’। নাক সিটকাবেন না! দুনিয়ার বিরল এবং সবচেয়ে দামি কফি হিসেবে এর সুনাম দিকে দিকে। বিলাসবহুল তো বটেই, স্বাদেও নাকি অনন্য। এই কফি আসে থাইল্যান্ডের প্রত্যন্ত এক গ্রাম থেকে। সেখানকার হাতিরা অ্যারাবিকা কফির ফল খেয়ে মলত্যাগ করে, আর সেখান থেকে সংগ্রহ করা হয় কফি বিন! বছরে এর উৎপাদন মাত্র ২২৫ কেজি। চাইলেই যে কেউ এর স্বাদ নিতে পারে না। প্রতি কেজি ব্ল্যাক আইভরি কফি কিনতে খরচ করতে হয় ২ হাজার ডলার।

ল্যাম্বরগিনি হরাকন

ল্যাম্বরগিনি হরাকন

অতিধনীদের জন্য মোক্ষম এক উপহার। ঐশ্বর্য কিংবা বিলাসিতার প্রতীক বলতে পারেন একে। পাশাপাশি গাড়িটির কর্মক্ষমতাও তাক লাগানোর মতো। এর ইঞ্জিন শক্তিশালী তো বটেই; আওয়াজও সমীহজাগানিয়া; মাত্র ৩.২ সেকেন্ডে ০ থেকে গতি ওঠে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার। ঘণ্টায় ৩২৫ কিলোমিটার এর সর্বোচ্চ গতি। চাইলে একে নিজের মতো করে সাজিয়ে নেওয়া সম্ভব। দাম ২ লাখ ৪৯ হাজার ৮৬৫ ডলার ‘মাত্র’!

মহাকাশ ভ্রমণের টিকিট

ভার্জিন গ্যালাকটিকের মহাকাশযান

অতিধনীদের পকেটের পয়সা খরচের নতুন খাত হিসেবে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে মহাকাশ ভ্রমণ। উপহার হিসেবে যা দারুণ। প্রশ্ন হলো, টিকিট পাবেন কোথায়? এ ক্ষেত্রে সবার আগে বলতে হয় ব্রিটিশ–মার্কিন বাণিজ্যিক মহাকাশ ফ্লাইট কোম্পানি ভার্জিন গ্যালাকটিকের কথা। এদের সঙ্গে মহাকাশে উড়াল দেওয়ার আগে প্রশিক্ষণের ব্যাবস্থাও আছে। আর এর টিকিট কিনতে গুনতে হয় আড়াই থেকে সাড়ে চার লাখ ডলার।

উল্কাপিণ্ডের মানিব্যাগ

বিজেটির তৈরি উল্কাপিণ্ডের মানিব্যাগ

অতিধনীরাও মানিব্যাগ ব্যবহার করেন। স্বাভাবিকভাবেই তাঁদেরটা ‘চামড়ার মানিব্যাগ ১০০ টাকা’ ব্র্যান্ডের নয়। তাঁদের মানিব্যাগ তৈরি হয় প্রাণীর অতি মূল্যবান চামড়া দিয়ে, মূল্যবান রত্ন–পাথরও বসানো থাকে কোনো কোনোটিতে। তবে ইদানীং মার্কিন মুলুকের বিজেটি নামের এক কোম্পানি এনেছে উল্কাপিণ্ড দিয়ে তৈরি মানিব্যাগ। বিশেষণ হিসেবে এর আগে কেবল ‘বিলাসবহুল’ শব্দটি বড্ড বেমানান, ‘বিরল এবং মহাজাগতিক’ বললেও বরং কিছুটা মান রক্ষা হয়। বুঝতেই পারছেন, অতিধনীদের কাছে এ এক অন্য রকম উপহার। হাতে তৈরি এই মানিব্যাগ বানাতে উল্কাপিণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করা হয় লোহা ও নিকেল। এতে ব্যবহৃত উল্কাপিণ্ডের টুকরার বয়স জানেন? ৪ বিলিয়ন বছরের বেশি! বিজেটির ওয়েবসাইটে দেখা যাচ্ছে (৪ মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত), আর মাত্র তিনটি মানিব্যাগ আছে কেনার মতো। একেকটির দাম সাড়ে ২৯ হাজার ডলার!

অ্যাস্ট্রোনমিয়া স্কাই ইয়েলো স্যাফায়ার

অ্যাস্ট্রোনমিয়া স্কাই ইয়েলো স্যাফায়ার

এটি স্রেফ ‘টাইমপিস’ নয়; বিশ্বখ্যাত মার্কিন অলংকার ও ঘড়ি নির্মাতা কোম্পানি জ্যাকব অ্যান্ড কোম্পানির এই ঘড়িকে বলা হয় ‘মাস্টারপিস’। ঐশ্বর্য এবং প্রজ্ঞার প্রতীকও বলা হয় একে। এই বিলাসবহুল ঘড়িতে সময় তো দেখা যায়ই; এতে আছে মহাকাশের নক্ষত্রমালার অবস্থান। ঘড়ির ঠিক মাঝখানে আছে টাইটেনিয়ামের গ্লোব, যেটিকে চাঁদ হিসেবে প্রদক্ষিণ করছে একটি ২৮৮ মুখী জ্যাকব–কাটের হলুদ নীলকান্তমণি। ১৮ ক্যারেট গোলাপি সোনার কেস এবং স্ফটিক নীলকান্তমণিতে মোড়ানো ঘড়িটির জটিল গতিবিধি চোখধাঁধানো। এই ঘড়ি তৈরি হয় মূলত সীমিত সংস্করণে। জ্যাকব অ্যান্ড কোম্পানির ওয়েবসাইটে ঢুঁ মেরে (৪ মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত) দেখা গেল, মাত্র ১৮টি ঘড়ি আছে কেনার মতো। দাম কোথাও লেখা নেই। কিনতে চাইলে ই–মেইল করুন!