বাদশাহ কেন রোলস–রয়েস কিনেছিলেন জানেন?

আপনি কি আদিত্য প্রতীক সিং নামে কাউকে চেনেন? চেনেন না তো? এটি র‍্যাপার বাদশাহর আসল নাম। ডাকনাম প্রিন্স।

২০১৫ সালে ‘ডিজেওয়ালা বাবু’ মুক্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইন্ডিয়ান আই টিউনস ও স্পোটিফাইয়ের ১ নম্বরে চলে যায়। প্রথম ৩০ ঘণ্টায় গানটি ইউটিউবে ১ কোটিবার দেখা হয়েছে। ৮ বছর আগে সনি মিউজিক ইন্ডিয়া থেকে মুক্তি পাওয়া এই গানটি এখন পর্যন্ত (২৭ জুন) দেখা হয়েছে প্রায় ৫০ কোটিবার। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকানোর সুযোগ বিশেষ থাকে না! হয়নিও। একের পর এক উপহার দিয়েছেন ‘স্যাটারডে স্যাটারডে’, ‘কার গ্যায়ি চুল’, ‘কালা চশমা’, ‘আভি তো পার্টি শুরু হুয়ি হ্যায়’, ‘গেন্দা ফুল’–এর মতো জনপ্রিয় সব গান। জেনে নেওয়া যাক, ভারতের জনপ্রিয় এই র‍্যাপারের জীবনযাপন, বেড়ে ওঠা, বাড়ি, গাড়ি আর সম্পদের বিবরণ।

১৯৮৫ সালের ১৯ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে একেবারেই মধ্যবিত্ত পরিবারে বাদশাহর জন্ম। বাবা রাজপুত, মা পাঞ্জাবি। বাবা সরকারি কর্মকর্তা, মা শিক্ষিকা। বাদশাহর একটা ছোট বোন আছে, নাম অপরাজিতা সিং
বাদশাহর বাবা চেয়েছিলেন ছেলে আইএএস (ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস) অফিসার হোক। আর এ দিকে বাদশাহ পাঞ্জাব ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে র‍্যাপ গান লেখা শুরু করেন। ২০০৬ সালে ২১ বছর বয়সে যোগ দেন ইয়ো ইয়ো হানি সিংয়ের সঙ্গে, র‍্যাপ ব্যান্ড ‘মাফিয়া মান্ডির’–এ। বাদশাহ ও বলিউড তারকা জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজ
কথিত আছে, সেই সময় চাকরির পাশাপাশি এই ব্যান্ডের জন্য লিখতেন বাদশাহ। আবার এই ব্যান্ডের গান মুক্তি দেওয়ার জন্য টাকাও বিনিয়োগ করতে হতো। ‘গেট আপ জাওয়ানি’ গানের জন্য বাদশাহ তাঁর বাবার কাছ থেকে টাকা ধার করে হানি সিংকে দেন। লিরিক লিখে, র‍্যাপ করে, ১০ লাখ রুপি দেওয়ার পর এই গান হিট করলে সমস্ত কৃতিত্ব নিয়ে নেন হানি সিং। সেই সময় বাদশাহ ব্যান্ড ছেড়ে দেন বাদশাহ আর হানি সিংয়ের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে
হানি সিং বাইপোলার ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৫ বছরের বিরতি নেন
অন্যদিকে ব্যান্ড থেকে বেরিয়ে বাদশাহ এককভাবে গান মুক্তি দেন। আর একের পর এক হিট গান উপহার দিয়ে ভারতের র‍্যাপারদের ভেতর একেবারে প্রথম অবস্থানে উঠে আসেন
পাঁচ বছর পর হানি সিং নতুন গান নিয়ে ফেরার পর সংবাদ সম্মেলনে একজন জিজ্ঞেস করে, ‘আপনার অবর্তমানে তো বাদশাহ মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে জায়গা দখল করে নিয়েছেন। আপনি কি ১ নম্বরে ফিরতে পারবেন?’ হানি সিং উত্তর দেন, ‘আপনি কখনো রোলস–রয়েস চালিয়েছেন? রোলস–রয়েস আর (টাটা) ন্যানো তো আর এক না। পার্থক্য আছে।’ অর্থাৎ, হানি সিং নিজেকে রোলস–রয়েস দাবি করেছেন আর বাদশাহকে ‘ন্যানো’। হানি সিং
কিছুদিন পরেই বাদশাহ ৬ কোটি ৪০ লাখ রুপি দিয়ে একটা রোলস–রয়েস কেনেন। আর সেই গাড়ি নিয়ে গান লেখেন। গানের মিউজিক ভিডিওতে গাড়িটি দেখা যায়। বাদশাহর বাবা, মা ও বোন
পুরোদস্তুর ‘ফ্যামিলি ম্যান’ হিসেবে নামডাক আছে বাদশাহর। ছবিতে বোনের সঙ্গে
বাদশাহের গাড়ির সংগ্রহে আরও আছে ল্যাম্বরগিনি গ্যালার্ডো। ৩ কোটি রুপি দিয়ে গাড়িটি কিনেছিলেন তিনি
২ কোটি ২০ লাখ রুপি দিয়ে কিনেছেন মার্সিডিজ বেঞ্জ
বিএমডাব্লিউ ৬৪০ডি কেনেন ১ কোটি ১৫ লাখ রুপি দিয়ে
গাড়ি সংগ্রহের বাতিক আছে বাদশাহর। এ ছাড়াও তাঁর আরও কয়েকটি বিলাসবহুল গাড়ি আছে
গাড়ির সঙ্গে সঙ্গে দিল্লিতে বাদশাহর বিলাসবহুল বাড়ি আছে
সেখানে আধুনিক জিম, মিউজিক্যাল স্টুডিও, সুইমিং পুল সবই আছে। বাড়িটির দাম কমপক্ষে ১৫ কোটি রুপি
বলিউডের সিনেমায় প্রতিটি গানের জন্য বাদশাহ ২০ থেকে ২৫ লাখ রুপি পারিশ্রমিক নেন। বাদশাহ ও বলিউড তারকা জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজ
এ ছাড়া টেলিভিশন শো, লাইভ কনসার্ট, টি সিরিজের সঙ্গে চুক্তি, এন্ডোর্সমেন্ট, নিজের ফ্যাশন হাউজ ব্যাডফিট, ড্রাগনফ্লাই আর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বাদশাহ প্রোডাকশন থেকেও আয় করেন তিনি
টাইমস অব ইন্ডিয়ার ২০২৩ সালের জুন মাসের প্রতিবেদন অনুসারে বাদশাহ ৫৫ কোটি রুপির মালিক

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্য বিজনেস পোস্ট ও রেডিও মিরচি