হু হু করে বাড়ছে সোনার দাম। ঠিক এই মুহূর্তে কিনতে চাইলে ২২ ক্যারেট সোনার ভরিপ্রতি গুনতে হবে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৮ টাকা। ২১ ক্যারেট হলে ১ লাখ ২৯ হাজার ৫০৫ টাকা। ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১০ হাজার ৯৯৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরির দাম পড়বে ৯১ হাজার ৩৮ টাকা। এর সঙ্গে যোগ হবে মজুরি ও কর।
সহজ কথায়, যা দাম দিয়ে কিনতে হয় আর (পরবর্তী সময়ে প্রয়োজন হলে) ভালো দামে বিক্রি করা যায়, তা–ই সম্পদ। সম্পদের মূল উদ্দেশ্য আপৎকালীন প্রয়োজন মেটানো ও আরও সম্পদ তৈরি। সেই হিসাবে জমি, ফ্ল্যাট, বাড়ি, গাড়ি ইত্যাদি সবই সম্পদ। স্বর্ণ বা সোনাকে সাধারণত সম্পদ কম, শখের জিনিস হিসেবেই গণ্য করা হয় বেশি।
ট্রেডিং ইকোনমিকসের তথ্য মোতাবেক, এ বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত (৩ অক্টোবর পর্যন্ত) সোনার দাম বেড়েছে ২৮ দশনিক ৮৯ শতাংশ। বোঝাই যাচ্ছে, সোনা একবার কিনতে পারলে ক্ষতির ভয় নেই। কেননা আর কিছুর দাম কমুক বা না কমুক, সোনার দাম কমার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
গয়না ছাড়াও সোনা কিনে রাখা ভালো বিনিয়োগ
সম্পদ হিসেবে সোনা কিনতে চাইলে যে গয়নাই কিনতে হবে, বিষয়টা আজকাল আর এমন নেই, জানান অনলাইনভিত্তিক গোল্ড কেনাবেচা অ্যাপ ‘গোল্ড কিনেন’–এর প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আতেফ হাসান। তিনি বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই মানুষ সম্পদ হিসেবে বার, বিস্কুট ও পয়সারূপে সোনা সংগ্রহে রাখেন। আমরা সে ক্ষেত্রে কিছুটা পিছিয়ে আছি। ব্যবহারের জন্য নয়, বরং নিছকই সম্পদ হিসেবে সোনা কিনে সময়মতো ভালো দামে বিক্রি করে লাভবান হওয়া সম্ভব। এ ক্ষেত্রে তুলনামূলক কম পরিমাণ সোনার পয়সা, বার, বিস্কুট কিনে সংগ্রহ করতে পারেন।
সনাতন সোনার দাম কি সত্যিই কম
পুরোনো গয়না বদলে সঙ্গে বাড়তি টাকা দিয়ে নতুন গয়না নিতে চান অনেকে। সে ক্ষেত্রে বংশপরম্পরায় দাদি-নানির কাছ থেকে পাওয়া পুরোনো সোনার গয়না বিক্রি করতে গেলে দেখা যায়, এর দাম নতুন সোনা থেকে অনেকটাই কম। ব্যবসায়ীরা বলেন, এটি সনাতন সোনা হওয়ায় দাম কিছুটা কম। এ ক্ষেত্রে সব মিলিয়ে বিক্রির দামটা গ্রাহকদের ঠিক মনে ধরে না।
বিশ্ববাজারে ডলারের মূল্য ওঠানামা, তেলের দাম, মুদ্রাস্ফীতিসহ নানা সংকটের কারণে সোনার দাম একেক সময় একেক রকম হয়। সেই অনুযায়ী বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) যখন যে দাম নির্ধারণ করে, দেশের যেকোনো জায়গায় সে দামেই সোনা বিক্রি হয়। নতুন, সনাতন—সব ধরনের সোনার দামও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।
নিয়ম হচ্ছে, পুরোনো সোনার গয়না বিক্রি করতে গেলে কেনা দামের ১৭ শতাংশ কম দেওয়া হবে। বদলাতে গেলেও একই। যাঁরা পুরোনো সোনার দাম কম বলে আফসোস করেন, তাঁদের উদ্দেশে প্রীতম জুয়েলার্সের স্বর্ণকার প্রকাশ বললেন, বিশ–তিরিশ বছর আগে এই গয়নাগুলো যে দামে কেনা হয়েছিল, এখন তার তিন–চার গুণ বেশি দাম পাচ্ছেন। সম্পদ বিচারে এ ক্ষেত্রে লাভই হচ্ছে।
পুরোনো অলংকারেও ভালো লাভ
বাংলাদেশ যে বছর স্বাধীন হয়, তার আগের বছর সোনার ভরি ছিল ১৫৪ টাকা। আর এখন ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৮ টাকা। তার মানে গত ৫৪ বছরে দাম বেড়েছে ৭০০ গুণ। ফলে পুরোনো সোনার অলংকারের দামও আনুপাতিক হারে বেড়েছে।
সাধারণত পুরোনো অলংকার জুয়েলার্সে বিক্রি করতে গেলে তারা ওজন করার পর তা কোন ক্যারেটের সোনা, সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়। এরপর অলংকারটির বর্তমান ওজন থেকে ১৭ শতাংশ বাদ দিয়ে মূল্য নির্ধারণ করা হয়। দুই সপ্তাহ আগেও হারটি ছিল ২০ শতাংশ। গত ১৫ সেপ্টেম্বর হারটি ৩ শতাংশ কমায় জুয়েলার্স সমিতি।
ধরা যাক, কারও কাছে ২০২০ সালে ৬৯ হাজার ৮৬৭ টাকা ভরিতে কেনা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার অলংকার রয়েছে। সেটি বিক্রি করলে বর্তমানে ভরিপ্রতি পাওয়া যাবে ১ লাখ ১৫ হাজার ১২৭ টাকা। তাতে মুনাফা দাঁড়ায় ৪৫ হাজার ২৬০ টাকা।
একইভাবে সোনার দাম বাড়লে জুয়েলার্স ব্যবসায়ীদেরও লাভ হয়। ধরা যাক, গত জানুয়ারিতে একজন ব্যবসায়ী ২২ ক্যারেটের এক ভরির একটি অলংকার তৈরি করেন। তখন সোনার ভরি ছিল ১ লাখ ১১ হাজার টাকা। এখন সেই অলংকার বিক্রি করলে বর্তমান সময়ে শুধু সোনার দামই বেশি পাবেন ২৮ হাজার টাকা।
সোনার দাম যতই বেড়েছে, পাল্লা দিয়ে কমেছে বেচাকেনা। তবে সোনা সম্পদ হিসেবে কেমন, এই প্রশ্নের যদি এককথায় উত্তর দিতে হয়, তাহলে বলতেই হবে, ‘বেশ ভালো।’