কোরবানির ছুরি–চাকুসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনতে যেমন খরচ পড়বে

যত দিন যাচ্ছে কোরবানির পশুর জন্য প্রস্তুত হচ্ছে হাট আর মাংস কাটার যাবতীয় সরঞ্জাম নিয়ে দোকানপাট। ছুরি থেকে শুরু করে দা-বঁটিসহ আরও কত কী–ই না দরকার হয়। এখানে থাকল তেমনি সব দরকারি উপকরণের খোঁজখবর।

ছুরি

পশু কোরবানির অন্যতম অনুষঙ্গ ছুরি। বাজারে পাওয়া যাচ্ছে জবাইয়ের ছুরি থেকে শুরু করে প্রায় সব রকমের ছুরি। জবাইয়ের ছুরি আকারে লম্বা আর তীক্ষ্ণ ধারালো হয়। আকার ও ওজনভেদে পাওয়া যাবে ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায়। চামড়া ছাড়ানো থেকে শুরু করে হাড়, মাংস ছাড়ানোর জন্য প্রয়োজন ধারালো ছুরি ও চাকু। কাঠ, প্লাস্টিক কিংবা ধাতব হাতলের নানা ধরনের ছোট-বড় ছুরি রয়েছে বাজারে। পাবেন ১০০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা।

মাংস কাটার জন্য দা-বঁটি কেনার আগে যথেষ্ট ধার আছে কিনা পরখ করে নিন

দা-বঁটি

ছুরিতে ছাড়িয়ে আনা মাংস কাটার জন্য লাগবে দা-বঁটি। কেনার সময় যথেষ্ট ধার আছে কিনা পরখ করে নিন। তেমনি হাত-দায়ের হাতল শক্ত আছে কিনা, নিশ্চিত হয়ে নেবেন। বঁটি কেনার সময় সমতল মেঝেতে বসিয়ে দেখবেন, ঠিকভাবে বসছে কিনা। অনেক সময় বঁটির পা দুটি আকারে সামান্য ছোটবড় হওয়ায় মাংস কাটার সময় নড়াচড়া করে। তাই সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে। আকার, আকৃতি ও ওজনভেদে দা-বঁটির দামে হেরফের হয়। দা ৪০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা, বঁটি ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা।

চাপাতি

চাপাতিরও আছে রকমফের। পাবেন ৬০০ টাকা থেকে ২ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে। বাজার থেকে কেনার পাশাপাশি চাইলে কামারের দোকান থেকে ফরমায়েশ করে বানিয়েও নিতে পারেন। তবে রাজধানী ঢাকার বেশির ভাগ বাসিন্দাই কোরবানির মাংস বানানোর ক্ষেত্রে কসাইয়ের ওপর নির্ভরশীল, হাড় কাটার চাপাতির ব্যবস্থা সাধারণত তাঁরা নিজেরাই করে থাকেন।

কিমা বানানোর যন্ত্র

মাংসের কিমা বানানোর জন্য বাজারে দুই রকমের কিমা করার যন্ত্র পাবেন। টেবিলে বা শক্ত কোনো কাঠামোতে কিমা মেশিন আটকে হাতল ঘুরিয়ে মাংস কিমা করতে পারবেন। আবার স্বয়ংক্রিয়ভাবেই মাংস কিমা হবে, এমন ইলেকট্রিক কিমা মেশিনও আছে। হাতে চালানো কিমা মেশিনের দাম ৭০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা। আর ইলেকট্রিক কিমা মেশিন ১ হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা।

মাংস থেঁতলানো ও নরম করার হাতুড়ি

হাতুড়ি ও চিজেল

মাংস থেঁতলানো ও নরম করার জন্য রয়েছে হ্যামার ও চিজেল। প্লাস্টিক ও স্টিল, দুই ধরনের হাতুড়িই আছে। পাবেন ৩৫০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকায়। আর চিজেলের দাম শুরু ৪০০ টাকা থেকে।

গাছের গুঁড়ি ও চপিং বোর্ড

বড় আকারে মাংস ও হাড় কাটার জন্য চপিং বোর্ড হিসেবে ব্যবহৃত হয় গাছের গুঁড়ি। বিশেষ করে তেঁতুলগাছের গুঁড়ি। ঈদের দিন তিন-চারেক আগে থেকেই বাজার ও হাটে মিলবে ২০০ থেকে ৫০০ টাকার এসব গুঁড়ি। আর ছোট আকারে মাংস কাটার জন্য চপিং বোর্ড হিসেবে ব্যবহৃত হয় সাধারণত মোটা সাদা রঙের প্লাস্টিক পণ্য। বাজারে এখন বাঁশের তৈরি চপিং বোর্ডও বেশ জনপ্রিয়। পাবেন ২৫০ টাকা থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায়। এ ছাড়া কাঠের আসবাব তৈরির দোকানে ফরমায়েশ করে বানিয়ে নিতে পারেন কাঠের তৈরি চপিং বোর্ড।

কাঠের খাইট্টা বা গুঁড়ি ব্যবহার করা হয় কোরবানির মাংস ও হাড় কাটার কাজে

মসলা পেষার যন্ত্র

ঘড়ঘড় শব্দে মুহূর্তেই মসলা পেষার কাজটা করে দেবে ঘূর্ণমান স্টিলের কাঁটা। মেশিনের আকার ও স্টিলের কাঁটার সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে দামের ভিন্নতা দেখা যায়। পাবেন ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৬ হাজার টাকায়। আর ৩৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে কিনতে পারবেন পাটা-পোঁতা। অনেক পাটার ওপর নকশা খোদাই করা থাকে। তবে ছড়ানো–ছিটানো খোদাই করা নকশার চেয়ে উপরি ভাগের সর্বত্র সমানভাবে খোদাই করা আছে, এমন পাটা বেছে নেওয়া ভালো।

বারবিকিউ চুলা

কোরবানির মাংস দিয়ে ঈদের ছুটিতে অনেকে কাবাব বানিয়ে খেতে চাইবেন। কাবাব শিকের সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে ছোট-বড় বারবিকিউ চুলা পাবেন। রয়েছে ৪, ৫, ১০, ১২, ১৬ ও ২০ শিকের চুলা। ৪ শিকের ছোট চুলার দাম ৫০০ টাকা। ২০ শিকের বড় চুলার দাম পড়বে ২০০০ টাকা (চিকন শিক) থেকে ৫০০০ টাকা (মোটা শিক) পর্যন্ত। চাইলে আলাদাভাবে শিকও কিনতে পারবেন, প্রতিটির দাম ২০ থেকে ৫০ টাকা। মাংসে তেল মাখানোর ব্রাশ ৩০ থেকে ৮০ টাকা। ৪০০ টাকা থেকে ৫৫০ টাকায় পাবেন ইস্পাতের তারজালির ক্লিপ। শুধু তা ই না, চুলাতে আগুন ধরানোর কয়লাও এসব দোকান থেকেই পেয়ে যাবেন। কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা। আর কয়লা ও ধোঁয়ার ঝামেলা এড়াতে চাইলে নিতে পারেন বৈদ্যুতিক বারবিকিউ চুলা, পাবেন ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৭ হাজার ৯০০ টাকার মধ্যে।

বারবিকিউ চুলা

অন্যান্য

মাংস কাটার সময় ধুলাবালুর হাত থেকে রক্ষা পেতে বিছিয়ে নিতে পারেন হোগলা পাতার চাটাই, কাটা মাংস রাখতে নিতে পারেন বাঁশের টুকরি। নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য-প্রস্থের হোগলা পাতার বিছানা ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকায় আর টুকরি ৫০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায় পাবেন।

গতবারের ব্যবহৃত দা-ছুরিগুলোতে যদি মরিচা পড়ে থাকে, তবুও সমস্যা নেই। ৩০ থেকে ৫০ টাকায় শাণ দিতে পারবেন। আবার এ বছরের কাজ শেষে সব যন্ত্রপাতি পরিষ্কার করে রোদে শুকিয়ে নারকেল তেল মাখিয়ে রেখে দিতে পারেন পরবর্তী বছরের জন্য। তাতে মরিচা পড়ার ভয় থাকবে না।

কোথায় পাবেন

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আছে এসব যন্ত্রপাতির বিশাল সংগ্রহ। কারওয়ান বাজারের কামারের দোকানগুলো থেকে শুরু করে কিচেন মার্কেট (দোতলা), কারওয়ান বাজার রেলগেট মার্কেট, নিউমার্কেট, পুরান ঢাকার চকবাজার, বসুন্ধরা শপিং মলসহ পাবেন সব জায়গার ক্রোকারিজের দোকানে।