১৩ হাজার টাকার শাড়ি কত দিয়ে কিনলাম, জানেন?

এই ধরনের শাড়ির নাম ‘জিমি চু’
ছবি: প্রথম আলো

বান্ধবীকে উপহার দেওয়ার জন্য শাড়ির চেয়ে ভালো আর কী হয়! ছাত্র–জনতার আন্দোলন, বন্যা পরিস্থিতি ছাপিয়ে এখন রাজধানীতে কেনাকাটার বিভিন্ন জনপ্রিয় বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে মরিয়া। তাই নামকরা সব ব্র্যান্ডে দিচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ ছাড়। তবে ব্র্যান্ডের দোকানে গেলে দরদামের দক্ষতা কোনো কাজেই আসে না! তাই বাসার কাছে বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স রেখে শাড়ি কিনতে গতকাল সোমবার আরেক বান্ধবীকে নিয়ে ছুটলাম গাউছিয়ার শাড়ির হাটে।

আগে থেকেই ইচ্ছা ছিল, অরগ্যাঞ্জা, মসলিন, শিফন, টিস্যু সিল্ক—এ ধরনের হাতের নাগালের ট্রেন্ডি পার্টি শাড়ি কিনব। গাউছিয়ার শাড়ির বাজারে ঢুঁ মারতেই এক দোকানদার একরকম জোর করেই বসিয়ে শাড়ি দেখাতে লাগলেন। তাঁর দোকানের টাঙ্গাইলের শাড়ি, পাবনার শাড়ি, রেশমি শাড়ি, অন্যান্য সুতির শাড়ি, কাতানসহ বেশির ভাগ শাড়িই কেনা যাবে ১ হাজার টাকার মধ্যে। বারবার তাঁর দোকান থেকে শাড়ি কেনার জন্য জোর করছিলেন। তখন বিকেল ৪টা। কিন্তু তাঁর ভাষ্যমতে, তখনো কোনো শাড়ি বিক্রি করতে পারেননি। অলিগলি ঘুরে বোঝা গেল, বেশির ভাগ দোকানির অবস্থাই তাঁর মতো। তাঁদের হাতে টাকা নেই। তাই তুলনামূলকভাবে কম দামে শাড়ি ছেড়ে দিয়ে কিছু নগদ টাকা পেতে উন্মত্ত তাঁরা।

খ্যাতিমান ফ্যাশন ডিজাইনার জিমি চু, তিনি মূলত জুতার ডিজাইনের জন্য বিখ্যাত

এই বাজারে শাড়ির দোকানের সংখ্যা ঠিক জানা নেই, তবে শ খানেক হবে নিশ্চয়ই। এর মধ্যে অনেক দোকনা কেবল জামদানির। মোটামুটি ভালো মানের জামদানিও তাঁরা ছেড়ে দিচ্ছেন আড়াই থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকার মধ্যে। এক দোকানে ঝোলানো একটা পার্টি শাড়ি দেখে থামলাম। ওই ধরনের আরও শাড়ি দেখাতে অনুরোধ করতেই জানা গেল, ওই শাড়ির নাম ‘জিমি চু’।

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্রিটিশ–চীনা–মালয়েশীয় ফ্যাশন ডিজাইনার জিমি চুয়ের সঙ্গে এই শাড়ির কী সম্পর্ক, তা অবশ্য জানা গেল না। দোকানদান জিমি চুকে চেনেন না। ৭৫ বছর বয়সী জিমি চুয়েরও সম্ভবত গাউছিয়ার এই শাড়ি সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। যা–ই হোক, টিস্যু ও অরগ্যাঞ্জা মিশ্রিত একধরনের শিয়ার ফ্যাব্রিক দিয়ে তৈরি শাড়ি। সাধারণত পেঁয়াজ, ওয়াইন, শ্যাওলা, মিষ্টি, সোনালি, রূপালি—এসব রঙেরই হয়ে থাকে।

ফেব্রিকের কারণে রঙের মধ্যে শাইনি বা চকচকে একটা ভাব থাকে। শাড়ির, বিশেষত বর্ডারে থাকে কারুকার্য, তা ছাড়া শাড়িজুড়ে নানা আয়না, জরি কিংবা সুতার অলংকরণও থাকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ফ্যাশন ইনফ্লুয়েন্সারদের পরনে এই শাড়ি দেখতে পাবেন। সম্প্রতি কারিনা কাপুর, তাপসী পান্নু, জাহ্নবী কাপুর, প্রিয়াঙ্কা চোপড়াও দেখা দিয়েছেন এ ধরনের শিয়ার ফেব্রিকে।

সম্প্রতি বলিউড তারকা জাহ্নবী কাপুরও দেখা দিয়েছেন এই ধরনের শাড়িতে, একই শাড়ি আরও কয়েকটি রঙের আছে তাঁর

শাড়িটা দেখে পছন্দ হলো। দাম জানতে চাইলেই দোকানদার বললেন, ‘আপা, বাজারে একদম নতুন আসছে। দাম চাইলে তো ১২–১৩ হাজার টাকাও চাওয়া যায়। অনলাইনে এ রকম দামেই বিক্রি করে। ৮–১০ হাজার টাকায় তো এসব শাড়ি অহরহ বিক্রি করে। কিন্তু আমাদের বাজারের অবস্থা ভালো না। মনে করেন, নামমাত্র দামে ছেড়ে দিচ্ছি। এক দাম ৫ হাজার টাকা। যদি বলেন ১০টা টাকা কম দেবেন, সম্ভব না।’

আমি বললাম, ‘ভাই আমার বাজেট ২ হাজার। বান্ধবীর দিকে তাকায়ে বললাম, দোস্ত, তুই কি ২০০ টাকা দিতে পারবি?’ এভাবে শুরু হলো দরদাম। একপর্যায়ে উনি বললেন, ‘আপা, আমার কেনা দাম ৩ হাজার ৮০০। আপনি আমাকে ২০০টা টাকা লাভ দেন।’

শেষমেষ শাড়িটা কিনলাম ৩ হাজার ২০০ টাকা দিয়ে। শাড়ি নিয়ে ফিরে আসার সময় দোকানদার ভবিষ্যতে শাড়ি কিনলে আবার ওই দোকানে যেতে বললেন। তবে শাড়ি নিয়ে ফিরতে ফিরতে মনে হলো, ২০০ টাকা না দিলেও চলত। আরেকটু মুলামুলি করলে হয়তো ৩ হাজারেই কেনা যেত!