‘জেন-জি’দের হাতে কেন এত টাকা

জেন-জি বিশ্বজুড়ে মূল আয়ের পাশাপাশি আরও নানাভাবে বাড়তি আয় করছেন। ছবিতে জিমশার্কের প্রতিষ্ঠাতা, ব্রিটিশ উদ্যোক্তা ও তরুণ বিলিওনার বেন ফ্রান্সিস
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত যাঁদের জন্ম, তাঁরাই ‘জেন-জি’। জেন-জিদের বয়স এখন ১২ থেকে ২৭ বছরের মধ্যে। এ বয়সে জেন-জিরা যতটা অর্থসম্পদের মালিক; বুমার্স, জেনারেশন এক্স বা মিলেনিয়ালদের কেউই এতটা ধনী ছিলেন না। ২৫-এর ভেতর বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যাও বাড়ছে। আর তাঁদের ৮০ শতাংশের বেশি প্রথম প্রজন্মের ধনী।

যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের বাসিন্দা নাটালি ফিশার মোটা অঙ্কের করপোরেট চাকরি ছেড়ে অনলাইনে ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। ২৫ বছর বয়সী এই তরুণী অনলাইনে ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রমোশনও করে থাকেন। তিনি বলেন, ‘আপনি শুধু একটি আয়ের ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকার কথা ভাবলে ভুল করছেন। আপনাকে অনেক কিছু করতে হবে। অন্তত বিকল্প আয়ের উৎস রাখতে হবে।’

নাটালির মতো এমন অনেক জেন-জি বিশ্বজুড়ে মূল আয়ের পাশাপাশি আরও নানাভাবে বাড়তি আয় করছেন। নিজেদের দক্ষতা বাড়িয়ে, সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা রকম ব্যবসা, সেবা প্রদান, বিজ্ঞাপন কিংবা ইনফ্লুয়েন্সিং করে বাড়তি আয় করছেন। বাড়তি আয়ের দিকে জেন-জিদের ঝুঁকে পড়ার কারণ হিসেবে কয়েকটি বিষয়কে দাঁড় করানো যায়।

ডিজিটাল মাধ্যমে বাড়তি টাকা আয়ের সুযোগ অনেক বেশি। বাধাবিপত্তি বা ঝুঁকিও তুলনামূলকভাবে কম

প্রথমত, ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক সংকটকে জেন-জিরা বেশ কাছে থেকে দেখেছেন। তাঁদের একটা বিরাট অংশ তখন কিশোর ছিলেন।

দ্বিতীয়ত, ২০২০ সালের করোনা মহামারির ক্ষতি পোষাতে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে তাদের কর্মীদের ছাঁটাই করেছে, তা-ও জেন-জিরা দেখেছেন।

তৃতীয়ত, ডিজিটাল মাধ্যমে বাড়তি টাকা আয়ের সুযোগ অনেক বেশি। বাধাবিপত্তি বা ঝুঁকিও তুলনামূলকভাবে কম। কারণ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাজারো ইনফ্লুয়েন্সার ও উদ্যোক্তাদের দেখে তাঁরা বড় হয়েছেন। ‘তথাকথিত’ চাকরি তাঁদের কাছে পিছিয়ে পড়া একটা ধারণা। কেননা, আশেপাশের খুব কম মানুষই তাঁদের চাকরি সম্পর্কে ভালো ধারণা দিয়েছেন! চাকরির ঝক্কি, অনিশ্চয়তা আর বেতন সম্পর্কে তাঁরা অবগত। ছকে বাঁধা, রুটিন করা রোজকার জীবন মোটেই টানছে না এই প্রজন্মকে। আর টাকা আয় করতে কে না চায়? এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া অ্যাট বার্কলির অধ্যাপক অ্যারন ম্যাকডোনাল্ড বলেন, ‘অনলাইনে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের বদৌলতে আপনি এখন সহজেই নতুন কিছু করে আয় শুরু করতে পারেন। মহামারিকালে ইন্টারনেট ব্যবহার করে আয়ের ক্ষেত্রে রীতিমতো বিপ্লব ঘটে গেছে।’

২৪ বছর বয়সী কলিন স্ট্রাউড লিংকডইনে ক্রেডিট কার্ডের রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে কীভাবে হাওয়াই দ্বীপে ঘুরতে যাওয়া যায়, এ নিয়ে একটি পোস্ট করে দর্শকদের নজরে আসেন। কলিন আগে থেকেই ক্রেডিট কার্ডের রিওয়ার্ড দিয়ে কীভাবে দেশ-বিদেশে ঘোরাঘুরি করা যায়, তা নিয়ে টুকটাক লেখাপড়া করেছিলেন। এখন তিনি নিজের জ্ঞান ও পরামর্শ বিশ্ববাসীকে জানিয়ে চাকরির পাশাপাশি বাড়তি অর্থ আয় করে চলেছেন। তিনি ছোট্ট পরামর্শমূলক সেশনের মাধ্যমেই হাজার হাজার টাকা আয় করেন।


বেশির ভাগ জেন-জি মনে করেন, আয়ের উৎসগুলোকে বহুমুখী করে ফেলা এখন সময়ের দাবিমাত্র। কেননা, করোনা মহামারি-পরবর্তী সময়ে তাঁরা দেখেছেন, কীভাবে বিনা নোটিশে যে কারও চাকরি চলে যেতে পারে। কীভাবে হুট করে অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়ে যেতে পারে একটা মানুষ! জেন-জির কাছে নিরাপত্তার অর্থই অর্থনৈতিক নিরাপত্তা।

আগের প্রজন্ম জেন-জিদের অলস ভেবে থাকে। তবে জেন-জিদের বিশ্বাস, এর উল্টোটাই সত্য। পরিশ্রম করার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা কীভাবে ‘পরিশ্রমকে যথেষ্ট পরিমাণ টাকা’য় পরিণত করবেন, সে বিষয়েও অন্যদের তুলনায় সচেতন। যে পরিশ্রমে অর্থ নেই, সেই পরিশ্রমে জেন-জিদের আগ্রহ নেই। আর বিশেষজ্ঞদের মত, এমনটাই হওয়া উচিত।

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট, ওয়াশিংটন পোস্ট

Photo by Pavel Danilyuk from pexels